কুড়মি ও আদিবাসী ভোট বদলে দেয় ঝাড়গ্রাম কেন্দ্রের ছবি

স্বাধীনতার পর ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত ঝাড়গ্রাম কেন্দ্রটি ছিল কংগ্রেসের গড়। এরপর কংগ্রেসের হাত থেকে ১৯৭৭ সালের পর এই কেন্দ্রটি বামেদের দুর্গে পরিণত হয়। বাম আমলে এখানে সিপিএম প্রার্থী যদুনাথ কিস্কু, মতিলাল হাঁসদা, রূপচাঁদ মুর্মু, পুলিনবিহারী বাস্কেরা পরপর সাতবার জয়ী হন। এরপর ২০১৪ সালেতৃণমূল প্রার্থীর কাছে সিপিএম প্রার্থী হেরে গেলে কেন্দ্রটি বামেদের হাতছাড়া হয়। তৃণমূল প্রার্থী উমা সরেনের কাছে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ ভোটের ব্যবধানে সিপিএম প্রার্থী পুলিনবিহারী বাস্কে হেরে যান। তারপর থেকে বামেরা এই কেন্দ্রে আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। দীর্ঘদিনের বাম জমানা এখন শুধুই অতীত। এই লোকসভা কেন্দ্র বিস্তৃত রয়েছে তিনটি জেলায়। যে সাতটি বিধানসভা কেন্দ্র নিয়ে ঝাড়গ্রাম লোকসভা কেন্দ্রটি তৈরি হয়েছে সেগুলি হল-পুরুলিয়া জেলার বান্দোয়ান, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গড়বেতা ও শালবনি এবং ঝাড়গ্রাম জেলার বিনপুর, গোপীবল্লভপুর, ঝাড়গাম এবং নয়াগ্রাম। এই সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রেই গত বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থীরা প্রত্যেকেই গড়ে ৩০ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন। গত লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী বীরবাহার সরেনকে হারিয়ে ঝাড়গ্রাম কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী কুনার হেমরম জয়ী হয়েছিলেন। কিন্তু তার কাজ করা নিয়ে এলাকায় বেশ বিতর্ক রয়েছে। তা সত্ত্বেও এখানে তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপি প্রার্থী সমানে সমানে টক্কর হবে। আগামী ২৫ মে এই কেন্দ্রে নির্বাচন হবে।
ফলে ভোটারদের মন পাওয়ার জন্য রাত দিন সমান করে প্রচার চালাচ্ছেন বিজেপি প্রার্থী ডাক্তার প্রণত টুডু এবং তৃণমূল প্রার্থী কালীপদ সরেন। সিপিএম প্রার্থী সোনামণি টুডুও প্রচারের ময়দানে রয়েছেন। বামেদের হারিয়ে যাওয়া ভোট উদ্ধারের চেষ্টায় রয়েছেন তিনি।

ঝাড়গ্রাম লোকসভা কেন্দ্রে ১৬ লক্ষের বেশি ভোটার রয়েছে। যার মধ্যে প্রায় ৩৫ শতাংশ কুড়মি ভোট। আদিবাসী এবং অন্যান্য তপসিলি জাতি-উপজাতিদের ভোট রয়েছে ৪০ শতাংশ। নয়াগ্রাম বিনপুর গোপীবল্লভপুর ঝাড়গ্রাম বান্দোয়ান এবং শালবনি বিধানসভা এলাকায় কুড়মি এবং আদিবাসী ভোটারের সংখ্যা অধিক। সুতরাং ভোটের ফলাফলে নির্ণায়কের ভূমিকা পালন করে আদিবাসী এবং কুড়মি সম্প্রদায়ের ভোটাররা। তাদের ভোটের আশাতেই তাকিয়ে থাকেন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা। কিন্তু এবার কুড়মিরা তাদের নিজেদের প্রার্থী দাঁড় করানোয় তৃণমূল বিজেপি এবং সিপিএম বেশ সমস্যায় পড়েছে। কুড়মিরা তাদের সংগঠনের লোকজনদের নির্দেশ দিয়েছেন কুড়মিদের ৩৫ শতাংশ ভোট যেন রাজনৈতিক দলগুলি না পায়। ফলে রাজনৈতিক দলগুলির কোনও অঙ্কই মিলছে না। এজন্য তলায় তলায় আদিবাসী জনজাতি এবং কুড়মিদের মধ্যে ফাটল ধরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। কুড়মিদের ভেতরে ভাঙন ধরাতে অবশ্য অস্ত্র খুঁজে পেয়েছে তৃণমূল বিজেপি এবং সিপিএম। কারণ কুড়মিদের ভোটের দাবিদার রয়েছেন দু’জন প্রার্থী। একজন বরুণ মাহাতো এবং অন্যজন হলেন সূর্য সিং বেসরা। কুড়মিদের দুটি গোষ্ঠী পৃথক পৃথকভাবে এদের দু’জনকে দাঁড় করিয়েছে। ফলে কুড়মিদের মধ্যেই এই গোষ্ঠী কোন্দলে বিরক্ত কুড়মিদেরই একটি বড় অংশ। তৃণমূল বিজেপি এবং সিপিএমের টার্গেট এই অংশটিকেই। এইসব এলাকার জনজাতি মানুষেরা মূলত কৃষিজীবি।

বান্দোয়ান, শালবনি বিনপুর নয়াগ্রাম এবং গোপীবল্লভপুর বিধানসভা এলাকায় কোনও শিল্প গড়ে উঠেনি। ফলে মানুষের হাতে পয়সা নেই। তাই, সমস্যারও শেষ নেই। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না থাকায় শিক্ষিত বেকার যুবকেরা দিশাহারা। স্ত্রী ছেলে মেয়ে এবং বৃদ্ধ বাবা মাকে ঘরে রেখে তারা চলে গেছে ভিন রাজ্যে কাজের সন্ধানে। বারবার ভোট দিয়ে যখন অর্থনৈতিকভাবে সমাজের কোনো পরিবর্তনই হচ্ছে না তখন আর ভোট দেওয়ার গুরুত্ব থাকে কতখানি? তাই ভোটের আর মাত্র ১০-১২ দিন বাকি থাকলেও জঙ্গলমহলের এইসব বিধানসভা এলাকায় গুলিতে মানুষের তেমন কোনো উৎসাহ নেই বললেই চলে। এইসব এলাকার মূল ইস্যু হল অনুন্নয়ন এবং বেকারত্ব। একটার পর একটা সরকার আসে নতুন নতুন বিধায়ক সাংসদ হন কিন্তু এতদিনেও এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা মেটানো হয়নি। এছাড়াও গ্রাম উন্নয়নে দুর্নীতির ভুরি ভুরি অভিযোগ তো রয়েইছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seventeen + 10 =