অঘোষিত হলেও বুধবার বাম-কংগ্রেসের মিলন দেখল কলকাতাবাসী

২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের প্রক্ষেপটকে ফের উস্কে দিল ২০২৩-এর ২৯ এর মার্চের অপরাহ্ন। কারণ, ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগেই হাতে হাত মিলিয়েছিল বাম-কংগ্রেস। বুধবার তারই রিপ্লে দেখলেন কলকাতাবাসী। তবে এদিন অঘোষিত ভাবে পায়ে পা মিলিয়ে মিছিলে এগিয়ে যেতে দেখা যায় বাম-কংগ্রেস নেতাদের। পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ইতিহাসে এমন ঘটনা ঘটেনি তৃণমূল ক্ষমতায় আশার আগে। কারণ, বাম নেতা হিসেবে অনিল বিশ্বাস বা জ্যোতি বসু সময় ছবিটা ছিল বড্ড আলাদা। তখন হাত শিবিরে সোমেন আর প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির দাপট। পরে নানা ভাবে চিত্রপট বদলেছে বঙ্গ রাজনীতির। সঙ্গে তাল মিলিয়ে বদলেছে বঙ্গের রাজনীতির সামগ্রিক সমীকরণও। তবে তৃণমূল জমানায় এমন একাধিক ইস্যু মাথাচাড়া দিয়েছে যেখানে মতাদর্শের দিক থেকে পরস্পর বিরোধী দুটি দলকে কাছাকাছি এনে হাজির করেছে। নির্বাচনে হয়েছে আসন সমঝোতাও।
তৃণমূলের ‘মহাতারকা’ কর্মসূচির পালটা এবম বিজেপি বিরোধী দল হিসেবেও এদিন কংগ্রেস, সিপিআইএম কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে ভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে। সেইমতো, বামেদের তরফে মৌলালির রামলীলা ময়দান থেকে বামেদের মিছিল ছিল। অন্যদিকে, প্রদেশ কংগ্রেস ভবন থেকে ভিন্ন ইস্যুতে আলাদা মিছিলের আয়োজন করে কংগ্রেস। হঠাৎই পার্কসার্কাস থেকে দুই রাজনৈতিক মতাদর্শগত বিপরীত ধর্মী দলের মিছিল মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। এদিনের এই দুই মিছিলের মিলেমিশে এক হয়ে যাওয়ার ঘটনাকে ‘ঐতিহাসিক’ বলে দাবি করেন সিপিআইএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। এই প্রসঙ্গে সিপিআইএমের রাজ্য সম্পাদক জানান, ‘তৃণমূল এবং বিজেপি সমস্ত মানুষ আজ এক হয়ে হাঁটছে। বিজেপি এবং তৃণমূলের ‘দালাল’ ছাড়া সবাই আজকে পথে নেমে প্রতিবাদ করছে বলে মত তাঁর। কেন্দ্রীয় সরকারের স্বেচ্ছাচারিতার পাশাপাশি রাজ্য সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে এরকম একটি মিছিল কলকাতার বুকে নতুন ইতিহাস তৈরি করল।’
এদিকে হাত শিবিরের তরফ থেকে কংগ্রেস মুখপাত্র আশুতোষ চট্টোপাধ্যায় জানান, ‘গোটা দেশে এবং অন্যান্য জায়গায় গণতন্ত্র ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে। আমরা সকলে একই ইস্যুতে লড়াই করছি। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরীর নেতৃত্বে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে মহা মিছিলের আয়োজন করা হয়।’
এদিকে এদিনের এই কর্মসূচিতে বাম নেতৃত্বের তরফ থেকে তৃণমূল এবং বিজেপি দুই শিবিরকেই নিশানা করা হয়। কেন্দ্রীয় সরকার যেভাবে বাড়ির গ্যাস সিলিন্ডারের দাম বাড়াচ্ছে, তার বিরুদ্ধে যেমন প্রতিবাদ হবে, তেমনই কলকাতায় বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়। পাশাপাশি, নিয়োগ দুর্নীতি থেকে শুরু করে বেকারত্ব বৃদ্ধি নিয়েও সিপিএমের মিছিল থেকে আক্রমণ করা হয় তৃণমূল সরকারকে।
অন্যদিকে, রাহুল গান্ধি ইস্যুতে এদিনের মিছিল থেকে সরব হয় কংগ্রেস। পাশাপাশি, রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে একই সুরে সুর মেলাতে দেখা যায় প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বকে। সব মিলিয়ে একাধিক রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক পতাকায় মুখ ঢাকে কলকাতার রাজপথ। মিছিলের শহর যে কলকাতা তা যেন বহুকাল পর মনে করিয়ে দিল ২০২৩-এর ২৯-এ মার্চের এই অপরাহ্ন। তবে এতে ভোগান্তি পোহাতে হল সেই আম-জনতাকেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 × five =