রাজীব মুখোপাধ্যায়
হাওড়া: ২০০ বছরের বেশি সময় ধরে হাওড়া আন্দুল এলাকার রথতলায় কুণ্ডু চৌধুরীদের রথের মহিমা প্রচলিত রয়েছে। স্বকীয়তা, ঐতিহ্য ও আঙ্গিকে এই পরিবারের দুটো রথ সম্পূর্ণ ভিন্ন। যা কিনা পরম্পরা ছাড়াও অভিনবত্বে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। দুই ভাইয়ের জোড়া রথযাত্রা আজও একই ভাবে চলে আসছে পরবর্তী প্রজন্মের হাত ধরে।
২০৭ বছর আগে সম্পত্তি ভাগাভাগি হয়ে যায় কুণ্ডু চৌধুরী বংশের উত্তর পুরুষ দাদা গোকুল ও ভাই রমাকান্তর মধ্যে। সম্পত্তি ভাগ হলেও ভাগ হননি ইষ্ট দেবতা। তাই শুরু থেকেই রথের দিন বড় ছেলে গোকুলের রথে চড়েন শ্রী জগন্নাথদেব ও ছোট ভাই রমাকান্তের তৈরি রথে বিরাজমান থাকেন বংশের কুল দেবতা লক্ষ্মী জনার্দন। সেই থেকে আজও এভাবেই আন্দুলের রথতলা থেকে রথযাত্রার দিন বিকালে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা সহকারে জোড়া রথ বের হয় কুণ্ডু চৌধুরী পরিবারের।
শুধু তাই নয় রথের দিন জোড়া রথে উপবিষ্ট হয়ে ভক্ত ও ভগবান একাকার হয়ে যান। এই বাড়ির রথের দিনেই জোড়া রথ এলাকা পরিক্রমা করে পৌঁছয় তালপুকুর ধার পর্যন্ত। যদিও আগে এই জোড়া রথ পৌঁছত খটির পোলের নীচ পর্যন্ত। সেটাই ছিল পূর্বের মাসির বাড়ি। তবে সেই স্থান বহু বছর ধরে অব্যবহারযোগ্য হয়ে ওঠার কারণে সেখানে আর জোড়া রথ নিয়ে হাওয়া হয় না বলেই জানান কুণ্ডু চৌধুরী বংশ ও সেবায়েত কমিটির অন্যতম সদস্য অমিতাভ কুণ্ডু চৌধুরী। তিনি জানান, ২০০ বছর ধরে এই জোড়া রথ বের হয় রথযাত্রার বিকালে। প্রথমে কাঠের তৈরি দুটি বিশাল রথ ছিল। পরবর্তীকালে লোহার তৈরি রথ নিয়েই যাত্রা করা হয়।
তিনি বলেন, ‘বংশের উত্তর পুরুষ গোকুল ও রমাকান্ত কুণ্ডু চৌধুরীর হাত ধরেইz এই বংশের রথযাত্রার সূত্রপাত। বড় ভাই গোকুলের রথে আজও বিরাজমান হন শ্রী জগন্নাথ দেব। একইভাবে ছোট ভাই রমাকান্তের রথে আসীন থাকেন বংশের কুলদেবতা লক্ষ্মী-জনার্দন। পূর্বে রথতলা থেকে রথ বেরিয়ে মাসির বাড়ি গেলেও সেই স্থান ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ার দরুন এখন আর সেখানে না গিয়ে তালতলা পর্যন্ত দুটি রথই পৌঁছয়। সেখানে দুটি রথ রেখে দেওয়া হয়।’ যদিও পরিবারের সদস্যদের কোলে চড়েই রথের দিনেই বাড়িতে ফিরে আসেন শ্রী জগন্নাথ দেব ও শ্রী লক্ষ্মী-জনার্দন। উল্টো রথের দিন পরিবারের সদস্যদের কোলে চড়েই ফের বাড়ি থেকে বেরিয়ে তালতলাতে রথে চড়ে বসেন শ্রী জগন্নাথ দেব ও লক্ষ্মী-জনার্দন। এটাই বর্তমানে আন্দুল কুণ্ডু চৌধুরী বংশের বিশেষ বৈচিত্র। যা সম্পূর্ণভাবে স্বকীয়তায় আলাদা করেছে আন্দুলের এই রথযাত্রাকে। অমিতাভ বাবু আরও জানান আন্দুল পার্শ্ববর্তী দুইল্যা, পুইল্যা, জগাছা সহ বিভিন্ন ভক্তের সমাগম হয় রথের দিনে। রথের দিন সকালে শ্রী জগন্নাথদেবের মন্দিরে পূজা সম্পূর্ণ করে পূজার বিশেষ উপাচারে দুটি রথকে দেবতার উদ্দেশ্যে নিবেদন করা হয়। এরপর হরি সংকীর্তন গানের মাধ্যমে রথযাত্রার বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয় এই রথতলা থেকেই। রাস্তায় যানবাহন সহ আগত দর্শণার্থীদের ভিড় ব্যবস্থাপনায় সাহায্য করে স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসন।