চোর সন্দেহে ভরা বাজারের মধ্যেই দুই মধ্যবয়স্ক মহিলাকে অর্ধনগ্ন করে গণপিটুনি দেওয়ার ঘটনায় তুমুল চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে মালদায়। এই গণপিটুনির ঘটনার ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতেই বিভিন্ন রাজনৈতিক মহলে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। গত মঙ্গলবারের ঘটনার ছবি শুক্রবার রাত থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে বলে অভিযোগ। আর তারপর শনিবার সকাল থেকে দফায় দফায় অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করে জেলা বিজেপি নেতৃত্ব। এমনকী, এদিন পুলিশ সুপারের অফিসের সামনেও অবস্থান বিক্ষোভ করেন উত্তর মালদার বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু সহ দলের জেলা নেতৃত্ব। এদিকে যেখানে ঘটনাটি ঘটেছে সেই বামনগোলা থানার পাকুয়াহাট এলাকায় তদন্তে যায় মালদার পুলিশ সুপার প্রদীপ কুমার যাদব। ইতিমধ্যে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে তিন মহিলা সহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনা সূত্রপাত গত মঙ্গলবার মানিকচক থানার ফতেপুর গ্রামে দুই মধ্যবয়স্ক মহিলা বামনগোলা থানার পাকুয়াহাটে লেবু বিক্রি করতে গিয়েছিলেন। সেখানেই ওই দুই মহিলাকে আচমকা কিছু মানুষ চোর বলে ধাওয়া করে। এরপরই পাকুয়াহাটের ভরা বাজারে ওই দুই মহিলাকে ধরে বিবস্ত্র করে ব্যাপক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। জুতো দিয়ে পেটানোর পাশাপাশি কিল, ঘুষি চট-থাপ্পর মারা হয়। বিবস্ত্র অবস্থায় ওই দুই মহিলাকে মারধরের ছবি ঘটনাচক্রে শুক্রবার রাত থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতে থাকে। সেই ছবিতেই দেখা যাচ্ছে রীতিমতো সিভিক ভলান্টিয়ারের উপস্থিতিতে এলাকার বেশ কিছু পুরুষ ও মহিলারা বিবস্ত্র অবস্থায় ওই দুই মধ্য বয়স্ক মহিলাকে গণপিটুনি দিচ্ছে। আর বিষয়টি জানাজানি হতেই মালদা শুধু নয়, রাজ্যস্তরের বিভিন্ন দলের নেতা-নেত্রীরাও নিজেদের মতামত টুইট করে জানাতে থাকেন। এদিকে নিগৃহীত এক মহিলার মেয়ে জানিয়েছেন, তাদের বাড়ি মানিকচকে, তার মা এবং কাকিমা বিভিন্ন হাটে, বাজারে লেবু বিক্রি করে বেড়ান। গত মঙ্গলবার পাকুয়াহাটে লেবু বিক্রি করতে গিয়েছিলেন তার মা এবং কাকিমা। সেখানে কিছু মানুষ হঠাৎ করে তাদের মা কাকিমাকে চোর বলে অভিযোগ করে। সেই সময় তার মা ও কাকিমাকে বিবস্ত্র করে ব্যাপক মারধর করে কিছু মানুষ। এরপর পুলিশ গিয়ে আক্রান্ত মা ও কাকিমার প্রাথমিক চিকিৎসা করে তাদেরকে সংশোধনাগারে পাঠিয়ে দিয়েছে। অথচ যারা মারধর করল, তাদের গ্রেপ্তার করল না পুলিশ। এই অভিযোগও করেছেন মানিকচকের ফতেপুর গ্রামের নিগৃহীত ওই মহিলার পরিবার এবং গ্রামবাসীরা।
এদিকে দিন দুপুর থেকেই পুলিশ সুপারের অফিসের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করে দেয় বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু সহ দলের জেলা নেতৃত্ব। সাংসদ খগেন মুর্মু বলেন, এই ধরনের ঘটনার আমরা তীব্র ধিক্কার জানাচ্ছি। সিভিকের সামনে দুই মহিলাকে বিবস্ত্র করে মারধর করছে, সেই ছবি আমরা দেখতে পেয়েছি। অথচ পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। আর রাজ্য প্রশাসন মণিপুরের ঘটনা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। কিন্তু এ রাজ্যের মালদায় এত বড় ঘটনা আমাদের সকলকে লজ্জিত করেছে। দোষীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবিতেই এদিন পুলিশ সুপারের অফিসের সামনেই বিক্ষোভ অবস্থান করা হয়েছে।
তৃণমূলের জেলার মুখপাত্র আশিস কুণ্ডু জানিয়েছেন, এই ঘটনা কারা ঘটিয়েছে বলতে পারব না। তবে দোষীদের অবিলম্বে শাস্তির দাবি করছি এবং ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এদিকে দুই মহিলাকে গণপিটুনির ঘটনায় বামনগোলা থানায় সকাল থেকেই জেলা পুলিশ সুপার সহ পদস্থ কর্তারা তদারকিতে যান। এত বড় ঘটনা কোথায় কিভাবে ঘটল তার তদন্ত শুরু করেন। ইতিমধ্যে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন মহিলা-সহ পাঁচজনকে আটক করেছে। সোশ্যাল ভাইরাল হওয়া ছবি দেখে পুলিশ অভিযুক্তদের খোঁজ শুরু করেছে।