লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিমুক্ত রাজ্য করার ডাক মমতা-অভিষেকের

লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যকে বিজেপি মুক্ত করার ডাক দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে লোকসভার ভোট প্রচার শুরু করলেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার কলকাতার ব্রিগেড ময়দানে দলের জন গর্জন সমাবেশ থেকে বিজেপিকে বাংলা বিরোধী এবং গরিব বিরোধী বলে দাবি করে তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী তাদের বিতাড়নের ডাক দেন। সমাবেশে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, তৃণমূল কংগ্রেস একাই লড়াই করবে। এরাজ্যে ভোটে তাদের প্রতিপক্ষ বিজেপি। আগামী দিনে দেশ কোন পথে চলবে, তৃণমূল কংগ্রেসই সেটা ঠিক করবে বলে এদিন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।

একশো দিনের কাজ ও আবাস যোজনায় কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে ফের বঞ্চনার অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, গত দু’বছর ওই দুই প্রকল্পে কোনও টাকা না দিয়েই বিজেপি নেতারা তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে টাকা নয়ছয়-এর অভিযোগ করছে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর করা দাবি নস্যাৎ করে তিনি বলেন, একাংশের আধিকারিকদের কথা শুনে প্রধানমন্ত্রী ভুল তথ্য দিয়েছেন। মমতা স্লোগান তোলেন, বিজেপি হাজার হাজার মানুষের চাকরি খেয়েছে। এবার বিচার হবে। মানুষ সেই হিসাব বুঝে নেবে। সময় এসেছে। এবার ওদের বিচার হবে। সভায় উপস্থিত দলীয় কর্মী সমর্থকদের তাঁর নির্দেশ, ‘জেলায় জেলায় বিজেপির বিরুদ্ধে গর্জন সভা শুরু করুন, বিজেপিকে বিসর্জনের ডাক দিন। বিজেপির বিরুদ্ধে উদ্বাস্তুদের গর্জন, মতুয়াদের গর্জন, সংখ্যালঘুদের গর্জন ও বিসর্জনের আওয়াজ তুলুন। ঘরে ঘরে গিয়ে ওরা তল্লাশি করবে। ভয় পাবেন না। বাংলার মানুষ আছে আপনাদের সঙ্গে। তাই আজই শুরু করে দিন বিজেপিবিরোধী গর্জন।’

আচমকাই নির্বাচন কমিশনার অরুণ গোয়েল পদত্যাগ করেছেন। বাংলার নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে তাঁর মতদ্বৈধতা দেখা দেওয়ায় তিনি পদত্যাগ করেছেন বলে তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রীর দাবি। তিনি বলেন, ‘এতেই প্রমাণিত হয়, কী চাইছে নির্বাচন কমিশন।’

এর আগে মমতা প্রশ্ন করেন, ‘এই রাজ্যের লোকসভার ৪২ আসনের মধ্যে ১৮টি বিজেপি পাওয়া সত্ত্বেও তারা কী করেছে এই রাজ্যে? মেট্রোরেলের টাকা আমি দিয়ে এসেছিলাম। এখন ফিতে কাটছে ওরা? তাই আমাদের বঞ্চনার বিরুদ্ধে আপনারা গর্জন করুন, এক হোন। দাবি করুন, এই বাংলার বকেয়া অর্থ ফিরিয়ে দিতে হবে।’

অন্যদিকে, দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এই নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে আবাস যোজনা ও ১০০ দিনের কাজে গত দুটি আর্থিক বছরের রাজ্যকে কত টাকা দেওয়া হয়েছে সে সম্পর্কে শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন। ব্রিগেড জনসভা থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আক্রমণ করেন তৃণমূলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মোদি কি গ্যারান্টি বলে আওয়াজ তুলেছে বিজেপি। সেটাকেই চরম কটাক্ষ অভিষেকের। মোদি গ্যারান্টি দিলেও বছরে ২ কোটি চাকরি, জন সাধারণের অ্যাকাউন্টে ১৫ লাখ টাকা ঢোকানো হয়নি। সেই বিষয় নিয়ে চরম কটাক্ষ করেন অভিষেক।

অভিষেকের এদিনের সভা থেকে গর্জন, ‘আপনারা মোদির গ্যারান্টি চান, নাকি দিদির গ্যারান্টি চান?’ তাঁর কথায়, একাধিক কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বিজেপি সরকার অর্থ বরাদ্দ বন্ধ করলেও রাজ্যের শ্রমিকদের অর্থ প্রদান করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই কারণেই, বাংলার মানুষ আগামী দিনে রাজ্যে ‘দিদির গ্যারান্টি’ চায় বলে আওয়াজ তোলেন তিনি।

কেন্দ্রীয় সরকারের বঞ্চনার অভিযোগ তুলে এই সভার আয়োজন করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। একশো দিনের কাজে আর্থিক বরাদ্দ না করার জন্য এই সভা থেকে ‘গর্জন’ তোলেন একের পর এক তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। একাধিক কেন্দ্রীয় প্রকল্পে আর্থিক বরাদ্দ আটকে রাখা হয়েছে, সেই দাবি তুলেই এবার জনগণের দুয়ারে ভোট চাইতে যাবে তৃণমূল কংগ্রেস, সেই বার্তাই উঠে এল এদিনের সভা থেকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 × four =