অল ইংল্যান্ড চ্যাম্পিয়নশিপে লক্ষ্য সেনের লক্ষ্যভেদের রহস্য কী? লাইন জাজমেন্ট, প্লেসমেন্ট, কাউন্টার অ্যাটাক আর আগ্রাসনের ঝলক। ব্যাডমিন্টন যাঁরা বোঝেন, তাঁরা খুব ভালো করে জানেন, গতি, রিফ্লেক্স, ফিরে আসার বাইরেও আরও একটা জিনিস থাকে —- প্রতিপক্ষকে চমকে দেওয়া। যে স্ট্র্যাটেজি নিয়েই নামুন না কেন, পাল্টা অঙ্কে চাপে ফেলে দেওয়া বিপক্ষকে। কুড়ি বছরের লক্ষ্য় সেনের হঠাৎ সাফল্য যদি ব্যাখ্যা করতে হয়, এই রকম কিছু বিশেষণ তুলে ধরতে হবে। আর বলতে হবে, তাঁর ধারাবাহিকতার কথা। বিশ্ব মিট, ইন্ডিয়ান ওপেন, জার্মান ওপেন ধরলে —- লক্ষ্য দেশে-বিদেশে যত খেলেছেন তত চমকে দিয়েছেন। সেই চমক যেন অল ইংল্যান্ডেও রীতিমতো বহাল। ব্যাডমিন্টন আজকাল তারকার গল্প বলে না। বরং শোনায় তারুণ্যের জয়গান। লক্ষ্য সেনের মতো।
২১ কি অল ইংল্যান্ডে ভারতীয়দের সাফল্য পাওয়ার ম্যাজিক ফিগার? ১৯৮০ সালে প্রকাশ পাডুকোন প্রথম ভারতীয় হিসেবে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন অল ইংল্যান্ড ওপেন। তার ঠিক ২১ বছর পর, ২০০১ সালে পুল্লেলা গোপীচাঁদের হাতে উঠেছিল খেতাব। এ বারও সেই ২১ বছর পরের গল্প। তবে তৃপ্তি বোধহয় বাংলাকেও ছুঁয়ে থাকল। হোন না প্রবাসী, বাঙালি তো। সেই লক্ষ্যই কিনা ২১ বছর পর অল ইংল্যান্ডের ফাইনালে পৌঁছে ইতিহাস তৈরি করলেন।
গত বার অল ইংল্যান্ডে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন মালেশিয়ার লি জি জিয়া। কঠিন প্রতিপক্ষ সন্দেহ নেই। কিন্তু লক্ষ্যে যিনি অবিচল, তিনি কী আর কোর্টের উল্টোদিকে কে, সে সব দেখেন? পিভি সিন্ধু, কিদাম্বি শ্রীকান্ত, সাইনা নেহওয়াল, এইচ এস প্রণয়রা যখন পর পর হেরে ছিটকে যাচ্ছেন, লক্ষ্য তখন মেতেছেন অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন কিংবা ব়্যাঙ্কিংয়ে তাঁর থেকে অনেক এগিয়ে থাকা শাটলারদের হারানোর দুরন্ত খেলায়। লি জি জিয়া আসলে লক্ষ্যর আগ্রাসনের শিকার। অল ইংল্যান্ড ওপেনের ফাইনাল আসলে, উত্তরাখণ্ডের ছেলের অধ্যাবসায়ের ফসল।
অল ইংল্যান্ডের সেমিফাইনালে জি জিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম গেমটা ২১-১৩ জিতেছিলেন। দ্বিতীয় গেমে দুরন্ত ফিরে আসেন জি জিয়া। জিতে নেন ২১-১২। তৃতীয় গেমটা যেন রোমাঞ্চে ভরপুর। যখন কোর্ট বদল করলেন দুই প্লেয়ার, তখন ৯-১১ পিছিয়ে লক্ষ্য।একটাই সমস্যা দেখা যাচ্ছিল লক্ষ্যর, লম্বা ব়্যালিগুলো কাজে লাগাতে পারলেন না। কিন্তু শেষ পর্বের লক্ষ্যর যেন অনেক ঠান্ডা মাথা। যেন নিজেকে ফোকাসড রাখতে শিখে গিয়েছেন তিনি। আর সেই সেখান থেকেই দুরন্ত ফিরে এলেন ম্যাচে। অবিশ্বাস্য ২১-১৯ জিতে। ৭৫ মিনিটের ম্যাচে হেভিওয়েট জি জিয়াকে হারিয়ে দিলেন তিনি।
গত ছ’মাসে লক্ষ্য যেন নিজেকে পাল্টে ফেলেছেন অনেকটাই। সাফল্য পেতে গেলে যে পরিকল্পনা দরকার, নিজেকে ফোকাসড রাখা দরকার আর ঠিক সময় জ্বলে উঠতে হয়, সেটা যেন বুঝে গিয়েছেন ২০ বছরের তরুণ। অল ইংল্যান্ড ওপেনে লক্ষ্য চ্যাম্পিয়ন হতে পারলে ইতিহাসে পাকাপাকি জায়গা করে নেবেন। আর সেই সঙ্গে, কিদাম্বি শ্রীকান্ত, এইস এস প্রণয়দের পরবর্তী প্রজন্মের সবচেয়ে সফল শাটলার হিসেবে ধরতে হবে তাঁকে। এই লক্ষ্যর হাত ধরে অলিম্পিকের আসর থেকেও এ বার পদকের স্বপ্ন দেখা শুরু বাংলার, ভারতের।