এলবিএস’দের ক্ষোভের মুখে কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। কারণ এলবিএসদের নিয়ে এক বেফাঁস মন্তব্য় করেন মেয়র। আর তাতেই তোলপাড় কলকাতা পুরসভা। সূত্রে খবর, শুক্রবার পুরসভার ‘টক টু মেয়র’ অনুষ্ঠানে ফিরহাদ বলেন, ‘এলবিএস’রা লোককে মুরগি করেন। অনেক এলবিএস আছেন, ফ্যা ফ্যা করে ঘুরে বেড়ান। কাজ পান না। আমি নিজেও এলবিএসদের হাতে ভিক্টিম।’ সেই সঙ্গে তাঁর মন্তব্য ছিল, ‘একটা মানুষ এক জায়গায় বসে ড্রয়িং করবেন। এর মধ্যে কী এমন হাতিঘোড়া আছে!’
মেয়রের এই মন্তব্যেই বেজায় চটেন এলবিএস’রা। প্রতিবাদে সোমবার পুরসভায় বিক্ষোভ দেখান পুরসভার নথিভুক্ত এলবিএস’রা। ডেপুটেশন জমা দেওয়ার পাশাপাশি ‘পেন ডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে এলবিএস অ্যাসোসিয়েশন। ওই মন্তব্যের জন্যে মেয়রকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে বলেও দাবি তাদের। মেয়র অবশ্য এ নিয়ে আর কোনও মন্তব্য করেননি।
এখানে বলে রাখা শ্রেয়, পুর-এলাকায় কোনও বাড়ি তৈরি করতে গেলে সবাইকে বিল্ডিং প্ল্যান জমা দিতে হয়। বিল্ডিং প্ল্যান তৈরির কাজটা করেন পুরসভার নথিভুক্ত এলবিএস’রাই। অনলাইনে বিল্ডিং প্ল্যান জমা চালু হওয়ার পর তিন কাঠা পর্যন্ত জমিতে বিল্ডিং প্ল্যান অনুমোদনের ক্ষমতাও তুলে দেওয়া হয়েছে এলবিএস’দের হাতে। এঁদের মধ্যে যেমন অনেক ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার আছেন, আবার অনেক বি-টেক, এম-টেক পাশ ইঞ্জিনিয়ারও রয়েছেন। পুরসভার ইঞ্জিনিয়াররাও চাকরি থেকে অবসরের পর এই কাজ করেন। কলকাতা পুরসভায় নথিভুক্ত এলবিএস প্রায় ৬ হাজার। মেয়রের মন্তব্যে তাঁরা অপমানিত বোধ করছেন।
লাইসেন্সড বিল্ডিং সার্ভেয়ার্স অর্থাৎ এলবিএস অ্যাসোসিয়েশনের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, ‘মেয়রের বক্তব্য শুনে আমরা সবাই স্তম্ভিত। দশকের পর দশক অনেক দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার এলবিএস পেশায় যুক্ত। তাঁদের সম্পর্কে মেয়র যে ধারণা পোষণ করেছেন, সেটা খুবই অসম্মানজনক। আমরা তীব্র ধিক্কার জানাচ্ছি।’ তাঁর কথায়, ‘এলবিএস’রা প্রত্যেকে পেশাদার। যাঁর যেমন যোগ্যতা, তেমন ফি নেন। কারও যদি মনে হয় কোনও এলবিএস বেশি টাকা চাইছেন, তা হলে অন্য এলবিএস-এর কাছে যেতে পারেন। কিন্তু একজন পেশাদার ইঞ্জিনিয়ার কত পারিশ্রমিক নেবেন, সেটা পুরোপুরি তাঁর ব্যাপার। পুরসভা নাক গলাতে পারে না।’
এলবিএস’দের বিরুদ্ধে মেয়রের এই ক্ষোভ অবশ্য নতুন নয়। বেআইনি নির্মাণের পিছনে এলবিএস’দের ভূমিকা নিয়ে আগেও সরব হয়েছেন। এলবিএস’দের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও হুঙ্কার দিয়েছিলেন। সম্প্রতি কলকাতা পুরসভার ৯ নম্বর বরোয় একটি বেআইনি নির্মাণের অভিযোগে এক এলবিএস’কে সাময়িক সাসপেন্ডও করা হয়। এখনও আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে তাঁকে। এ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন এলবিএস’রা। তাঁদের বক্তব্য, বাড়ির নকশা অনুমোদনের পরে এলবিএস’দের আর কোনও ভূমিকাই থাকে না। সবটাই চলে যায় প্রোমোটারদের নিয়ন্ত্রণে।