৩৬ বছর আগে দিয়েগো মারাদোনা বিশ্বকাপ দিয়েছিলেন দেশকে। সেই স্বপ্ন, সেই কাপ আবার ছুঁয়ে দেখতে চাইছে আর্জেন্টিনা। এ বার স্বপ্নের কেন্দ্রে লিওনেল মেসি। কাতারই হতে চলেছে তাঁর কেরিয়ারের শেষ বিশ্বকাপ। আর সেখানেই বিশ্বকাপটা হাতে তুলে নিতে চাইছেন তিনি। মেসি যদি পারেন, সারা দেশ জুড়ে শুরু হয়ে যাবে উৎসব। রোসাসিওতে কাপ জয়ের উৎসব যে লাগামছাড়া হবে, তাতে আর আশ্চর্য কী! মারাদোনার শহর বুয়েনস আইরেস থেকে ৩০০ কিমি দূরে রোসারিও। পারানা নদীর ধারের সেই ছোট্ট শহরেই এখন চোখ সারা বিশ্বের। মেসির ছবিতে ছেয়ে গিয়েছে প্রতিটা বাড়ির দেওয়াল, আকাশছোঁয়া বিল্ডিং। রোসারিওর গা ঘেঁষা শহর সেরোদিনোতে ৬০ ফুট উঁচু, ৪০ ফুট চওড়া কাটআউট লাগানো হয়েছে। সমস্ত রাস্তায় উড়ছে মেসির ১০ নম্বর জার্সি। ফ্রান্সের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপের ফাইনালটার আগে যেন তুমুল উত্তেজনায় ফুটছে রোসারিও।
সেরোদিনোর মেয়র জুয়ান পিও দ্রোভেত্তা বলেছেন, ‘মেসির কাটআউট যতবার দেখছি, ততবার গায়ের রোম খাড়া হয়ে যাচ্ছে। উত্তেজনায় ফুটছি। আর্জেন্টিনাকে এই চূড়ান্ত সাফল্যের জায়গায় পৌঁছনোর জন্য নিশ্চিত ভাবেই টিম হিসেবে একযোগে নামবে ফুটবলাররা। আর ওদের সমর্থন করার জন্য সমস্ত হৃদয় এক হয়ে যাবে। সবাই এক হয়ে গলা ফাটাবে।’
কেরিয়ারের দ্বিতীয় বিশ্বকাপ খেলতে নামবেন মেসি। এলএম টেন ২০১৪ সালে ব্রাজিল বিশ্বকাপের ফাইনালে তুলেছিলেন আর্জেন্টিনাকে। কিন্তু সে বার জার্মানির কাছে হেরে গিয়েছিল তাঁর টিম। সেই আক্ষেপ মেটানোর জন্য এ বার যে আর্জেন্টিনা এবং আরও মরিয়া, তার প্রমাণ কাতার বিশ্বকাপের দ্বিতীয় ম্যাচ থেকেই পাওয়া গিয়েছে। রোসারিওর ক্লাব ওল্ড বয়েজ থেকে উঠে আসা মেসির। সেই ক্লাবে এক ফুটবলারের বাবা জুয়ান ইবানেস মোরোনি বলেছেন, ‘ফাইনালটা এ বার আমরাই জিতব। কাপটা জেতার জন্যই যে মরিয়া প্রতিটা ম্যাচ খেলতে নামছে টিম, তা তো দেখতেই পাচ্ছে সবাই। আর পুরো টিম, আর্জেন্টিনাকে যেমন বিশ্বকাপটা দিতে চায়, তেমনই জেতাতে চায় মেসিকে। বিদায় নেওয়ার আগে এই বিশ্বকাপটা মেসির দরকার।’
রোসারিও শহরে একটা বিশাল পতাকা সেই বিশ্বকাপের শুরু থেকে উড়ছে। তাতে লেখা— একটা অন্য পৃথিবী পক্ষ থেকে, পড়শিদের তরফ থেকে। মেসির ছেলেবেলায় ছবি দেখিয়ে আলেজান্দ্রা ফেরেইরা বলছেন, ‘শৈশবে এই শহরে ও দারুণ আনন্দ করত। ফুটবলই যে ধ্যানজ্ঞান ছিল। ওর মতো মিষ্টি একটা মানুষ এই বিশ্বকাপটা জেতার দাবি রাখে। ও জন্ম থেকেই নেতা। খুব ভালো করে জানি, ফাইনালটাও আমরা জিতব। মেসি আমাদের গর্বিত করবে। আমরা ইতিমধ্যেই চ্যাম্পিয়ন হয়ে গিয়েছি।’