মাড়গ্রাম বোমা বিস্ফোরণ কাণ্ডে মৃত্যু হল আহত লাল্টু শেখের। তিনি ওই এলাকার পঞ্চায়েত প্রধানের ভাই। এই নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ২। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে রামপুরহাট থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল এসএসকেএম-এ। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, চিকিৎসা চলাকালীনই তিন বার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন লাল্টু শেখ, তাঁর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণও হয়েছে। শনিবার মাড়গ্রামে বোমা বিস্ফোরণে মারাত্মক আহত হন লাল্টু শেখ ও তাঁর বন্ধু নিউটন শেখ। তবে পরিবারের দাবি আরও বিস্ফোরক। কেবল বোমা মেরেই শেষ হয়নি, লাল্টুকে তুলে নিয়ে গেলে শাবল দিয়ে কোপানো হয় বলেও অভিযোগ। হাসপাতালে মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয় লাল্টুর চিকিৎসার জন্য। কিন্তু লাল্টু সে চিকিৎসায় সাড়া দেননি। এদিকে, বোমায় আহত আরও এক জন নিউটন শেখের মৃত্যু হয় শনিবার রাতেই। এই খবর পেয়ে নিহতের বাড়িতে যান বীরভূমের কোর কমিটির সদস্য চন্দ্রনাথ সিনহা, সাংসদ অসিত মাল। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা। পঞ্চায়েত প্রধানকে ফোন করেন ফিরহাদ হাকিম। দোষীদের উপযুক্ত শাস্তির আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে থমথমে এলাকা। শাসকদ্বন্দ্বেই এই ঘটনা বলে প্রাথমিকভাবে জানা যাচ্ছে। তবে ফিরহাদের বক্তব্যে উঠে আসছে ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব। এদিন ফিরহাদ জানান, ‘একটা বড় ষড়যন্ত্র। এত গোলা বারুদ কোথা থেকে আসছে? কেন সীমান্তগুলোকে সিল করা হচ্ছে না? আর্মস সেল ফ্যাক্টরি তো কেন্দ্রীয় সরকারের আওতাধীন। অস্ত্র সেখান থেকে বের হচ্ছে কীভাবে? এগুলো সাধারণভাবে ফ্যাক্টরিতে তৈরি হয় না। এগুলো বাইরে আসছে কীভাবে?’ এদিকে এই ঘটনার পর স্থানীয় কংগ্রেস নেতা জহির শেখের বাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। জহিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন নিহত লাল্টুর দাদা ভুট্টু শেখ। তিনি জানান, ‘সুজাউদ্দিন, জহিররা মিলে মাড়গ্রাম দখলের চেষ্টা করেছিল। পঞ্চায়েত দখল করার জন্য ওরা খুনের রাজনীতি শুরু করেছে।’ এই প্রসঙ্গে প্রাক্তন বিধায়ক তথা বীরভূম জেলা কংগ্রেসের সভাপতি মিল্টন রশিদ জানান, ‘মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিন্হা রাজনীতি করছেন। তাই আমার কাছে তাঁর কথার কোনও গুরুত্ব নেই। আমি ওঁর কথার কোনও উত্তর দেব না।’
এদিকে স্থানীয় সূত্রে খবর, শনিবার রাত সাড়ে দশটা নাগাদ মাড়গ্রামের হাসপাতাল মোড় এলাকা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। আচমকাই বোমাবাজির শব্দে কেঁপে ওঠে এলাকা। স্থানীয় বাসিন্দারা বেরিয়ে দেখেন, একটি বাইক পড়ে। আরেকজন যুবক রক্তাক্ত অবস্থায় ছটফট করছেন। জানা যায়, ওই যুবকই নিউটন। ঘটনার নেপথ্যে দুটি তত্ত্ব উঠে আসে। একাংশের বক্তব্য, বোমা বাইকে নিয়ে যাচ্ছিল, তখনই বোমা ফেটে যায়। আরেক অংশের বক্তব্য, লাল্টু শেখ ও নিউটন শেখকে লক্ষ্য করে বোমা ছোড়া হয়েছে পরিকল্পিতভাবে। গ্রামে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, দুটি পঞ্চায়েতে কারা প্রার্থী হবেন, তা নিয়ে টানাপোড়েন চলছিল। তারই মধ্যে এই বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় রীতিমতো স্তব্ধ স্থানীয় শনিবারের এই ঘটনায় এই ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায় গ্রামবাসীদের মধ্যে।কারণ, গ্রামের ব্যস্ততম এলাকায় হয় এই বিস্ফোরণ।গ্রামবাসীদের দাবি, এটা যদি দিনের বেলায় বা সন্ধ্যেবেলায় হত তাহলে অনেক মানুষের প্রাণহানি হতে পারত।ঘটনার পরই এলাকায় মোতায়েন করা হয় বিশাল পুলিশবাহিনী, এসডিপিও। রামপুরহাটের নেতৃত্বে ঘটনাস্থলে চলে চিরুনি তল্লাশি। এদিকে লাল্টুর এক আত্মীয় জানান. ‘অনেক চেষ্টা করলাম বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য পারলাম না। জীবন দিয়ে দলটা করত, বলি হতে হল।’ লাল্টুর অপর এক আত্মীয় জানান, ‘অনেকদিন ধরেই টার্গেট ছিল। আগে থেকেই নিউটন, লাল্টুকে মারবে বলে ওরা টার্গেট করেছিল। ওদের ওপর বোমা ফেলে দিল। রাজনীতির কারণেই হয়েছে।’ মাড়গ্রামে ‘বোমাবাজি’র ঘটনাস্থলে গিয়ে রবিবার সকালেও ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, সুতলি পড়ে রয়েছে। বোমাবাজির চিহ্ন স্পষ্ট। এদিকে শনিবার রাতে এই ঘটনা প্রসঙ্গে স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, ‘রাতে বোমা পড়ার আওয়াজ পেয়েছিলাম। আমরা ঘর থেকে তখন বেরোয়নি। ওরা চলে যাওয়ার পর বেরোই। তখন দেখি একজন রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে ছটফট করছেন।” এলাকার বাসিন্দা আয়নাল শেখের বাড়ির সামনেই বোমাবাজির ঘটনা ঘটেছে।‘
এদিকে বীরভূমে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হল মূল অভিযুক্ত সহ ছয়জনকে। বীরভূমের বিদায়ী পুলিশ সুপার নগেন্দ্র ত্রিপাঠি জানান, ইতিমধ্যেই ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হলেও বাকিদের খুব শীঘ্রই গ্রেফতার করা হবে।’তবে বীরভূমের খুব কাছাকাছি পার্শ্ববর্তী রাজ্য ঝাড়খণ্ডের সীমানা। ফলে দুষ্কৃতীদের গা ঢাকা দিতে ‘কিছুটা সুবিধা’ হচ্ছে বলেও জানান তিনি।