গত ১০ বছর ধরে পশুদের মতোই বাড়িতেই শিকলবন্দি অবস্থায় রয়েছেন এক যুবক। বাড়ির একমাত্র ছেলে মানসিক ভারসাম্যহীন। তাই বাড়ি থেকে যাতে নিখোঁজ না হয়ে যায়, তার জন্যই এভাবে তাকে বেঁধে রাখা হয়েছে, পরিবারের তরফ থেকে এমনটাই দাবি করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে পুরাতন মালদা থানার মুচিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বারুইপাড়া এলাকায়।
যদিও ওই যুবকের পরিবারের বক্তব্য, দিনমজুরের পরিবার। তাই বড় কোনো চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়নি। এভাবেই বাড়ির সামনে গাছতলাতে মাচান বেঁধে শিকল বন্দি করে রাখা হয়েছে তাকে।স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মানসিক ভারসাম্যহীন ওই যুবকের নাম বরুণ দাম (২৮)। দীর্ঘদিন ধরে ওই যুবক মানসিক ভারসাম্যহীন রয়েছে। যদিও মালদা মেডিক্যাল কলেজে মানসিক ভারসাম্যহীন রোগীদের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। তা সত্ত্বেও কেন ওই যুবককে সেখানে না ভর্তি করিয়ে এভাবে শিকল বন্দি করে রাখা হয়েছে ! সে ব্যাপারে পরিবারের লোকেরা জানিয়েছেন, মেডিক্যাল কলেজের সহায়তা নিয়ে চিকিৎসা করানো হয়েছিল। কিন্তু তাতে বরুণ সুস্থ হয়নি। ওর চিকিৎসার জন্য বাইরে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন কয়েকজন চিকিৎসক। দরিদ্র পরিবার হওয়ার কারণেই বরুণকে বাইরে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়নি। তাই ওকে এভাবে বাড়ির উঠোনে গাছতলায় শিকলবন্দি করে রাখতে হচ্ছে।
অসুস্থ যুবকের এক দিদি জুলি রায় বলেন, পরিবারে ওকে দেখার মত আমি ছাড়া আর কেউ নেই। তাই ভাইকে এভাবে শিকলবন্দি করে রেখেছি। গত ১০ বছর ধরে শিকল বন্দি রয়েছে আমার ভাই। নানাভাবে চিকিৎসা করে ওকে সুস্থ করা যায় নি। মেডিক্যাল কলেজের বেশ কিছু চিকিৎসকেরা পরামর্শ দিয়েছেন বাইরে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আর্থিক দিক দিয়ে অবস্থা সম্পন্ন না হওয়ার কারণে চিকিৎসা করাতে পারিনি। তাই এভাবেই ওকে শিকল বন্দি করে রেখেছি। তবে যদি পঞ্চায়েত ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনওরকম সহযোগিতা পাওয়া যায়, তাহলে অবশ্যই ভাইকে চিকিৎসার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
মুচিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান মৌসুমী সরকার বিশ্বাস জানিয়েছেন, আমার অঞ্চলে এরকম ঘটনার কথা জানা ছিল না । বিষয়টি শোনার পর অসুস্থ যুবককে শিকল মুক্ত করার জন্য সবরকম প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ। সব বিষয় খতিয়ে দেখা হবে। রাজ্য সরকার গরিব মানুষদের জন্য হাসপাতাল এবং মেডিক্যাল কলেজে বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে। মেডিক্যাল কলেজ মানসিক বিভাগ রয়েছে। সেখানে রেখেও ওই যুবককে সুস্থ করা যেতে পারে। বাড়ির লোকেদের সঙ্গে কথা বলে পঞ্চায়েত থেকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে।