ক্রিকেটের নন্দনকানন এখন বোলারদের স্বর্গরাজ্য । ইডেন গার্ডেন্সের ২২ গজ ম্যাচের প্রথম দিন থেকেই বোলারদের স্বর্গ আর ব্যাটারদের দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। এতটাই কঠিন পরিবেশ যে, তৃতীয় দিনে ভারতের সামনে যদি ১২৫ -১৩০ রানও লক্ষ্য থাকে তাহলেও তা তুলে ম্যাচ জেতা হয়ে যাবে বেশ কঠিন।
কারণ লড়াই শুধু প্রতিপক্ষ নয়—পিচ, ইনজুরি এবং মানসিক চাপের সাথেও। প্রথম দিকেই ভারতকে বড় ধাক্কা দেয় শুভমন গিলের ইনজুরি। মাত্র তিন বল খেলার পর তাঁর ঘাড় শক্ত হয়ে ওঠে এবং তিনি ব্যাট করতে নামতে পারেননি। ফলাফল—প্রথম ইনিংসে ভারতকে খেলতে হয়েছে এক জন কম ব্যাটার নিয়ে।
শুধু তাই নয়, শুভমন সারা দিন ফিল্ডিংও করতে পারেননি এবং অধিনায়কত্বের দায়িত্ব সামলাতে হয়েছে ঋষভ পন্থকে। তিনিও ঘাড়ের ব্যথায় ভুগছেন, ফলে তৃতীয় দিন তাঁর মাঠে নামা নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে। অধিনায়কের ফিটনেস প্রশ্নের মুখে পড়লে দলের মনোবলও স্বাভাবিকভাবেই চাপে পড়ে। এর পর আসে দক্ষিণ আফ্রিকার স্পিন-বোলিং হুমকি। অফ স্পিনার সাইমন হারমার ইতিমধ্যেই ইডেনে তাঁর বিপজ্জনক রূপ দেখিয়ে দিয়েছেন। ৩০ রান খরচায় ৪টি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট নিয়ে তিনি ভারতের দ্বিতীয় ইনিংস কার্যত ভেঙে দিয়েছেন। পিচে ফাটল বাড়ার ফলে রবিবার আরও বেশি স্পিন হওয়ার সম্ভাবনা, অর্থাৎ ভারতের ব্যাটারদের সামনে আরও বড় পরীক্ষা। শুধু হারমার নন, অভিজ্ঞ বাঁহাতি স্পিনার কেশব মহারাজও রয়েছেন।
প্রথম ইনিংসে সেভাবে সুবিধা করতে না পারলেও চতুর্থ ইনিংসে তিনি ম্যাচ ঘোরানোর ক্ষমতা রাখেন। তাঁর অভিজ্ঞতা এবং ধারাবাহিকতা দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যতম বড় অস্ত্র।এছাড়াও দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক টেম্বা বাভুমার নেতৃত্বও বড় চিন্তার কারণ। অধিনায়ক হিসাবে এখনও কোনও টেস্ট হারেননি তিনি। চাপের পরিস্থিতিতে দলকে নিয়ন্ত্রণে রাখার দক্ষতা তাঁর অন্যতম শক্তি। ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের ধারণা—ইডেনের এই পিচে চতুর্থ ইনিংসে ১৪০–১৫০ রান তোলাও অত্যন্ত কঠিন হতে পারে। তাই ভারতের সামনে লক্ষ্য যতই ছোট আসুক, ম্যাচ জেতা সহজ হবে না। প্রাক্তনরা বলছেন, এই ট্র্যাকে ২০–২৫ রানের জুটিকেও ম্যাচ-টার্নিং বলা যেতে পারে। এত কঠিন লড়াইয়ের আরেকটি প্রতীক—শনিবার পর্যন্ত ইডেন টেস্টের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস মাত্র ৩৯! সেই রান করেছেন লোকেশ রাহুল। ভারতের দ্বিতীয় ইনিংস ১৮৯ রানে শেষ হয়ে যায় ৯ উইকেটে। দিনের প্রথম ঘণ্টায় রাহুল–জুরেল দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে আশার আলো দেখালেও দ্বিতীয় সেশন থেকেই একের পর এক উইকেট ধস নেমে যায়।
পন্থ ও জাডেজা ২৭ করে কিছুটা লড়াই করলেও তা দলকে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যেতে পারেননি। জুরেল (১৪) ও অক্ষর পটেল (১৬) চেষ্টা করেছিলেন উইকেটে থিতু থাকতে, কিন্তু পিচের অনিশ্চয়তা কোনও ব্যাটারকেই দীর্ঘক্ষণ থাকতে দেয়নি। কুলদীপ, সিরাজ এবং বুমরাহদের থেকে ব্যাট হাতে বিশেষ কিছু আশা করা হয়নি, এবং তা বাস্তবেও হয়নি।সব মিলিয়ে পরিস্থিতি এমন যে, সিরিজের প্রথম টেস্ট ভারতের নিয়ন্ত্রণে আছে—এ কথা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলা যাচ্ছে না। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৈরি করা ‘স্পোর্টিং উইকেট’ সত্যিই ম্যাচকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ বানিয়েছে, কিন্তু ব্যাটারদের জন্য এটি বাস্তবিকই টিকে থাকার লড়াই। প্রথম দুই দিনেই পড়েছে ২৬ উইকেট—এ তথ্যই যথেষ্ট প্রমাণ করে পরিস্থিতি কতটা কঠিন
রবিবার ভারতের সামনে কাজ স্পষ্ট—পরিস্থিতি, প্রতিপক্ষ এবং পিচ— তিনের সঙ্গে একযোগে লড়তে হবে। সামান্য অসাবধানতাও ম্যাচ হাতছাড়া করে দিতে পারে। তাই ব্যাটারদের ধৈর্য, দক্ষতা এবং মানসিক দৃঢ়তা তিনটি পরীক্ষার মুখে। এই কঠিন চ্যালেঞ্জ উতরে ভারত ম্যাচে টিকে থাকতে পারবে কি না, সেটাই এখন ক্রিকেটপ্রেমীদের প্রধান আলোচ্য।

