সওয়াল করতে গিয়ে আদালতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে বিদ্ধ করলেন অভিযুক্তদের আইনজীবীরা

নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এবার কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে কাঠগড়ায় তোলার চেষ্টা অভিুক্তদের। বৃহস্পতিবার আদালতে পেশের আগে কুন্তল ঘোষ ঘনিষ্ঠ মহলে ইডি-র বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে জানান, ‘ইডি নাকি বলেছে, আমার ১০০কোটির সম্পত্তি। সেগুলো কই? আমার সম্মানহানি এসব।’ এদিকে বৃহস্পতিবার নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় আদালতে তোলা হয় তাপস মণ্ডল, কুন্তল ঘোষ, নীলাদ্রি ঘোষ -সহ অন্যান্য অভিযুক্তদের। এদিন সওয়ালে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার বিরুদ্ধেই একের পর এক যুক্তি সামনে আনেন অভিযুক্তদের আইনজীবী।
সওয়াল জবাবের সময়ে নীলাদ্রি ঘোষের আইনজীবী জানান, ‘সিবিআই বলছে আমি কুন্তল ও তাপসের এজেন্ট। এই অভিযোগ আমার মক্কেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ খাটে না। আমার মক্কেল কোনও সরকারি আধিকারিকের থেকে টাকা নেননি। টাকা নেননি কোনও অযোগ্যর কাছ থেকেও।’ পাশাপাশি এও জানান, ‘সাক্ষীদের নাম কেস ডায়েরিতে আছে। আমি তাদের জানিও না।‘ আর এখানেই প্রশ্ন, তাহলে কী করে প্রভাব খাটাবেন নীলাদ্রি।
এদিকে তাপস মণ্ডলের আইনজীবী সওয়াল করতে গিয়ে বলেন, ‘এফআইআর-এ আমার মক্কেলের নাম ছিল না। আমার মক্কেল নোটিশের ভিত্তিতে হাজিরা দিতে গেলে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাপস মণ্ডলের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভুল। কারণ, তিনি এমসিকিউ সেট করতেন না।‘ একইসঙ্গে এও জানান, ‘কুন্তলও সরকারি কর্মচারি নয়। এদিকে সিবিআই দাবি করছে, তাপস মণ্ডল কুন্তলকে টাকা দিয়েছেন। তাই যদি হয়ে থাকে তাহলে দুর্নীতিদমন আইন এখানে লাগু হয় না।’
এরপর কুন্তল ঘোষের আইনজীবী সওয়াল করতে গিয়ে জানান, ‘সিবিআই বলছে কুন্তল প্রভাবশালী। টাকাও তুলেছেন প্রভাবশালীদের থেকে। এদিকে কুন্তল প্রাথমিক শিক্ষা সংসদে চাকরি করতেন না।’ আর এখানেই প্রশ্ন, তাহলে বোর্ডের লোকজন কোথায়?’ পাশাপাশি কুন্তলের আইনজীবীর আরও যুক্তি, ‘আমার মক্কেলকে প্রভাবশালী বলা হচ্ছে। এদিকে দল তো প্রকাশ্যে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে।’ আর এখানেই কুন্তেলর আইনজীবীর প্রশ্ন, ‘তাহলে প্রভাব কীসের? তথ্য প্রমাণ তো সিবিআই-এর কাছে। নথি সিবিআই-এর কাছে। তাহলে কুন্তল যদি প্রমাণ নষ্ট করে থাকেন, তাহলে সিবিআই-এরই নিজের উপর ভরসা নেই, এটাই বুঝতে হবে।’ এরই রেশ ধরে ইন্টারপোলকে ডাকার কথাও তোলেন কুন্তলের আইনজীবী।
এসএসসি-র উপদেষ্টা কমিটির প্রাক্তন আহ্বায়ক শান্তিপ্রসাদ সিনহার আইনজীবী সওয়াল করতে গিয়ে জানান, ‘আমি ২২৫ দিন ধরে হেপাজতে। চার্জশিট মানে তো তদন্ত শেষ। কিন্তু ওঁরা একটা করে চার্জশিট দিচ্ছে আর বলছে তদন্ত চলছে।’ এখানেই এসপি সিনহার আইনজীবী প্রশ্ন তোলেন, ‘এটা কি আইন? পিক আর চুস পদ্ধতিতে তদন্ত করছে।’ পাশাপাশি এও জানান, ‘কয়েকজনের নাম আসছে। অল্প কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করছে। আবার তদন্ত করছে। ওরা জামিন আটকাতেই চার্জশিট দিচ্ছে।’ এই প্রসঙ্গে এসপি সিনহার আইনজীবীর বক্তব্য, ‘সিবিআই বলছে, সমাজের কথা ভেবে তদন্ত করছে। আদতে অভিযুক্তদের আটকে রেখে সমাজে সিবিআই নিজের ইমেজ মেকওভার করছে।’
এদিকে পার্থর আইনজীবী এদিন জানান, ‘বাগ কমিটির রিপোর্টে অফিসকর্মীদের কথা বলা হয়েছিল। একজন যার নাম চার্জশিটে রয়েছে, চারটি কেসে নাম রয়েছে। সে এখনও হাওড়ার একটি কলেজের প্রধান পদে আছে।’ আর এখানেই প্রশ্ন, ‘তাহলে তাকে কেন কাস্টোডিতে নেওয়া হচ্ছে না?’ এদিন পার্থও জানান, ‘আমি মন্ত্রী হিসেবে কাউকে সুপারিশ করি না। আমার কাছে সুপারিশ আছে। অনেক গ্রাউন্ড লেভেল থেকে আসে।’
এর প্রেক্ষিতে সিবিআই-এর তরফে আইনজীবী আদালতে জানান, ‘এটা একটা ষড়যন্ত্র। কার কী ভূমিকা, সেটা দেখা যাচ্ছে। মিডলম্যানদের ভূমিকা কেস ডায়েরিতে আছে। টাকা কোথায় কার থেকে আসছে কার কাছে যাচ্ছে সেটারই খোঁজ চলছে।’ এরপরই বিচারক সিবিআইয়ের আইনজীবীকে প্রশ্ন করেন, ‘এই কেসে সরকারি কর্মী যারা যুক্ত তারা কোথায়?’ আর এই সূত্র ধরেই বিচারক কেস ডায়েরির একটা অংশ দাগ দিয়ে তদন্তকারী আধিকারিককে বলেন, ‘আপনি এই বিষয়টি দেখুন।‘

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × 5 =