দ্বিতীয় বৈঠকেও পুলিশ এবং পুরপ্রতিনিধিদের ভর্ৎসনা মমতার

সোমবারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে রণংদেহি মূর্তিতে দেখেছিল বাংলা। পুলিশ থেকে শুরু করে মন্ত্রী-বিধায়ক কাউকে ছেড়ে কথা বলেননি। টাকা আদায় থেকে শুরু করে ঘুষ খাওয়া, সব ইস্যুতেই প্রশাসনিক আধিকারিকদের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন মুখ্যমন্ত্রী। ফুটপাত দখল থেকে শুরু করে, অবৈধ পার্কিং-সর্বত্র লুঠতরাজ চলেছে বলে অভিযোগ শোনা যায় স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর কথায়। এমন কথা শোনার পরই  শহরে অ্যাকশন মুডে পুলিশ। শুরু হয়ে যায় বুলডোজার দিয়ে শহরের বুকে ‘রুজি রুটি’ গুঁড়িয়ে দেওয়ার অভিযান।

এর রেশ ধরা পড়ে বৃহস্পতিবারের দ্বিতীয় দফার বৈঠকেও। এদিনের বৈঠকেও উপস্থিত ছিলেন জেলাশাসক থেকে শুরু করে মন্ত্রী, আমলা, পুলিশের উচ্চ পদস্থ কর্তারা। এদিন মমতার বক্তব্য আরও স্পষ্ট, আরও তীক্ষ্ণ। বুলডোজার দিয়ে ঝুপড়ি দোকান গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর মমতা বললেন, ‘প্রথমে টাকা খেয়ে দোকান বসাবেন, আর তারপর বুলডোজার দিয়ে ভাঙবেন? একদম বরদাস্ত করছি না।’

পুলিশমন্ত্রীই পুলিশকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে বললেন, ” যে যাঁর মতো লুঠে নিচ্ছে, যেন লুঠ আমার অধিকার। পুলিশের মধ্যে দেখছি লোভ বেড়ে যাচ্ছে। ভাবছে আমি তো ২ বছর ওসি আছি, যতটা পারি করে নিই। এবার থেকে এসিপি স্ট্রং করতে হবে। যদি কোনও পুলিশ ইন্ধন দেয়, সরিয়ে দেব। সরকার কিন্তু এটা করতে পারে।’

কেবল পুলিশ প্রশাসন নয়, মন্ত্রীদেরও তোপ দেগেছেন তিনি। আগের দিনই মন্ত্রী সুজিত বসু, গৌতম দেবকে রীতিমতো তিরস্কার করতে দেখা যায় মুখ্যমন্ত্রীকে। এদিন নির্দিষ্ট করে কারোর  নাম না করলেও মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি একজনকে সিস্টেম বানাতে বলেছি। রাজীব কুমারকে একটি সিস্টেম বানাতে বলেছি। সেটা বানিয়ে আমাকে দেবে। দিঘা, মুকুটমণিপুরে হকার তুলে দেওয়া হয়েছে। আর যেন নতুন করে না বসে, সেটা জেলাশাসককে দেখে নিতে হবে। কোনও নেতা যদি ইন্ধন দেন, তাঁকে গ্রেফতার করে নেবেন সঙ্গে সঙ্গে। সে যে দলেরই হোক। কোনও পুলিশ যদি বলে, তাঁকে পুলিশকেও গ্রেফতার করা হবে। ওপরতলার পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করবে।’

পৌরসভার কাউন্সিলরদেরকেও ছেড়ে কথা বলেননি তিনি। তিনি বলেন, ‘সব মিউনিসিপ্যালিটি একই নিয়মে চলবে। রাস্তা দখলে কাউন্সিলরদের অনেক দোষ রয়েছে। তাঁরা ভাবছেন, রাস্তা দিয়ে দিচ্ছি, টাকা পেয়ে যাচ্ছি, মাসে চাঁদা পেলাম,  তেমনটা করলে কিন্তু হবে না। ডাল ভাত তরকারি খেয়ে কি হচ্ছে না? তাতে সন্তুষ্ট থাকা যাচ্ছে না? মানুষের বাঁচার জন্য যতটুকু দরকার, ততটুকুই করুন। লোভ করা ভালো নয়। লোভ সংবরণ করুন।’

বুধবার এক ব্যক্তির জমি দখলের চেষ্টা ও খুনের হুমকির অভিযোগে ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি এলাকার জেলা তৃণমূলের শীর্ষ নেতা তথা ব্লক তৃণমূল সভাপতি দেবাশিস প্রামাণিককে গ্রেফতার করে পুলিশ। আর বৃহস্পতিবার তাঁর গ্রেফতারি প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ডাবগ্রামে দেখেছেন, আমি জেলা প্রেসিডেন্টকে গ্রেফতার করিয়ে দিয়েছি।’ অর্থাৎ, এটা যে কেবল হুঁশিয়ারি নয়,  বাস্তবে তেমনটাই হবে, কাউকেই রেয়াত করা হবে না তার উদাহরণ একেবারে হাতে-গরম দেখিয়ে দিলেন মমতা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seven − three =