দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর অবশেষে লন্ডনের বুকে চিরতরে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ঐতিহাসিক ইন্ডিয়া ক্লাব। যবনিকা পড়তে চলেছে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের গৌরবময় ইতিহাসের স্মৃতিজড়ানো এক অধ্যায়ের। এককালে জাতীয়তাবাদী বিপ্লবীদের আখড়া ছিল এই ক্লাব। খাওয়া-দাওয়া, আড্ডার পাশাপাশি চলত রাজনীতি, দেশকে স্বাধীন করার পরিকল্পনা নিয়ে মতের আদানপ্রদান। এই নামী রেস্তোরাঁয় নিয়মিত যাতায়াত ছিল স্বাধীন দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু, পরবর্তীকালে ব্রিটেনে ভারতের প্রথম রাষ্ট্রদূত পদ অলঙ্কৃত করা কৃষ্ণ মেননেরও।
১৯৫১ সালে লন্ডনের স্ট্র্যান্ডে তৈরি হয় এই ইন্ডিয়া ক্লাব। যার উদ্যোক্তা ছিল ইন্ডিয়া লিগ নামে ভারতের স্বাধীনতাকামী একটি ব্রিটিশ সংগঠন। ১৯২৮ সালে মেননের নেতৃত্বেই ওই সংগঠন তৈরি হয়। লিগের প্রথম প্রেসিডেন্ট ছিলেন বড়লাট লর্ড মাউন্টব্যাটন-পত্নী লেডি এডুইনা মাউন্টব্যাটেন।
ইতিহাসের স্মৃতি বিজড়িত এই রেস্তোরাঁ কাম আড্ডাখানা ভেঙে ফেলার চেষ্টা অনেকদিনের। নতুন হোটেল নির্মাণের জন্য রেস্তোরাঁ আংশিক ভেঙে ফেলতে ওয়েস্টমিনস্টার সিটি কাউন্সিলে আবেদন করে রেস্তোরাঁর জমির মালিক মারস্টন প্রপার্টিজ। যদিও ২০১৮র আগস্টে লন্ডনের প্রাণকেন্দ্রে সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে ওই রেস্তোরাঁর গুরুত্ব স্বীকার করে সেই আবেদন খারিজ করে দেয় কাউন্সিল। জয় হয় রেস্তোরাঁর মালিক ইয়ডগার মার্কার ও তাঁর মেয়ে ফিরোজার। তাঁদের ‘সেভ ইন্ডিয়া ক্লাব’ উদ্যোগ সফল হয়। কিন্তু এবার তাঁরা সেটি আর রক্ষা করতে পারছেন না। মারস্টন প্রপার্টিজ তাঁদের নোটিশ দিয়ে জানিয়েছে, সেখানে রেস্তোরাঁ উঠে গিয়ে হবে অত্যাধুনিক হোটেল। তাই রেস্তোরাঁ খালি করে দিতে হবে।
মার্কার ও ফিরোজা জানিয়েছেন, দুঃখের সঙ্গে আমরা জানাচ্ছি আগামী মাসে ঝাঁপ পড়ছে ইন্ডিয়া ক্লাবের। ১৭ সেপ্টেম্বর শেষবারের মতো জনসাধারণের জন্য খোলা থাকবে তার দরজা। সাদামাঠা রেস্তোরাঁর দেওয়ালে এখনও জ্বলজ্বল করছে ভারতের বিভিন্ন জাতীয়তাবাদী নেতার ছবি। তবে মাত্র আর কটা দিন। বাটার চিকেন, মশালা ধোসার মতো আইটেমে প্রবাসে এশিয় সম্প্রদায়ের রসনা বিলাস মিটিয়ে আসা একটি প্রতিষ্ঠানের চিহ্নই সম্ভবত আর থাকবে না।