দিদির সুরক্ষা কবচ নামে নয়া কর্মসূচি তৃণমূলের

দোরগোড়ায় পঞ্চায়েত নির্বাচন। আর তারপরই মেগা ফাইনাল লোকসভা নির্বাচন ২০২৪। আর এই আসন্ন নির্বাচনের আগে এবার তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে  জন সাধারণের সামনে আনলেন ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’। দুয়ারে সরকার প্রকল্পের ধাঁচে তৃণমূল কংগ্রেস দলীয় স্তরে ‘দিদির সুরক্ষাকবচ’ নামে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা হল তৃণমূলের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে সোমবার নজরুল মঞ্চ থেকে। সঙ্গে সামনে আনা হল ‘দিদির দূত’নামে নতুন অ্যাপ। নতুন সুরক্ষা কবচে বলা হয়েছে, ‘কন্যাশ্রী’, ‘স্বাস্থ্য সাথী’, ‘শিক্ষাশ্রী’, ‘স্টুডেন্টস ক্রেডিট কার্ড; থেকে শুরু করে ‘খাদ্য সাথী’, ‘সবুজ সাথী’র মতো প্রকল্পগুলি মানুষের কাছে পৌঁছেছে কিনা আর  না পৌঁছলে কেন তা পৌঁছায়নি এই সমস্ত কিছু হালহকিকত যাচাই করতেই প্রায় সাড়ে তিনলাখ কর্মী বা ভলান্টিয়ারকে মাঠে নামাচ্ছে তৃণমূল। আগামী ৬০ দিন ধরে চলবে এই কর্মসূচি। প্রসঙ্গত, এই কর্মসূচির নামাঙ্করণ করেছেন দলের যুব, আইটি সেলের কর্মীরাই। দলের তিন লক্ষ কর্মী দু কোটি পরিবারের ১০ কোটি মানুষের কাছে পৌঁছবেন। সর্বস্তরের মানুষ রাজ্য সরকারের বিভিন্ন কল্যাণমূলক প্রকল্পের সুয়োগ-সুবিধা পাচ্ছেন কি না, তা খতিয়ে দেখবেন দলের ওই কর্মীরা।একইসঙ্গে বলা হয়েছে, ৩৫০ জন কর্মীকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে রাত্রিবাস করতে হবে।পাশাপাশি আরও জানানো হয়েছে, ‘দিদির দূত’ নামে এই নয়া অ্যাপের মাধ্যমে ১৫টি সরকারি প্রকল্পের সুবিধা মিলবে।এদিনের অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে এই নতুন কর্মসূচি এবং অ্যাপ চালু করার কথা ঘোষণা করেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় পাশাপাশি একটি নতুন লোগো উদ্বোধন করেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলের তরফ তেকে নয়া এই পদক্ষেপে আদতে যে জনসংযোগের ওপরেই জোর দেওযা হল তা বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না কারও।

এদিনের এই সভা ঘিরে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা ছিল তুঙ্গে। শাসকদলের তরফে আগেভাগেই ঘোষণা করা হয়েছিল, ২ জানুয়ারি খুবই গুরুত্বপূর্ণ দিন। এদিন খুব বড় ঘোষণা করা হবে। পঞ্চায়েত ভোটের ঠিক আগেইএই ধরনের জনসংয়োগ কর্মসূচি গ্রহণ করার প্রয়োজন পড়ল কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই বিষয়টি খোলসা করে দেন।এদিন তিনি জানান, ‘দুয়ারে সরকারের কাজ তিন চতুর্থাংশ হয়ে গিয়েছে। আরও কিছু মানুষের কাছে আমরা পৌঁছতে পারিনি। এই ক্রমসূচির মাধ্যমে আমরা ১০ কোটি মানুষের কাছে পৌঁছে যাব। এটা তো ভালো কর্মসূচি।অনেকেই লিখতে, পড়তে জানেন না। ফর্ম ফিলআপ করতেও পারেন না। দলীয় কর্মীরা তাঁদের এ ব্যাপারে সাহায্য করবেন। দুয়ারে সরকার ছিল সরকারি কর্মসূচি, সুরক্ষাকবচ হল দলীয় কর্মসূচি।’

পাশাপাশি তৃণমূল সুপ্রিমো এও জানান, ‘দু-একটি রাজনৈতিক দল অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছে। কোনও কাজকর্ম নেই।সারাদিন শুধু কু-কথা বলে চলছেন কোনও কোনও নেতা।তাঁদের মনে করিয়ে দিতে চাই, বিরোধী দলে থাকাকালীন আমরা কোনও ধ্বংসাত্মক কাজ করিনি।আমরা চাই ইউনাইটেড ইন্ডিয়া। বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যই আমাদের নীতি।’ তবে সাংবাদিক বৈঠকে বিতর্কিত কোনও প্রশ্নে জবাব দিতে চাননি মমতা।

এদিকে তৃণমূল সূত্রে খবর, তৃণমূলের রাজ্য স্তরের নেতৃত্ব গ্রামে-গ্রামে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিজেদের জনসংযোগ কর্মসূচি পালনের পরেই এই কর্মীরা মানুষের দুয়ারে যাবে। নানারকম সরকারি প্রকল্পের সুবিধা মানুষ পাচ্ছে সে সম্পর্কে খোঁজ নেবে। সাধারণ মানুষের কাছে একটি আবেদন পত্র পূরণ করতে দেওয়া হবে বলেও জানা গিয়েছে। ভলান্টিয়ারদের কাছ থেকে সেই রিপোর্ট সংগ্রহ করে আগামী কর্মসূচি গ্রহণ গিয়েছে। আদতে মানুষের অভাব অভিযোগের কথা শুনে আগামী দিনে নির্বাচনের প্রচারের রূপরেখা তৈরি করতেই এদের কাজে লাগানো হচ্ছে বলে ধারনা বঙ্গ রাজনৈতিক মহলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

12 + eighteen =