ছেলে সুস্থ মতো ফিরে আসুক এমন আশাতেই মসজিদে গিয়ে বারবার দোয়া করেছিলেন বৃদ্ধ বাবা-মা। অবশেষে শত আতঙ্কের পথ পেরিয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন (Ukraine) থেকে মালদার হরিশ্চন্দ্রপুরের বাড়িতে ফিরলেন চতুর্থ বর্ষের চিকিৎসক পড়ুয়া মাসুম হামিদ পারভেজ। বেশ কিছুদিন ধরে ইউক্রেনে থাকার সময় এই চিকিৎসক পড়ুয়ার সঙ্গে কোনওরকম যোগাযোগ করতে পারছিলেন না মালদার পরিবার। রীতিমতো নিখোঁজ হয়ে যাবার অভিযোগ তুলেছিলেন ওই চিকিৎসক পড়ুয়া পরিবারের লোকেরা। কিন্তু ভারত সরকারের উদ্যোগে অবশেষে সুষ্ঠুভাবেই নিজের দেশে ফিরতে পেরেছেন ইউক্রেনে পড়তে যাওয়া চিকিৎসক পড়ুয়া মাসুম হামিদ পারভেজ। সোমবার ওই ছাত্রকে সংবর্ধনা জানায় জেলা পুলিশ, প্রশাসন এবং স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব।
উল্লেখ্য, রবিবার রাতে মালদার হরিশ্চন্দ্রপুরে নিজের ঘরে ফিরল কিভ মেডিক্যাল কলেজের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মাসুম হামিদ পারভেজ। এখনো পিছু ছাড়ছে না যুদ্ধের সেই ভয়ংকর অভিজ্ঞতা। বাঙ্কারের মধ্যে অনিশ্চিত ভাবে গাদাগাদি ভিড়ে থাকতে হয়েছে তাকে। যোগাযোগ বিছিন্ন ছিল বাড়ির সঙ্গেও। বাঙ্কারে থেকে শুনতে হয়েছে একের পর এক গোলা বর্ষণের আওয়াজ। তখন সামনে মৃত্যু ছাড়া আর কিছু ছিল না। ছিল না পর্যাপ্ত খাবার, জল। পরে বাঁচার তাগিদে নিজেদের উদ্যোগেই বাইরে বেরিয়ে আসতে হয়েছে। ভারতের পতাকা নিয়ে ১১ কিলোমিটার হেঁটে কাছের স্টেশন। চারদিকে শুধু ধ্বংসের চিহ্ন। আলাদা আলাদা ৫ বা ১০ বা ১৫ জনের দল করে হেঁটে কাছের স্টেশনে পৌঁছে ট্রেনে উঠতে হয়েছে। সেখানেও ভিড়। আতঙ্ক সকলের চোখে মুখে। সাহায্য করেছে ইউক্রেনীয় কিছু রেস্তোরাঁর লোকজন। কোনওক্রমে সীমান্ত পেরিয়ে হাঙ্গেরি। হাঙ্গেরি সরকারও সাহায্য করেছে। মুম্বই পর্যন্ত পৌঁছে দিতে এগিয়ে এসেছে কেন্দ্র সরকার। পরে মুম্বই থেকে কলকাতা হয়ে একেবারে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছে রাজ্য সরকার।
রবিবার রাতে বাড়ির সামনে গাড়ি থেকে নামতেই মাসুমের বাবা মহম্মদ মোমিনুদ্দিন, মা হামেদা খাতুন সহ গোটা পরিবার মাসুমকে কাছে পেয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। মাসুমকে সংবর্ধনা জানাতে চাঁচলের এসডিপিও শুভেন্দু মণ্ডল, সঙ্গে ছিলেন হরিশ্চন্দ্রপুর থানার আইসি সঞ্জয় কুমার দাস, ও অন্যান্য পুলিশ কর্মীরা তাঁর বাড়িতে এসেছিলেন।
অন্যদিকে মাসুমকে সংবর্ধনা দেয় জেলা তৃণমূল সাধারন সম্পাদক বুলবুল খান ও জম্মু রহমান। মাসুম বাড়ি আসছে শুনেই পাড়া-প্রতিবেশীরাও মাসুমকে দেখতে ভিড় জমান। মাসুম এমবিএসের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। বাবা মোহাম্মদ মমিনউদ্দীন স্থানীয় মিটনা হাইস্কুলের শিক্ষক। মা হামেদা খাতুন গৃহবধূ। মাসুমের ২ দিদি রয়েছে বিবাহিত এবং এক ছোট ভাই রয়েছে।হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকার মসজিদ পাড়ার বাড়িতে ফিরে স্বস্তি মাসুমের।