বিচারপতিকে চেয়ার ছেড়ে রাজনীতিতে আসার আহ্বান কুণালের

‘বিচারপতির আসনের অপব্যবহার করা হচ্ছে’, এমনটা জানিয়েই তৃণমূলের মুখপাত্র বৃহস্পতিবার বেলা ৩ টা ১০ মিনিট নাগাদ এক টুইট করতে দেখা গেল কুণাল ঘোষকে। টুইটে কুণাল এও লেখেন, ‘যেভাবে কোনও ক্ষেত্রে বিচারপতির আসনের অপব্যবহার করে রাজনীতি করা হচ্ছে, বিরোধীদের অক্সিজেন দিতে নিজের উইশ লিস্ট বলা হচ্ছে, নিজেকে ব্যক্তি প্রচারে হিরো সাজানোর চেষ্টা চলছে, তাতে বিচারব্যবস্থার সম্মান ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। ওই চেয়ারটা ছেড়ে সরাসরি রাজনীতিতে আসুন।’ এখানে কিন্তু একটা কথা বলতেই হবে যে, এদিনের এই টুইটে কারও নাম করেননি তৃণমূল মুখপাত্র। তবে, রাজনীতি আসার কথা বলে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের দিকেই যে তাঁর তির তা বুঝতে খুব একটা অসুবিধা হয়নি কারও।
কারণ, দলীয় নেতাদের নাম বলার জন্য চাপ দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় এজেন্সির তদন্তকারীরা, কিছুদিন আগে এমনই দাবি করেছিলেন নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত কুন্তল ঘোষ। সম্প্রতি তিনি হেস্টিংস থানায় এবং আলিপুর সিবিআই বিশেষ আদালতে অভিযোগ চিঠি জমা দিয়েছিলেন। পালটা কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়ে সেই চিঠি দেখতে চায় ইডি। এই মামলা ওঠে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বেঞ্চে। তিনি বৃহস্পতিবার বলেন, ‘গত ২৯ মার্চ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় একটি জনসভা করেছিলেন। সেখানে তিনি একটি মন্তব্য করেন যে তাঁর নাম বলার জন্য জোর করা হচ্ছে। তাঁর এই মন্তব্যের সঙ্গে কুন্তলের চিঠির মধ্যে মিল রয়েছে।’ তাঁর পর্যবেক্ষণ ছিল, ‘প্রয়োজনে শুধুমাত্র এই চিঠি সংক্রান্ত মামলায় প্রেক্ষিতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কুন্তল ঘোষকে পাশাপাশি বসিয়ে জেরা করতে পারে ইডি-সিবিআই। এই ঘটনার তদন্তে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। কুন্তলের এই চিঠি প্রসঙ্গে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘এটি অত্যন্ত কাঁচা হাতে তৈরি গল্প।’
এরপরই টুইটে সরব হতে দেখা যায় তৃণমূল মুখপাত্রকে।
তবে এই টুইট করার পর একটি সাংবাদিক বৈঠকও করেন কুণাল। সেখানে কুণাল ঘোষ সরাসরি বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে নিশানা করেন। বলেন, ‘বিজেপি, কংগ্রেস, বামেদের কথাই যখন বলবেন, তখন চেয়ারে বসে কেন বলবেন।‘ সঙ্গে এও বলেন, ‘আমি কুন্তলের পক্ষে কথা বলব না। তবে যতক্ষণ তিনি আন্ডার ট্রায়াল বন্দি রয়েছেন আইনি পদ্ধতিতে অভিযোগ জানাতে পারেন। ফলে এক্তিয়ারের বাইরে গিয়ে কাজ করছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।’
এরই পাশাপাশি কুণাল এদিন এও জানান, ‘অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় আজ যা বলেছেন তা আইন বর্হিভূত। তিনি এই কথা অর্ডারে লেখেননি কারণ তা লিখলে উচ্চ আদালতে খারিজ হয়ে যেত। ঠাণ্ডা মাথায় অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বিজেপি, কংগ্রেস, বামেদের হয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের চরিত্র হনন করছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় রাজনৈতিক দলের ক্যাডারে পরিণত হয়েছেন। মানহানির মামলা করলে কোর্টে দাঁড়িয়ে ফেস করব। তিনি এক্তিয়ার বর্হিভূত কথা বলেছেন।’ পাশাপাশি কুণাল এদিন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে বিদ্ধ করে এও জানান, ‘বিরোধীদের মধ্যে হিরো হতেই এই ধরনের মন্তব্য করছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।’
এখানেই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে বিদ্ধ করা শেষ করেননি কুণাল। আরও বলেন, ‘ক্ষমতা থাকলে বাম জামানার নিয়োগুলো যুক্ত করে দেখানোর নির্দেশ দিন। আপনি শ্রদ্ধেয় মানুষ। আমরা বিচারব্যবস্থাকে সম্মান করি। কিন্তু যেভাবে আপনি রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করছেন তা সঠিক নয়। আশা করি আমাকে বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পর্কযুক্তরা ভুল বুঝবেন না।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × four =