বুবুন মুখোপাধ্যায়, আসানসোল: আসানসোলের কুলটি থানা এলাকায় খুনের মামলায় দোষী সাব্যস্ত দুই আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের (Life imprisonment) সাজা ঘোষণা হল ঘটনার চারবছর পর। দোষী সাব্যস্ত এই দুই আসামির নাম রাকেশ বাউরি ও সাগর বাউরি। কুলটি থানার আলডির সায়ের পাড়ার বাসিন্দা। আসানসোল আদালতের অতিরিক্ত জেলা জজ (এডিজে প্রথম) মনোজ কুমার প্রসাদ এই সাজা ঘোষণা করেন। এই মামলার সরকারি আইনজীবী অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় এদিন বলেন, পুলিশ এই দু’জনের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২, ৩৬৪, ২০১ ও ৩৮৪ নম্বর ধারায় (কেস নম্বর ১৮০/১৮) মামলা করেছিল। ৪ বছরের বেশি সময় ধরে চলা এই মামলায় মোট ১৪ জন সাক্ষী দেন। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ৩৮৪ নম্বর ধারা প্রমাণ করা যায়নি। তবে বাকি তিনটি ধারা প্রমাণ হওয়ায় গত ৫ অগস্ট শুক্রবার বিচারক তাদের দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন। তিনি আরও বলেন, এদিন বিচারক রায় দানের তিনটি ধারার মধ্যে দুটিতে যাবজ্জীবন ও একটিতে ৭ বছর কারাদণ্ডের নির্দেশ দেন। পাশাপাশি তিনটি ধারার মধ্যে একটিতে ১০ হাজার ও বাকি দুটিতে ৫ হাজার টাকা করে মোট ২০ হাজার টাকা জরিমানা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৮ সালের ৮ মে সন্ধ্যাবেলায় পার্টি করার নাম করে কুলটি থানার আলডি সায়ের পাড়ার বাসিন্দা তাপস বাউরিকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায় তারই সম্পর্কে মাসতুতো ও খুড়তুতো ভাই রাকেশ বাউরি ও সাগর বাউরি। সেদিন রাতে তাপস বাড়ি না ফেরায় বাড়ির লোকজন খোঁজ শুরু করেন। তাঁরা জানতে পারেন তাপস রাকেশ ও সাগরের বাড়ি যায়। কিন্তু তারা বলে, তাপস আগেই বাড়ি চলে গিয়েছে। এরপর রাকেশ ও সাগর পালিয়ে যায়। পরের দিন ৯ মে তাপসের বাবা রবীন বাউরি গোটা ঘটনার কথা জানিয়ে কুলটি থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তার ভিত্তিতে পুলিশ রাকেশ ও সাগরকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। জেরায় তারা স্বীকার করে যে, তারা তাপসকে মেরে নরসুমোদা কোলিয়ারিতে একটি পরিত্যক্ত খনিতে ফেলে দিয়েছে। এরপর তাপসের দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তখন অবশ্য তাপসের মোটর সাইকেলটি পাওয়া যায়নি। পুলিশ তাদের কাছ থেকে তাপসের আংটি, মানিব্যাগ ও পরিচয়পত্র পায়। এরপর পুলিশ ধৃতদের বিরুদ্ধে মোট চারটি ধারায় মামলা করে। সেই সময় পুলিশ প্রাথমিক তদন্ত ও ধৃতদের জেরা করে জানতে পারে, তাপস বাউরির এক পিসি ছিলেন ইসিএলের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী। তাঁর নাম পাতনি বাউরি। তাঁর যে টাকা ছিল তা নিয়ে বিবাদের জেরে রাকেশ ও সাগর বাউরি পরিকল্পনা করে তাপসকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে খুন করে।