লক্ষ্মীদেবী কন্যা রূপে পূজিত হন আরামবাগের ঘোষ পরিবারে

আজ থেকে প্রায় ৭০/৮০ বছর আগের কথা। তখন এই এলাকা ছিল ঘন জঙ্গলে ভরা। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন একটি এলাকা যা বন্যা কবলিত। হুগলির আরামবাগের সাহাপুর। প্রত্যন্ত একটি গ্রাম। সাবেকি সেই রাজা রাম মোহন রায় সরণির পাশে এই গ্রাম। যে গ্রামে তৎকালীন সমাজ ছিল অত্যন্ত রক্ষণশীল। পরিবারে কন্যারা ছিল ব্রাত্য। তারা যেন উপেক্ষিত, অবহেলিত ও নিপীড়িত ছিল সমাজে। বোঝা হয়ে থাকত। কিন্তু সাহাপুরের ঘোষ পরিবার ছিল সেই সময়ের ব্যতিক্রমী একটি উদার পরিবার। যে পরিবারে কন্যাদের সম্মান করাই ছিল মূল ব্রত। পরিবারে কোনও কন্যা সন্তান ছিল না।

পরিবারের তৎকালীন কর্তা কৃষ্ণচন্দ্র ঘোষের পর পর আট পুত্র জন্ম নিয়েছিল। কিন্তু কোনও কন্যা সন্তান হয়নি। তাই কন্যা সন্তান না হওয়ার জন্য পরিবারে সুখ ছিল না। অথচ এই পরিবারের কর্তা ছিলেন অত্যন্ত ধার্মিক, ধর্মপরায়ণ নিষ্ঠাবান সৎ একজন ব্যক্তি। তাই কন্যা সন্তান যাতে হয় তার জন্য কাতর আবেদন ছিল। তাই মা লক্ষ্মী তাকে স্বপ্ন দিয়েছিলেন। স্বপ্নে তিনি বলেছিলেন, আমাকে প্রতিষ্ঠা কর। পুজো কর। তোর মনস্কামনা পূরণ হবে। তোদের বংশে আমি আসছি কন্যা রূপেই। অলৌকিক ভাবেই তাঁর বন্ধু বান্ধবেরা লক্ষ্মী প্রতিমা দিয়ে যান। আর দেবী লক্ষ্মীকে কন্যা রূপে পুজো করেন কৃষ্ণ। এর পরেই তাঁর কন্যা সন্তান হয়। কিন্তু সেই কন্যা সন্তান বেশি দিন এই ধরায় থাকেননি। কিন্তু মা লক্ষ্মী রয়েই গেলেন কন্যা রূপে। সেই থেকে আজও ঘোষ পরিবারে মা লক্ষ্মী পূজিত হন। অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে দুর্গা পুজোর মতই চার দিন পুজো হয়। পুজো কটা দিন শুধু এই পরিবারেই নয়, গোটা গ্রামের মানুষ যোগ দেন। বিশেষত মহিলারা এই পুজোয় অংশগ্রহণ করেন।

মূলতঃ এই পুজোর সব টকুই করেন মহিলারাই। এক সঙ্গে খাওয়া দাওয়া, হই-হুল্লোড়, খেলা, প্রতিযোগিতা, অনুষ্ঠান সব মিলিয়ে এক অনাবিল আনন্দে মাতোয়ারা হন ঘোষ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাহাপুরের বাসিন্দারা।

এই পরিবারেরই বর্তমান সদস্যা স্নিতি ঘোষ বলেন, আমরা অত্যন্ত ভাগ্যবতী যে আমি এই পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেছি। আমাদের সঙ্গেই আমাদের বংশের কন্যা অর্থাৎ মা লক্ষ্মী অধিষ্ঠান করে আছেন। পুজোর সময় যখন হোম যজ্ঞ হয় তখন যে আবহাওয়া দেখি তখন যেন মনে হয় স্বয়ং মা এসে বসে আছেন। মায়ের মুখ উজ্জ্বল, চকচকে দীপ্ত। মা যেন আমাদের বলছেন, আমি আছি। আমি এসেছি। কোনও বিপদ তোদের হবে না। অপর দিকে এই পরিবারের বধূ রমা ঘোষ আছেন তেত্রিশ বছর। আর অপর বধূ বর্ণালি ঘোষ আছেন ২৮ বছর। দুই বধূই কিন্তু এক সঙ্গে মিলে মিশে মায়ের পুজোর আয়োজন করেন। মায়ের উপলব্ধি তাঁদের কাছে এক অপরূপ পাওনা। তারা জানালেন, যতদিন এই পরিবারে থাকব ততদিনই মায়ের পুজো করে যাব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nine − 8 =