তৃণমূল কংগ্রেসের জাতীয় দলের মর্যাদা কেড়ে নিল জাতীয় নির্বাচন কমিশন। একইসঙ্গে প্রত্যাহার করা হল বাম দল সিপিআই (কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া) এবং মহারাষ্ট্রের নেতা শরদ পওয়ারের এনসিপি (ন্যাশানালিস্ট কংগ্রেস পার্টি)-র জাতীয় দলের তকমাও। অন্য দিকে, অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি (আপ) পেল জাতীয় দলের মর্যাদা। সোমবার এমনটাই জানানো হল নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে। প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহে এ ব্যাপারে কর্নাটক হাইকোর্ট একটি নির্দেশ দিয়েছিল। উচ্চ আদালত জানিয়ে দিয়েছিল এ ব্যাপারে ১৩ এপ্রিলের মধ্যে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতে নির্বাচন কমিশনকে।
এখানে একটা কথা মনে রাখতেই হবে, ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, অরুণাচল ও মনিপুর প্রদেশে রাজ্য পর্যায়ের দল হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় তৃণমূলকে জাতীয় দলের মর্যাদা দেয় কমিশন। সে সময় লোকসভা ভোটে ৪টি রাজ্য থেকে ৬ শতাংশ ভোট পেয়ে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের ‘রাজ্য দল’ হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছিল মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়ের দল। তবে এরপর ৭ বছরের মাথাতেই সেই মর্যাদা হারাল তৃণমূল। এর আগে গত বছর জুলাই মাসে তৃণমূল কংগ্রেস, এনসিপি এবং সিপিআইকে চিঠি পাঠিয়ে কমিশন জানতে চায় তোমাদের জাতীয় দল হিসাবে মর্যাদা কেন কেড়ে নেওয়া হবে না? এদিকে ইলেকশন সিম্বল (রিজারভেশন অ্যান্ড অ্যালটমেন্ট) অর্ডার ১৯৬৮ অনুসারে কোনও আঞ্চলিক দল যদি চারটি বা তার বেশি রাজ্যে স্বীকৃত রাজনৈতিক দল হয়, তা হলে জাতীয় দল হিসাবে মর্যাদা পেতে পারে। অর্থাৎ কোনও রাজনৈতিক দল যদি চারটি বা তার বেশি রাজ্যে লোকসভা কিংবা বিধানসভা নির্বাচনে মোট প্রদত্ত ভোটের ৬ শতাংশ পায় তা হলে তাকে জাতীয় দল বলা যেতে পারে। তবে এক্ষেত্রে একটা শর্ত রয়েছে ওই রাজনৈতিক দলকে লোকসভা ভোটে অন্তত ৪ টি আসনে জিততে হবে এবং লোকসভা ভোটে মোট প্রদত্ত ভোটের ২ শতাংশ পেতে হবে। আর এই প্রসঙ্গ টেনেই নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে জানানো হয়, নতুন রাজনৈতিক দল হিসাবে আম আদমি পার্টি এই শর্তপূরণ করছে। কারণ, দিল্লির পাশাপাশি পঞ্জাবেও তারা সরকারের রয়েছে। গোয়া ভোটে তারা ৬.৭৭ শতাংশ ভোট পেয়েছে। গুজরাতে বিধানসভা নির্বাচনেও আপ ভোট পেয়েছিল ১২.৯১ শতাংশ।
তবে গত ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে গত বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস বিপুল ব্যবধানে জয় লাভ করে। মোট প্রদত্ত ভোটের ৪৮.০২ শতাংশ ভোটও পায় তৃণমূল। সেই সাফল্যের ওপর ভরসা রেখেই গোয়া, ত্রিপুরা ও মেঘালয়ের নির্বাচনে প্রার্থীও দেয় তৃণমূল কংগ্রেস। কিন্তু বাংলার বাইরে একমাত্র মেঘালয় ছাড়া সাফল্য পায়নি। এদিকে মহারাষ্ট্রে এনসিপির ক্ষমতা সীমিত। তার বাইরেও এনসিপির সেভাবে আর কিছুই নেই। আর সিপিআই অনেক দিন আগেই অঙ্কের হিসাবে জাতীয় দলের মর্যাদা হারিয়ে ফেলেছিল। তবে নির্বাচন কমিশন উদ্যোগী হয়ে তা এতদিন খারিজ করেনি। এবার তা করে দিল কমিশন।
তবে এদিনের নির্বাচন কমিশনের কমিশনের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ জানান, ‘এখন এ বিষয়ে কিছু বলছি না। দলের তরফে বিষয়টি খতিয়ে দেখে এ বিষয়ে বক্তব্য জানানো হবে।’