নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে পেশ করা চার্জশিট জমা দেওযা হয়েছে ইডি-র তরফ থেকে।এই ১১৩ পাতার চার্জশিটে তদন্তকারী আধিকারিকদের দাবি, জেলবন্দি প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও ধৃত হুগলির প্রোমোটার অয়ন শীলের মধ্যে সেতুবন্ধনের কাজ করতেন কুন্তল ঘোষ।এরই পাশাপাশি ইডি-র তরফ থেকে এও দাবি করা হয় যে, ২০১২ ও ২০১৪ সালের টেট পরীক্ষার্থীদের অবৈধভাবে চাকরি দেওয়ার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও অয়ন শীাল এবং কুন্তলের। পাশাপাশি নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে একটা চাকরির জন্য টাকা উড়েছে দেদার। আদালতে জমা দেওয়া চার্জশিটে ইডির দাবি, হুগলির প্রোমোটার অয়ন শীল বিভিন্ন এজেন্টের থেকে মোট ৪৫ কোটি টাকা তুলেছিলেন। এদিকে এই অয়ন আবার আরও একবহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হিসেবেই পরিচিত।
এখানেই উঠে এসেছে অয়নের প্রসঙ্গও। চার্জশিটে ইডি জানিয়েছে, শান্তনুরও এই মামলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। ইডির দাবি, শান্তনুর নির্দেশেই কুন্তলকে ১৯ কোটি ২ লাখ ১০ হাজার টাকা দেন নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে ধৃত তাপস মণ্ডল। এদিকে কুন্তলকে রাজনৈতিক সুবিধা পাইয়ে দিতে তাঁর থেকে ১ কোটি টাকা নেন শান্তনু।
এদিকে আদালতকে ইডি এও জানিয়েছে, জেরায় অয়ন শীল স্বীকার করেছেন ১৮ কোটি টাকা তিনি নিজের কাছে রেখেছিলেন। কুন্তল ঘোষের নির্দেশে ২৬ কোটি টাকা সন্তু গঙ্গোপাধ্যায় নামে ওই ব্যক্তিকে দিয়েছেন তিনি। সন্তু পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বলেই জানা গিয়েছে। সম্প্রতি তাঁর মহেশতলার ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালায় সিবিআই।
বিশেষ আদালতে জমা দেওয়া ইডির চার্জশিটে পাঁচটি সংস্থার নাম রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। সেই তালিকায় এবিসএস ইনফোজোন, ইভান কনস্ট্রাকশনের মতো সংস্থার নাম রয়েছে। এই সংস্থাগুলির মাধ্যমে নিয়োগ দুর্নীতির কালো টাকা সাদা করা হয়েছে বলে চার্জশিটে দাবি করেছে ইডি। একইসঙ্গে চার্জশিটে ইডি-র তরফ থেকে এও জানানো হয়েছে যে, এই মামলার তদন্তে অয়ন শীলের বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির হদিশ পাওয়া গিয়েছে। অয়নের স্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ১০ কোটি ৪ লাখ টাকা ও অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এর পাশাপাশি অয়নের ৬৪ লাখের গাড়ি ও ২৩ লাখের শেয়ার রয়েছে। এছাড়াও এবিএস টাওয়ার নাম একটি বহুতলে ২০ টি ফ্ল্যাট রয়েছে। তবে অয়নের সঙ্গে এবার ইডির নজরে অয়ন ঘনিষ্ঠ শ্বেতা চক্রবর্তীও। তাঁর বেলঘড়িয়ার ফ্ল্যাট ও গাড়ি বাজেয়াপ্ত করা হতে পারে বলেই জানা গিয়েছে।
পাশাপাশি ইডি-রএ ই চার্জশিটে উঠে এসেছে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র তথা ‘কালীঘাটের কাকু’র নামও।কারণ এই সুজয় ভদ্র ওরফে ‘কালীঘাটের কাকু’-ই নাকি ঠকিয়ে নিজের সংস্থায় টাকা ঢুকিয়ে নিয়েছিলেন শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়। ইডির চার্জশিটে এই প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, চন্দননগরে শান্তনুর দীপ ডেভেলপার্সের তৈরি প্রকল্পে ১২০০ বর্গফুট জায়গা কিনতে রাজি ছিলেন সুজয়কৃষ্ণ। এর জন্য তিনি ৪০ লক্ষ টাকা শান্তনুকে অগ্রিমও দেন। অভিযোগ, সে টাকা শান্তনু ফেরাননি। উল্টে নিজেরই এক সংস্থা থেকে অন্য সংস্থায় সে টাকা ঢুকিয়ে দেন। আর এই টাকা না ফেরানোর পরিকল্পনা প্রথম থেকেই ছিল শান্তনুর। এরপরই শান্তনুর স্ত্রী যে সংস্থার ডিরেক্টর সেই ইভান কনট্রাড প্রাইভেট লিমিটেডের নামে ডিপোজিট মানি ছাড়াই লোন নেন। লোন নেন দীপ ডেভেলপার্সের থেকে। অতিরিক্ত ১০ লক্ষ টাকা যুক্ত করে মোট ৫০ লক্ষ টাকা ঋণ নেয় ইভান কনট্রাড। এদিকে সেই প্রজেক্টও হয়নি, লোনের টাকাও আর ফেরত পাননি সুজয় ভদ্র। একইসঙ্গে ইডির চার্জশিটে উল্লেখ রয়েছে, প্রাইমারি ও আপার প্রাইমারিতে নিয়োগের কথা বলে ১ কোটি ৩৯ লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন শান্তনু। পঞ্চায়েতের উন্নয়নমূলক কাজেও শান্তনুর ভূমিকা প্রশ্নের মুখে। বলাগড়ে শ্রীপুর গ্রামপঞ্চায়েতের বরাত পেতে নিজের জারিজুরি খাটিয়েছিলেন শান্তনু। এর আগে দিনমজুরদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে নিয়োগ দুর্নীতির টাকা লুকানোর অভিযোগ ওঠে শান্তনুর বিরুদ্ধে। ইডি সূত্রে জানা গিয়েছিল, দিনমজুরদের দিয়ে জোর করে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলিয়েছিলেন শান্তনু। জোর করে চেকবইয়ে সই করিয়ে নিয়ে দিনমজুরদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে দুর্নীতির টাকা লুকিয়ে রাখতেন বলে ইডি সূত্রে জানা যায়।