দেড় মাস পরেও শান্তি ফেরার ইঙ্গিত নেই মণিপুরে। শুক্রবার রাত থেকে ফের নতুন করে অশান্ত মণিপুর। দফায় দফায় সংঘর্ষ, আগুন লাগানো ও গুলি চালানোর খবর মিলেছে। পুলিশ ও সেনা সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার রাতে মণিপুরের কাওয়াকতা ও কাঙ্গভাইয়ে গুলি চলে। আজ ভোর পর্যন্ত দফায় দফায় গুলি চলার খবর মেলে। একাধিক জায়গায় ভাঙচুর ও আগুন লাগিয়ে দেওয়ারও খবর মিলেছে। এই পরিস্থিতিতে উত্তর-পূর্ব ভারতের মণিপুরকে গৃহযুদ্ধ বিধ্বস্ত লেবানন, সিরিয়া, নাইজিরিয়া এবং লিবিয়ার সঙ্গে তুলনা করেছেন ভারতীয় সেনার লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) এল নিশিকান্ত সিং।
মণিপুরের বাসিন্দা প্রাক্তন সেনাকর্তা বলেন, ‘আমি মণিপুরের সাধারণ ভারতীয় এক জন অবসরপ্রাপ্ত মানুষ। আমার রাজ্য এখন ‘রাষ্ট্রহীন’। যে কোনও সময় জীবন এবং সম্পত্তি ধ্বংস হতে পারে, যেমন লিবিয়া, লেবানন, নাইজেরিয়া, সিরিয়া ইত্যাদি দেশে হয়ে থাকে।’
ইতিমধ্যেই সরকারি হিসাবে সেখানে নিহতের সংখ্যা ১২০ পেরিয়েছে। জাতিহিংসার কারণে ঘরছাড়া প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। গত মে মাস থেকেই উত্তপ্ত মণিপুর। সংরক্ষণ নিয়ে মেতেই ও কুকি জনজাতির মধ্যে যে বিরোধ-সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়, তা রীতিমতো দাঙ্গায় পরিণত হয়েছে। বিগত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে রাজ্য় জুড়ে অশান্তির আবহ জারি রয়েছে। চলতি সপ্তাহের মঙ্গলবার রাত থেকে নতুন করে অশান্তি ছড়িয়েছে। খামানলোক জেলার আটটি গ্রামে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। এরপর থেকেই দফায় দফায় অশান্তি চলছে। বৃহস্পতিবার রাতে ইম্ফলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আরকে রঞ্জন সিংয়ের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা।
অন্যদিকে, মণিপুর বিশ্ববিদ্যালয়েও জমায়েতের খবর মিলেছে। রাত প্রায় ১০ টা ৪০ মিনিট নাগাদ থংজুর কাছে ২০০ থেকে ৩০০ বিক্ষোভকারী জমা হয় এবং স্থানীয় বিধায়কের বাড়িতে আগুন লাগানোর চেষ্টা করে। র্যাফ গিয়ে বিক্ষুব্ধ জনতাকে সরায়। পশ্চিম ইম্ফলের ইরিঙ্গবাম পুলিশ স্টেশনেও হামলা চালায় বিক্ষোভকারীরা। থানার অস্ত্র ভাণ্ডার লুঠ করার চেষ্টা করে ৩০০ থেকে ৪০০ জনতা। তবে সতর্কতাবশত ও অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে অস্ত্র সরিয়ে রাখায় তারা কোনও কিছু লুঠ করতে পারেনি। র্যাফ এসে তাদের সরায়।
জানা গিয়েছে, শুক্রবারই মধ্য রাত অবধি সেনাবাহিনী, অসম রাইফেলস, র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স ও রাজ্য় পুলিশ পূর্ব ইম্ফল জেলাজুড়ে দখল দেয়। কিন্তু এরপরই অশান্তি ছড়ায়। ইম্ফলের অ্য়াডভান্স হাসপাতালের কাছে অবস্থিত প্যালেস চত্বরে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। প্রায় এক হাজারেরও বেশি বিক্ষুব্ধ জনতা গতকাল বিকেল থেকেই ওই চত্বরে জমায়েত করেছিল। তারাই ভাঙচুর করে এবং আগুন লাগিয়ে দেয়। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে আসে র্যাফ। বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে ছোড়া হয় কাঁদানে গ্যাস ও রবার বুলেট। বুলেটের আঘাতে দুইজন আহত হয়েছেন বলেও জানা গিয়েছে।