শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির টাকা রাখতে মানিকের জামাই, শ্বশুর, মেয়ের অ্যাকাউন্ট! সন্দেহ ইডির

কলকাতা: বৃহস্পতিবার আদালতে মানিকের বিরুদ্ধে ফের একের পর এক বিস্ফোরক তথ্য পেশ করল ইডি। নিয়োগ দুর্নীতিতে প্রাক্তন পর্ষদ সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের ভূমিকা ঠিক কেমন ছিল, সেই তথ্য আগেও সামনে এনেছে কেন্দ্রীয় সংস্থা ইডি। মানিকের ছেলের অ্যাকাউন্টেও নজর দিয়েছেন গোয়েন্দারা। উদ্ধার হওয়া নথি, সিডি ঘেঁটে কোটি কোটি টাকার হদিশ পেয়েছেন তাঁরা। বৃহস্পতিবার ফের মানিককে আদালতে পেশ করার পাশাপাশি ইডি-র দাবি, ২০১৪ সালে ৩২৫ জন টেট পরীক্ষার্থী, যারা কৃতকার্য হননি, তাঁরা চাকরি পেয়েছেন। এই ৩২৫ জনকে ইডির আধিকারিকেরাইতিমধ্যেই চিহ্নিতও করেছেন। এই প্রসঙ্গে ইডি-র তরফ থেকে এ প্রশ্নও তোলা হয়, প্রথম কথা, এরা অকৃতকার্য। এরপরও তাঁরা চাকরি পেয়েছেন। পাশাপাশি এ প্রশ্নটাও উঠে আসে, কী ভাবে, কাকে টাকা দিয়ে চাকরি পেয়েছেন এই ৩২৫ জন, সেই প্রসঙ্গও।
একইসঙ্গে এদিন আদালতে ইডির তরফ থেকে এ দাবিও করা হয়, এই ৩২৫ জনের দেওয়া টাকা কোথায় লুকনো আছে তা তদন্ত করা প্রযোজন।

এই প্রসঙ্গে ইডি-র আইনজীবী জানান, তাদের নজরে রয়েছেন মানিকের জামাই। ইডি আধিকারিকদের সন্দেহ মানিকের জামাইয়ের অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করা হয়েছে চাকরি বিক্রির টাকা রাখার জন্য। শুধু মানিকের জামাই নয়। ইডি-র নজরে রয়েছে, মানিকের মেয়ের শ্বশুর এবং ভাইদের অ্যাকাউন্টও।এই সব অ্যাকাউন্টেও চাকরি বিক্রির টাকা ঢুকেছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। ইডি সূত্রে আরও খবর, একাধিক অ্যাকাউন্টের হদিশ মিলেছে।এরই পাশাপশি ইডি-র তরফ থেকে এদিন আদালেত এও জানানো হয়, যে ৩২৫ জন টাকা দিয়ে চাকরি পেয়েছেন, তাঁদের কয়েকজনের বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে।
এদিন ইডি-র আইনজীবী আদালতে এও দাবি করেন, ‘এই ভাবেই ২০ কোটি টাকা মানিক পেয়েছেন, অফলাইনে ভর্তি করিয়ে।’ সঙ্গে তাঁর সংযোজন, ‘এই তালিকায় নাম রয়েছে বিভিন্ন বেসরকারি ডিএলএড কলেজের। সেখানে কেউ ৩৫ হাজার টাকা দিয়েছেন, কেউ ৭০ হাজার টাকা দিয়েছেন। সেই তালিকা মেলালে ২০ কোটি টাকার হিসেব পাওয়া যায়।’
এদিকে এদিন মানিকের আইনজীবী তাঁর মক্কেলের জামিনের আর্জি জানান আদালেত। কারণ হিসেবে দেখানো হয়, , ‘বাইপাস অপারেশন হয়েছে মানিকের।এই প্রসঙ্গে এও আর্জি রাখা হয়, শারীরিক অবস্থা এবং বয়সের কথা ভেবে যে কত শর্তে জামিন দেওয়া হোক। এরপরই মানিকের জামিনের বিরোধিতা করে ইডি তাদের লিখিত বয়ানে কয়েকটি কারণ উল্লখ করে। ইডি-র অভিযোগ, মানিক প্রভাবশালী। ইডি তাদের অভিযোগে জানিয়েছে, মানিক মোটা অর্থের বিনিময়ে ৩২৫ জন চাকরিপ্রার্থীকে ২০১৪ সালের টেট পরীক্ষার অসদুপায় চাকরি পাইয়ে দিয়েছে।তৃতীয় যে কারণ দেখানো হয়, তা হল, মেসার্স এডু ক্লাসেস অনলাইন নামে যে সংস্থার অ্যাকাউন্টে ২ কোটি ৪৭ লক্ষ টাকা ঢুকেছিল, তার নথিপত্র তৈরি থেকে শুরু করে সংস্থা পিছন থেকে চালাতেন মানিক নিজেই।
এদিকে মানকের আইনজীবীর দাবি, এগুলো কোনওটাই জামিন বিরোধিতা করার উপযুক্ত নয়। এই প্রসঙ্গে মানিকের আইনজীবী জানান, ‘মানিক যদি এত প্রভাবশালী হতেন তাহলে তিনি কি গ্রেফতার হতেন? একজন বিধায়ক কি আদৌ এতটাই প্রভাবশালী হতে পারেন, প্রশ্ন তোলা হয় এই ব্যাপারেও। পাশাপাশি মানিকের আইনজীবীর অভিযোগ, ইডি এখানে টাকা লেনদেনের কোনও রশিদ দেখাতে পারেনি। কেবল বয়ানের ভিত্তিতেই যা বলার বলছে। আর এখানেই মানিকের আইনজীবীর প্রশ্ন, ‘প্রমাণ কোথায়? কেবল কারও বয়ান দিয়ে কি এটা প্রমাণিত হয়?’এরই পাশাপশি মেসার্স এডু ক্লাসেস অনলাইন নামে যে সংস্থার অ্যাকাউন্টে ২ কোটি ৪৭ লক্ষ টাকা ঢুকেছিল সেই প্রসঙ্গেও মানিকের আইনজীবী প্রশ্ন তোলেন, ‘এর সপক্ষে নথি কোথায়? ’
এদিন ও মানিকের আইনজীবী সওয়াল করতে গিয়ে জানান, এই মামলায় মূল অপরাধের তদন্ত করছে সিবিআই।তাদের এফআইআর বা কোনও চার্জশিটে মানিকের নাম নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 × 3 =