টেক্সটাইলের দাপটে মালদার ঐতিহ্য তাঁত শিল্পের চাহিদা হারাতে বসেছে। পুরাতন মালদা ব্লকের সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে একসময় ৫০০’র বেশি পরিবার তাঁত শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কিন্তু এখন হাতে গোনা ১৫ থেকে ২০টি পরিবার বাপ-ঠাকুরদা’র এই ঐতিহ্যকে কোনওরকমে ধরে রেখেছেন। তাঁতের কাপড় বোনার পাশাপাশি অধিক পরিশ্রম করে সংসার চালাচ্ছেন কারিগরেরা। তাঁদের বক্তব্য, তাঁত শিল্পের চাহিদা এখন তলানিতে ঠেকেছে। কারণ, বর্তমান সময়ে বিভিন্ন যন্ত্রের মাধ্যমে বাজারে আধুনিক পোশাক চলে আসছে। পরিশ্রম অনুযায়ী মজুরিও মিলছে না। তাঁতের পোশাকের কোনও বরাত পাওয়া যাচ্ছে না ঠিকমতো। তাই এই কাজ ছেড়ে এখন বহু কারিগরেরা দিনমজুরি করছেন। আবার কেউ অন্যের জমিতে কৃষি কাজে যুক্ত হয়ে পরেছেন। ভবিষ্যতে এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য প্রশাসন এবং সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন পুরাতন মালদার প্রবীণ তাঁত শিল্পীরা।
উল্লেখ্য, মালদা জেলার পুরাতন মালদা ব্লকের সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের মঙ্গলবাড়ি তাঁতিপাড়া অবস্থিত। এক সময় এত বিপুল পরিমাণ তাঁত শিল্পীদের এখানে জনবসতি ছিল যার ফলে মঙ্গলবার একটি এলাকা তাঁতিপাড়া নামে পরিচিত হয়ে যায়। এখন যে ক’টি তাঁতশিল্পের পরিবার রয়েছে তাদের এখন করুণ অবস্থা। এক সময় এই সাহাপুর মঙ্গলবাড়ি তাঁতিপাড়া এলাকায় এক সময় প্রায় ৫০০ পরিবার তাঁতের কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এখন সেটা কমে গিয়ে মাত্র কুড়িটি পরিবারের এসে ঠেকেছে। সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের তাঁত শিল্পী তরুণ কুমার দাস বলেন, এই শিল্প আগামী দিনে বন্ধ হয়ে যাবে। কেউ এই শিল্পে আর কাজ করতে চাইছেন না। পরিশ্রম অনুযায়ী মজুরি আমরা ঠিকমতো পাই না। শাড়ির কাজ প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এখন শুধু খাদির কাজ হয়। কিছু খাদি কোম্পানির মালিকেরা তারা আমাদের কাছে কাজ দেয়। দিনে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা মজুরি মেলে।
পুরাতন মালদার আরেক মহিলা তাঁত শিল্পী মিতালি দাস বলেন, আমরা শ্রমিক কার্ডের কোনো সুবিধা পাই নি। আমরা যে ভাবে পরিশ্রম করি তাতে আমাদের সেভাবে মজুরি নেই। এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার ক্ষেত্রে সরকার নজর দিলে খুব ভালো হয়। আমরা কোনও রকম সরকারি লোন আমাদের কেউ দেয় না। আমাদের কথা কেউ শোনে না।
যদিও মালদার এক খাদি কোম্পানির সম্পাদক বামাচরণ প্রামাণিক জানিয়েছেন, তাঁত শিল্পের অবস্থা খুব খারাপ। শিল্পীরা যে মজুরি পায় তাতে তাদের সংসার চালানো খুব কষ্টকর। আমরাও চাই সরকার এই শিল্পকে নতুন কবে রূপায়িত করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিক।