সদ্য তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদানকারী সাগরদিঘি উপনির্বাচনে কংগ্রেস জোটের প্রতীকে জেতা বাইরন বিশ্বাসের বিধায়ক পদ খারিজের আবেদন জানিয়ে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন এবং বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে চিঠি দিলেন কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী সৌমশুভ্র রায়।আইনজীবীর দাবি, কংগ্রেসের টিকিটে জিতে তৃণমূলে যোগ দেওয়া বাইরন বিশ্বাসের বিধায়ক পদ খারিজ করা হোক। এই আবেদনে সাড়া না পেলে মামলা করা ছাড়া উপায় নেই বলেও চিঠিতে উল্লেখ করেন আইনজীবী।
সাম্প্রতিক বাংলার রাজনৈতিক সমীকরণকে কিছুটা নাড়়া দিয়েছে বাইরন বিশ্বাসের তৃণমূলের যোগদান। সাগরদিঘির উপনির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কে ২২ হাজার ভোটে হারিয়েছিলেন বাম-কংগ্রেসের জোট প্রার্থী বাইরন বিশ্বাস। তিনি ছিলেন বিধানসভায় কংগ্রেসের একমাত্র মুখ। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ‘সাগরদিঘি’কে মডেল করে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে শাসকের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ঘুঁটি সাজাচ্ছিল বাম-কংগ্রেস জোট। কিন্তু তার আগেই বদলে গেল সমীকরণ। গত সোমবার ঘাটালে তৃণমূলের নবজোয়ারে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত থেকে ঘাসফুল পতাকা নেন বাইরন।
বাইরন বিশ্বাসের দলবদলের পরই জলঘোলা তৈরি হয় আদৌ তাঁর বিধায়ক পদ থাকবে কিনা তা নিয়ে। এবার তাঁর বিধায়ক পদ খারিজের আবেদন জানিয়ে চিঠি লিখলেন আইনজীবী সৌমশুভ্র। চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমি বাংলার একজন সাধারণ নাগরিক হিসাবে চিঠিটা লিখছি। আমি সাগরদিঘির ভোটার নই। তবুও নিরপেক্ষ একজন রাজ্যবাসী হয়ে বলছি, বাইরন বিশ্বাসের বিধায়ক পদ খারিজ হওয়া উচিত। সাগরদিঘিতে ২.৩ লক্ষ বৈধ ভোট রয়েছে। তাঁদের মধ্যে উপনির্বাচনে ৭৩ শতাংশ ভোট দিয়েছেন। বাইরন বিশ্বাস পেয়েছিলেন ৮৭,৬৬৭ ভোট।’ আইনজীবীর বক্তব্য, কংগ্রেসের টিকিটে তিনি জিতেছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি তিনি তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। তার প্রমাণস্বরূপ ভিডিয়ো ফুটেজও রয়েছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করেন তিনি। পাশাপাশি আইনজীবী সৌমশুভ্র রায় জানান, ‘বাইরনকে এক পক্ষ প্রতিনিধিত্ব করার জন্য বিধানসভায় পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর দলবদলে তাঁরাই আজ প্রতারিত। সেক্ষেত্রে বাইরনের বিধায়ক পদ খারিজ না হওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই।’ বিষয়টি উল্লেখ করে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন এবং বিধানসভার অধ্যক্ষকে চিঠি লেখেন তিনি।
এদিকে বিধায়ক পদ খারিজ হবে কিনা, সে প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। তিনি বলেছিলেন, ‘অ্যান্টি ডিফেকশন ল যদি অ্যাপ্লিকেবল হয়, তাহলে হবে। এটা তো স্পিকারের ব্যাপার। একটাই তো সিট, এখানে তো অ্যান্টি ডিফেকশন ল কার্যকরী নয়।’ প্রসঙ্গত, এর আগেও এইভাবেই বিজেপির টিকিটে জিতে দল বদল করেছিলেন মুকুল রায়, কৃষ্ণ কল্যাণী। তাঁদেরও বিধায়ক পদ খারিজ হয়নি।
তবে বাইরনের এই শিবির বদল রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, তাতে বাম-কংগ্রেস জোট যত না ধাক্কা খেয়েছে, তার থেকে বেশি ধাক্কা খেয়েছেন সংখ্যালঘুরা। যাঁরা তাঁকে প্রতিনিধি করে পাঠিয়েছিলেন। একই দাবি করেছেন ফুরফুরা শরিফের পীরজাদারাও।
উল্লেখ্য, তৃণমূলের যোগ দেওয়ার পরই বাইরন বিশ্বাস চ্যালেঞ্জ ছুড়েছিলেন, তাঁর জয়ী হওয়ার পিছনে কংগ্রেসের কোনও ভূমিকা নেই। তিনি নিজের ক্যারিশ্মায় জিতেছিলেন। তিনি চ্যালেঞ্জ করেছিলেন, যদি আবারও ভোট হয়, তিনি জিতে দেখাবেন।