এবার লেদার কমপ্লেক্স থানায় এফআইআর দায়ের নওশাদের বিরুদ্ধে

বুধবার ব্যাঙ্কশাল আদালতে খারিজ হয়ে গেছে আইএসএফ বিধায়ক সহ ধৃতদের জামিনের আর্জি। আর বুধবারের রায়ের পর বর্তমানে জেল বন্দি তিনি। এবার নওশাদকে হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানাতে চলেছে কলকাতার লেদার কমপ্লেক্স থানার পুলিশ। কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবারই নওশাদকে হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানিয়ে বারুইপুর আদালতের দ্বারস্থ হতে চলেছে লেদার কমপ্লেক্স থানার পুলিশ। থানায় গোলমাল করার অভিযোগে এই এফআইআর হয়েছে আইএসএফ বিধায়কের বিরুদ্ধে। একইসঙ্গে কলকাতা পুলিশের তরফ থেকে এও জানানো হয়, বৃহস্পতিবারই প্রোডাকশন ওয়ারান্টের অনুমতি চাওয়া হবে। এদিকে আইএসএফ শিবির সূত্রে খবর, এবার পথে নামছেন নওশাদ সিদ্দিকির সমর্থকেরা। একটানা কর্মসূচি রয়েছে তাঁদের। বিধায়কের জামিন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন জারি থাকবে বলে জানান তাঁরা। অন্যদিকে অফার আসছে বলে বিস্ফোরক দাবি করেন খোদ নওশাদ।

এদিকে বুধবার আদালতে সরকারি আইনজীবী দাবি করেন, নওশাদের মোবাইল চ্যাট থেকে নাকি হাওয়ালা যোগের খোঁজ মিলেছে। রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে টাকার অঙ্ক নিয়ে কথা হয়েছে।  এমনকী নির্বাচন কমিশনের কাকে কোথায় সরাতে হবে, তা নিয়েও পরিকল্পনা করা হয়েছিল বলে দাবি আইনজীবীর।

প্রসঙ্গত, আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকির কাছে থাকা দুটি মোবাইল ফোন নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্কও। কারণ, কী রয়েছে তাতে তা  ঘেঁটে দেখতে চান তদন্তকারী আধিকারিকরা। উলটোদিকে, আইএসএফ নেতৃত্বের দাবি, যখন নওশাদ গ্রেপ্তার  হন তখন তার কাছেই মোবাইল ফোন ছিল। আলাদা করে সিজ হয়নি। এরপরেও মোবাইল ফোন ফরেনসিক পরীক্ষা করা নিয়ে তদন্তকারী আধিকারিকরা নওশাদের জামিন বিরোধী ভুল যুক্তি খাড়া করছেন বলে মত তাঁদের। উল্লেখ্য, বুধবার নওশাদের জামিন বিরোধিতা করে সরকারি পক্ষের আইনজীবী যুক্তি দেখান, নওশাদ সিদ্দিকির ২ টি ফোনেরই ফরেনসিক পরীক্ষা করা প্রয়োজন। কারণ, তদন্তকারীদের ধারনা, এই মোবাইলগুলো থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলতে পারে। যা তদন্তের অনেকটা সাহায্য করবে। সেদিনকার ধর্মতলায় বিক্ষোভ এবং সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করা ও সরকারি কর্মচারীকে আঘাত করার ব্যাপারে আগে থেকে কোনও পরিকল্পনা ছিল কিনা, সেই সংক্রান্ত কোনও তথ্য ফোনে রয়েছে কিনা তার রহস্যভেদ করার জন্যেই ফোনের ফরেনসিক পরীক্ষার দাবি জানান সরকারি আইনজীবী অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায়।

তবে বিষয়টি নিয়ে আইএসএফের কার্যকরী সভাপতি সামসুর আলি মল্লিকের বক্তব্য, যখন নওশাদ গ্রেপ্তার হন তখন তার কাছেই মোবাইল ফোন ছিল। আলাদা করে সিজ হয়নি। সম্পূর্ণ ভুল তথ্য। নওশাদের জামিন হলে তিনি বাইরে বেরিয়ে তদন্তে প্রভাব বিস্তার করতে পারেন বলেও জোরালো আবেদন ছিল সরকারি পক্ষের আইনজীবীর।পালটা আইএসএফের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিরোধী দলের বিধায়ক হয়ে প্রভাব খাটানো যায় না। যেভাবে জামিনের আবেদন করা হয়েছিল, তার উত্তর দিতে পারেনি সরকার। তাই ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে মত তাঁদের। তবে বুধবার সরকারি আইনজীবী দীপঙ্কর কুণ্ডু জানান, নওশাদের মোবাইল ফোনে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রয়েছে। ইতিমধ্যে ফরেনসিকের আবেদন মঞ্জুর করা হয় আদালতে। মোবাইল পরীক্ষা করা হলে সেখান থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যেতে পারে।

এদিকে এরই মধ্যে নতুন মামলা সামনে আসছে বিধায়কের বিরুদ্ধে। এদিকে বুধবারই  আদালত থেকে জেলে যাওয়ার পথে বিস্ফোরক দাবি করেন নওশাদ। প্রিজন ভ্যানে তোলার সময় তিনি চিৎকার করে জানান, ‘আমার কাছে অফার এসেছে, ভয়ও দেখানো হচ্ছে। কিন্তু আমার লড়াই চলবে। সমাজ সংস্কারের লড়াইতে নেমেছি। সেই লড়াই জারি থাকবে।’ কার অফার? কেই বা ভয় দেখাচ্ছে? তা অবশ্য বলেননি নওশাদ।

প্রসঙ্গত, গত ২১ জানুয়ারি ধর্মতলায় পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তির পরেই গ্রেপ্তার করা হয় আইএসএফ নেতা নওশাদ সিদ্দিকিকে। সঙ্গে গ্রেপ্তার করা হয় আরও ১৮ আইএসএফ কর্মীসমর্থককেও। বুধবারও তাঁদের তোলা হয় ব্যাঙ্কশাল আদালতে।এর আগে প্রথমে ১০ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হলেও বুধবার ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জেল হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 − one =