রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে, তোপ অনুরাগের

সন্দেশখালি কাণ্ড নিয়ে উত্তাল রাজ্য-রাজনীতি। শনিবার কলকাতায় পৌঁছে এরই প্রেক্ষিতে তৃণমূলকে নিশানা করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর। তাঁর মতে, বাংলায় আইনশৃঙ্খলার ভয়াবহ পরিস্থিতি। কলকাতায় পা রেখেই রাজ্য সরকারকে পুরোপুরি অল আউট অ্যাটাকের মুডে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর। শনিবার বিমানবন্দরের বাইরে পা রেখেই তিনি জানান, ‘পশ্চিমবঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।’ পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও বিঁধতে ছাড়েননি।

মন্ত্রী বলেন, ‘দুর্নীতিগ্রস্তদের আশ্রয় দেয় পশ্চিমবঙ্গের সরকার। নিজের মন্ত্রী-সাংসদ-বিধায়কদের উপর কি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই? তিনি কি লুঠের জন্য ছাড় দিয়ে রেখেছেন? নাকি তাঁর কথা তাঁর দলের লোকেরা শোনে না? লুঠের বিরুদ্ধে তদন্ত হলে, তদন্তকারী অফিসারদের উপর তাঁর দলের গুণ্ডা, নেতারা আক্রমণ চালায়। এটা গোটা দেশে আর কোথাও হয় না, সারা দেশে যা হয় না, তা হয় বাংলায়।’

প্রসঙ্গত, সন্দেশখালিতে অভিযানে গিয়ে আক্রান্ত হন ইডির আধিকারিকেরা। তিনজন ইডি অফিসার গুরুতর জখম হয়েছিলেন। কিন্তু যাকে ঘিরে এই ঘটনার সূত্রপাত, সেই তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখ এখনও অধরা। এর রেশ কাটতে না কাটতেই শুক্রবার আবার পুরুলিয়া আবারও জনরোষের মধ্যে পড়ে আক্রান্ত হয়েছেন গঙ্গাসাগর যেতে আসা উত্তরপ্রদেশের তিন সাধু। এই সব ঘটনায় রাজ্যের সামগ্রিক আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে বার বার প্রশ্ন উঠছে। আর এই সব ইস্যুতে শাসকদলকে তুলোধনা করছে বিরোধীরা। এবার রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কড়া সমালোচনার সুর কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরের গলায়।

সম্প্রতি সন্দেশখালিতে ইডির উপর হামলার ঘটনা নিয়েও রাজ্যকে কড়া ভাষায় বিঁধলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। অনুরাগ ঠাকুরের বক্তব্য, ‘আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থার এক ভয়ঙ্কর সমস্যা রয়েছে এখানে। বার বার তার উদাহরণ দেখা যাচ্ছে। যদি দুর্নীতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধে তদন্ত হয়, তাহলে ইডির টিমের উপরেও হামলা হচ্ছে। মারধর করা হচ্ছে। মাথা ফাটানো হচ্ছে।’ দুর্নীতি ও কাটমানির ইস্যুতেও রাজ্যের শাসক দল তথা রাজ্য সরকারকে একহাত নেন অনুরাগ। সরাসরি রাজ্য সরকারকে নিশানা করে বললেন, ‘মানুষের পরিষেবার জন্য যে টাকা আসে, সেই টাকার পাই পাই হজম করে নেওয়ার বন্দোবস্ত করা হয়। এখানকার নেতা ও সরকার কাটমানির জন্য বিখ্যাত হয়ে গিয়েছে। গরিবের উন্নয়নের জন্য কেন্দ্রের থেকে যে টাকা আসে, সেখান থেকেও কমিশন খাওয়ার সবরকম চেষ্টা করা হয়। দুর্নীতি চরম সীমায় পৌঁছে গিয়েছে।’

এদিন কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার এবং ক্রীড়ামন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে বলেন, বাংলায় তোষণের রাজনীতি চলছে। দুর্নীতিগ্রস্তদের আশ্রয় দেয় পশ্চিমবঙ্গ সরকার। রাজ্য সরকারের সমস্ত নেতা দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত।

রেশন দুর্নীতির তদন্তে সন্দেশখালিতে ইডির উপর স্থানীয়দের আক্রান্তের প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, এটা নজিরবিহীন। বাংলার আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। দুর্নীতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করলেই আক্রমণের মুখে পড়তে হচ্ছে ইডিকে। আর এই প্রসঙ্গেই অনুরাগ এও জানতে চান, কেন রাজ্য সরকার দুর্নীতিগ্রস্তদের বাঁচাতে চাইছে তা নিয়েও। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর প্রশ্ন, সাংসদ-বিধায়ক-কাউন্সিলরদের উপর থেকে কি রাশ আলগা হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রী? নাকি তাঁর নির্দেশেই গুণ্ডারা তদন্তকারীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে?

একইসঙ্গে আজ পুরুলিয়ায় উত্তরপ্রদেশের সাধুর উপর আক্রমণের ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন, এই ধরনের পরিস্থিতি কেন তৈরি হবে? রাম জন্মভূমিতে শিলান্যাসের সময় পশ্চিমবঙ্গে কার্ফুর মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়। এবার হিন্দু সাধুদেরকেও মারার চেষ্টা করা হল। এই প্রসঙ্গেই অনুরাগের প্রশ্ন, এত হিন্দু বিরোধী চিন্তাভাবনা কেন?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two × 5 =