চন্দ্রযান-৩ এর ল্যান্ডিংয়ের সময় পিছোতে পারে, এমনটাই জানাচ্ছে ইসরো। চন্দ্রযান-২ এবং লুনার এই মুখ থুবড়ে পড়ার ঘটনায় তাড়াহুড়ো করতে নারাজ ইসরো। আর সেই কারণেই প্রয়োজনে ‘চন্দ্রযান-৩’ -র ল্যান্ডিং আরও কয়েকদিন পিছিয়ে দেওয়ারও ভাবনা-চিন্তা করছেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা। প্রয়োজনে ২৭ অগস্ট ল্যান্ডিং করানো যেতে পারে বলে ইসরোর তরফে জানানো হয়েছে। অর্থাৎ দু-চারদিন দেরিতে হলেও চন্দ্রযান-৩-এর সফল ল্যান্ডিং করাতে মরিয়া ইসরো।
ইসরো সূত্রে খবর, ২৩ অগাস্ট, বুধবার চন্দ্রযান-৩ -র চাঁদে অবতরণের কথা রয়েছে। কিন্তু, ল্যান্ডার মডিউলের পরিস্থিতি এবং চাঁদের অবস্থান দেখে প্রয়োজনে চন্দ্রযানের অবতরণ সেদিন স্থগিত করা হতে পারে। এব্যাপারে ইতিমধ্যে বিবৃতি দিয়েছেন ইসরো-র আহমেদাবাদ কেন্দ্রের ডিরেক্টর নীলেশ এম দেশাই। তিনি জানান, ‘২৩ অগস্ট চন্দ্রযান-৩ -র চাঁদে অবতরণের কথা রয়েছে। তবে সেটাই চাঁদের মাটিতে অবতরণের সঠিক সময় কিনা তা ল্যান্ডার মডিউলের পরিস্থিতি এবং চাঁদের অবস্থা দেখেই আমরা সিদ্ধান্ত নেব। যদি কোনও সমস্যা মনে হয় তাহলে আমরা ২৭ অগস্ট মডিউলের চাঁদে অবতরণ করাতে পারি।’ তবে পাশাপাশি এও জানিয়েছেন, কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয় এবং ২৩ অগাস্টই চন্দ্রযান-৩ চাঁদের মাটিতে অবতরণ করাতে সক্ষম হবেন বলেও আশাবাদী ইসরো অধিকর্তা।
চাঁদের দক্ষিণ মেরু-সংলগ্ন যে জায়গায় ল্যান্ড করতে চলেছে বিক্রম তার চারদিক এবড়ো-খেবড়ো জমি আর নানা গর্তে ভর্তি চাঁদের মাটি। যেখানে গর্ত নেই, সেখানেও মাটি অসমান। যেখানে-সেখানে ছড়িয়ে রয়েছে ছোট-বড় পাথর। চাঁদের মাত্র কয়েক কিলোমিটার উপরে ঘুরতে থাকা ল্যান্ডারের হ্যাজ়ার্ড ডিটেকশন ক্যামেরা থেকে তোলা ওই জায়গার এমনই এক ছবি সোমবার সকালে প্রকাশ করে ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজ়েশন (ইসরো)। ফলে ল্যান্ড করার আগে ১০ বর্গকিলোমিটার এলাকার প্রতি ইঞ্চিতে ‘যান্ত্রিক চোখে’ খুঁটিয়ে দেখছে চন্দ্রযান-৩ মিশনের ল্যান্ডার বিক্রম। বুধবার সন্ধে ৬টা ৪ মিনিটে চাঁদের ৬৯ ডিগ্রি দক্ষিণ অক্ষাংশ বরাবর বিক্রমের সফ্ট ল্যান্ডিংয়ের সাফল্যের অনেকটাই নির্ভর করছে এই যান্ত্রিক চোখের দক্ষতার উপর। পুরোপুরি অজানা-অচেনা পরিবেশ, মাইনাস ২০৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা এবং নানা মাপের খানাখন্দ আর বোল্ডারে ভরা ১০ বর্গকিলোমিটার জায়গার মধ্যে থেকে সফ্ট ল্যান্ডিংয়ের উপযুক্ত কয়েক বর্গমিটার জায়গা খুঁজে বার করাতেই আপাতত মন দিয়েছে ল্যান্ডার হ্যাজ়ার্ড ডিটেকশন অ্যান্ড অ্যাভয়ডেন্স ক্যামেরা (এলএইচডিএসি)। এদিকে ইসরোর চেয়ারম্যান শ্রীধর পানিকার সোমনাথ জানান, ‘যদি একটা সেন্সরও কাজ না-করে, সব কিছু ব্যর্থ হয়, তা হলেও বিক্রম সফল ভাবেই অবতরণ করবে। করবেই। সেই ভাবেই বিক্রমকে তৈরি করা হয়েছে। দরকার শুধু প্রোপালশান সিস্টেম অর্থাৎ গতি নিয়ন্ত্রণকারী সিস্টেম টুকুর কার্যকর থাকা।’ তবে তার আগে প্রয়োজন ল্যান্ডিংয়ের জন্য নির্দিষ্ট জায়গাটা চিহ্নিত করা। তবে ল্যান্ডিংয়ের জন্য চিহ্নিত জায়গায় ৩০ সেন্টিমিটার বা তার চেয়ে বড় মাপের কোনও পাথরের টুকরো থাকলে সেটা ওই যন্ত্রে ধরা পড়বে। জমির ঢাল যদি ৫ ডিগ্রি বা তার চেয়ে বেশি হয়, সেটাও ধরে দেবে এই যন্ত্র। এরই পাশাপাশি ইসরোর চেয়ারম্যান এও জানান, ‘চাঁদের উপর ১০ কিলোমিটার উচ্চতা থেকে এক কিলোমিটার উচ্চতায় অত্যন্ত সাবধানে নামিয়ে আনা হবে বিক্রমকে। তার পর শুরু হবে সফ্ট ল্যান্ডিংয়ের অন্তিম পর্যায়। যদি কোনও কারণে পরিকল্পনার চেয়ে বেশি গতিতে ল্যান্ডিং হয়, তা হলেও সমস্যা নেই। কারণ, ওই সম্ভাব্য ফ্যাক্টর মাথায় রেখে বিক্রমে বেশি করে শক অ্যাবজরব্যান্ট দেওয়া হয়েছে।’
তবে চাঁদের উপরের পরিবেশ এবং সেই পরিবেশে ল্যান্ডিং যে কতটা কঠিন তা জানাতে ভোলেননি মহাকাশবিজ্ঞানীরা। তাঁরা এই প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, ‘যেখানে ল্যান্ডিং হবে, সেখানকার তাপমাত্রা মাইনাস ২০৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অকল্পনীয় ওই ঠান্ডায় ধাতু অত্যন্ত ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। এই সব ভেবেই বিক্রমের দেহ তৈরি করা হয়েছে অ্যাডভান্সড কম্পোজ়িট টেকনোলজি ব্যবহার করে। দেহটা তৈরি বিশেষ রকমের পলিমার দিয়ে। গবেষণাগারে তরল অক্সিজেন ব্যবহার করে তাপমাত্রা কৃত্রিম ভাবে মাইনাস ২১৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামিয়ে আনা হয়েছিল। সেই পরিবেশে দীর্ঘদিন পরীক্ষা চলেছে।’
এদিকে চন্দ্রযান-৩ -র চাঁদে অবতরণের দিন নিয়ে সোমবারই ইসরোর চেয়ারম্যান এস সোমনাথের সঙ্গে বৈঠক করেছেন কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং। চন্দ্রযান-৩ -র প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে জানান ইসরোর চেয়ারম্যান। আগামী ২৩ অগাস্ট চন্দ্রযান-৩ -র চাঁদে অবতরণের সম্ভাবনা নিয়ে ইসরোর প্রশংসাও করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। চন্দ্রযান-৩ -র সফট ল্যান্ডিং হবে এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ভারত এক ইতিহাস গড়বে বলে আশাবাদী জিতেন্দ্র সিং।
প্রসঙ্গত, ২৩ অগাস্ট সন্ধ্যা ৬টা ৪ মিনিট নাগাদ চাঁদে অবতরণের কথা রয়েছে চন্দ্রযান-৩-র। সেটি বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে সরাসরি সম্প্রচারিত করবে ইসরো। বিকাল ৫টা ২৭ মিনিট থেকেই ইসরো ওয়েবসাইট, ইউটিউব চ্যানেল, ফেসবুক এবং ডিডি ন্যাশনাল টিভি-তে চন্দ্রযান-৩-র অবতরণ প্রক্রিয়া এবং অবতরণ সরাসরি দেখা যাবে।