কৃষ্ণ-কালীর ভোগে ইলিশ, সুরে বাঁশি

নিজস্ব প্রতিবেদন, হরিপাল: শ্রীপতিপুরে কৃষ্ণরূপী কালীমূর্তি পুজো করা হয়। নেই পশুবলির কোনও প্রচলন। দেবীকে ভোগ হিসেবে দেওয়া হয় ইলিশ মাছ। দেবী তৃপ্ত হন বাঁশির সুরে।
বাংলা ১৩৫৭ বঙ্গাধে বটকৃষ্ণ অধিকারী স্বপ্নাদেশ পেয়ে দেবীর পুজো শুরু করেছিলেন। কুলীন বৈষ্ণব বাড়ির সন্তান ছিলেন বটকৃষ্ণ। সংসারের প্রতি মন ছিল না তাঁর। এক সাধকের কাছে শ্মশানে গুরু দীক্ষা নিয়েছিলেন বটকৃষ্ণ। ছেলের সংসারে মন নেই বুঝতে পেরে তড়িঘড়ি বিয়ে দিয়ে দেন তাঁর মা-বাবা। কিন্তু গোপনে মা কালীর আরাধনা চালিয়ে যেতে থাকেন বটকৃষ্ণ। আজ থেকে ৭৩ বছর আগে দেবীকে প্রতিষ্ঠা করে পুজো শুরু করেন তিনি।
এখানকার মা কালী মূর্তির গায়ের রং সবুজ। বটকৃষ্ণবাবু চাষবাসের পাশাপাশি শ্মশানে গিয়ে বাঁশি বাজাতেন। পরে আস্তে আস্তে তিনি আধ্যাত্মিক জগতের দিকে পা বাড়াতে থাকেন। শুরু করেন শ্মশান সাধনা। পরে সাধনায় সিদ্ধিলাভ করে লোকচক্ষুর আড়ালে নিজের ঘরে ঘটে মা কালীর আরাধনা করতে শুরু করেন। পরে দেবীর স্বপ্নাদেশ পান ঘটপুজো বন্ধ করে মূর্তি পুজো করার। বৈষ্ণব হওয়ার কারণে মূর্তি পুজোয় ছিল পরিবারের তীব্র আপত্তি। ফের কৃষ্ণ ও কালীর সংমিশ্রণে তৈরি মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে পুজো করার জন্য স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন বটকৃষ্ণ। এরপরই ১৩৫৭ বঙ্গাধে রটন্তী চতুর্দশীর দিন থেকে এই পুজোর শুরু। কৃষ্ণকালী রূপের দেবীকে প্রতিদিন শোনানো হয় বাঁশির সুরেলা শধ। বিশেষ বাম আচারে তন্ত্রমতে পুজো করা হয় দেবীর।
পরিবারের বর্তমান সদস্য বলেন, ‘অধিকারী পরিবারের কাছে কৃষ্ণ ও কালী, দুইয়ে মিলে এক হয়ে গিয়েছে। আজ থেকে ৭৩ বছর আগে বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বী বটকৃষ্ণ অধিকারী এই পুজোর প্রচলন করেন। দেবীর গলায় কণ্ঠির মালা রয়েছে, কপালে আঁকা বৈষ্ণব তিলক। পুজোতে কোনওরকম বলি হয় না। দেবীকে ইলিশ মাছ দিয়ে ভোগ দেওয়া হয়।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 − 1 =