বাইকে করে সিকিম ঘুরতে গিয়ে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল মালদার যুবকের, বাড়িতে পৌঁছল দেহ

মালদা: পুজোর ছুটিতে মোটরবাইক নিয়ে সিকিম (sikkim) ঘুরতে গিয়েই পাহাড় ধসে মৃত্যু হল মালদার এক ডাক্তারি প্রবেশিকা পরীক্ষার্থীর। মঙ্গলবার দুপুরে সিকিমের গ্যাংটক যাওয়ার পথে মোটরবাইক দুর্ঘটনার পর বুধবার ওই ছাত্রের দেহ মালদা শহরের সানি পার্কের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। গোটা এলাকায় শোকস্তব্ধ হয়ে পড়ে। আচমকায় দুর্ঘটনায় ওই ছাত্রের মৃত্যুর বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না পরিবার থেকে পাড়া-প্রতিবেশীরা। বাড়ির একমাত্র ছেলের মর্মান্তিক মৃত্যুতে শোকে ভেঙে পড়েছে গোটা পরিবার। বুধবার সকালে মৃত দেহটি সিকিম থেকেই কফিনবন্দি অবস্থায় মালদা শহরের সানি পার্কে বাড়িতে নিয়ে আসার পর সাদুল্লাপুর মহাশ্মশানে সৎকার্য করা হয়। পাড়ার খুব ভালো ছেলে হিসাবেই পরিচিত ছিল ওই যুবক। সম্প্রতি দিল্লিতে ডাক্তারি প্রবেশিকা পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিল সে। তার মধ্যে এই দুর্ঘটনায় ওই ছাত্রের মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না পাড়া-প্রতিবেশীরা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত এই ছাত্রের নাম রাহুল সিংহ (২৭)। সে দিল্লি থেকে ডাক্তারি প্রবেশিকা পরীক্ষার দিয়েছিল এ বছর। কিন্তু এই প্রবেশিকা পরীক্ষার র‌্যাংকিংয়ে খুব ভালো ফল না হলেও বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু তার ইচ্ছে ছিল নতুন করে ডাক্তারি প্রবেশিকা পরীক্ষা (নিটে) পুনরায় দিয়ে ভালো ফল করবে। ফলে দিল্লিতে আবারও নতুন করে পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করেছিল।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত ছাত্রের বাবা তপন সিংহ। পেশায় একজন পুলিশ অফিসার। মালদাতেই তিনি কর্মরত। গত সপ্তমিতে দুর্গাপুজোর ছুটি নিয়ে মালদার বাড়িতে ঘুরতে এসেছিলেন ছাত্র রাহুল সিংহ। সেই দিনই তিন বন্ধু পরিকল্পনা করেই পৃথক মোটরসাইকেল নিয়ে সিকিমের গ্যাংটকের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। কিন্তু মঙ্গলবার গ্যাংটক যাওয়ার পথে পাহাড় ধসে রাহুল সিংহের মোটরবাইক দুর্ঘটনার মুখে পড়ে। প্রায় একশো ফিট নীচে গড়িয়ে যায় মোটরবাইক নিয়ে ওই ছাত্র। সেখানেই তার মৃত্যু হয়। যদিও তার সঙ্গে পৃথক দুটি মোটর বাইকে থাকা দুই বন্ধুর কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। এরপর তাঁরাই রাহুলের বাড়িতে ফোন করে এই দুর্ঘটনার খবর দেন। তড়িঘড়ি পরিবারের লোকেরা সিকিমের উদ্দেশ্যে ছুটে যান। সেখান থেকে ওই ছাত্রের দেহ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্ত করা হয়। পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে পরবর্তীতে বুধবার সকালে দেহ কফিনবন্দি অবস্থায় ফিরে আসে মালদার বাড়িতে।
মৃত ছাত্রের এক প্রতিবেশী গোকুল সাহা বলেন, ওদের পরিবারটা খুবই মিশুকে। সকলের সঙ্গে সব সময় ভালো ব্যবহার করেই চলতেন। সপ্তমীর দিন রাহুল তার তিন বন্ধুকে নিয়ে আলাদা আলাদা মোটরবাইকে গ্যাংটকের উদ্দেশ্যে ঘুরতে বেরিয়েছিল। মঙ্গলবার ওর দুর্ঘটনায় মৃত্যুর কথা জানতে পারি। এই মৃত্যুটা মেনে নেওয়া যাচ্ছে না। ওর বাবা তপন সিংহ আমার বন্ধু। গত ৩০ বছর ধরে আমাদের সঙ্গে ওই পরিবারের ওঠাবসা রয়েছে। একটা ভালো ছেলের জীবন যে এভাবে শেষ হয়ে যেতে পারে তা ভাবতেই অবাক লাগছে। এদিন সকালে মৃতদেহ বাড়িতে ফেরার পর সৎকার্যের জন্য জন্য সাদুলাপুর শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু এভাবে একটা তরতাজা প্রাণ চলে গেল তা কি করে মানা সম্ভব।
যদিও বাড়ির ছেলেকে হারিয়ে শোকাহত গোটা পরিবার। এই ঘটনার পর কারোর কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। ঘনঘন জ্ঞান হারিয়েছে ওই ছাত্রের বাবা-মা। গোটা এলাকা রীতিমতো শোকে পরিণত হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fourteen − eight =