গত আড়াই সপ্তাহ ধরে খোঁজ মিলছিল না ট্যাংরার বছর ৩৩ -এর যুবক ঝুনু রানার। অবশেষে মঙ্গলবার বামনঘাটার এক খাল থেকে মিলল নিখোঁজ যুবক ঝুনু রানার দেহ। একটি নীল রঙের ড্রামের ভিতর দেহ পুরে জলে ফেলে দেওয়া হয়েছিল বলে পুলিশ সূত্রে খবর। পাশাপাশি পুলিশ সূত্রে এও জানানো হয়েছে, যুবককে খুনের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত মোট চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সূত্রে খবর, গত ৩ তারিখ থেকে নিখোঁজ হন ঝুনু রানা। নিখোঁজের পরেই এই ঘটনায় খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। তদন্তে নেমে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে মূল অভিযুক্ত গোলাম রব্বানিকে দিল্লি থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এছাড়াও দিল্লি থেকে গ্রেপ্তার করা হয় নুর আয়েশাকে। এদিকে এই ঘটনায় যুক্ত থাকার সন্দেহে কলকাতা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় শেখ রিয়াজ এবং ইমরান নামে দুজনকে।
এরপর ধৃত এই চার অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে পুলিশ। দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের পর দেহ লোপাটের যে জায়গার সন্ধান পায়, তার থেকেও প্রায় দশ কিলোমিটার দূর থেকে উদ্ধার হয় ঝুন্নুর দেহ। অভিযুক্তদের বয়ান অনুযায়ী, নীল রঙের একটি ড্রামে ভরে দেহটিকে ফেলা হয়েছিল বাসন্তী হাইওয়ে সংলগ্ন খালে। গত ১৭ তারিখ থেকেই দেহের খোঁজে একটানা তল্লাশি চালাচ্ছিল কলকাতা পুলিশ। এই নীল ড্রামের খোঁজে কলকাতা পুলিশের ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট গ্রুপের সার্চ অপারেশন ছাড়াও ডুবুরি নামিয়েও খালের জলে খোঁজা চলে। এমনকী খালের জলে নীল ড্রামটি কোথায় ভেসে যেতে পারে তার সম্ভাব্য জায়গাও দেখা হয় পুলিশের তরফে। এরপর খাল ধরে সায়েন্স সিটি থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে বামনঘাটা এলাকায় খালের একটি জায়গায় কচুরিপানা ভর্তি থাকায় সেই জায়গায় দেহটি আটকে থাকতে পারে এমনটা অনুমান করা হয় পুলিশের তরফে। সেই মতো সেচ দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করে সেই জায়গার কচুরিপানা সরানোর কাজ শুরু করা হয়। এরপরই সেখান থেকে উদ্ধার হয় ওই নীল ড্রাম। যার মধ্যে খোঁজ মেলে ঝুনু রানার দেহের। এরপরই এদিন-ই দেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়।
তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিকদের প্রাথমিক ধারনা, ব্যক্তিগত শত্রুতার কারণেই ওই যুবককে খুন হতে হয়েছে। কারণ, সূত্রে খবর, গোলাম রব্বানির সঙ্গে ঝুনুর খুব কম সময়েরই পরিচয় ছিল। রব্বানি পুলিশের জেরায় জানিয়েছিল, ব্যক্তিগত ঝামেলা হয় ঝুনুর সঙ্গে। এমনকী পুলিশি জেরার মুখে গোলাম রব্বানি দেহ খালে ফেলে দেওয়ার কথাও স্বীকার করেন। রব্বানির বয়ানের ভিত্তিতেই খালের জলে দেহ খোঁজার প্রচেষ্টা শুরু করেন তদন্তকারী আধিকারিকরা। রব্বানির বয়ানের ভিত্তিতেই পুলিশের প্রাথমিক ধারনা, রাগ থেকেই এমন ঘটনা ঘটেছে।
প্রসঙ্গত, ৩ মার্চ থেকে ঝুনু নিখোঁজ হওয়ার দু’দিন পর ট্যাংরা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ঝুনুর ভাই বিজয় রানা। গত ৫ মার্চ তিনি থানায় গিয়ে পুলিশের কাছে নিখোঁজ ডায়েরি করেন। পরের দিন ৬ তারিখ এফআইআর করেন গোলাম রব্বানির বিরুদ্ধে। ভাইকে খুন করা হয়েছে বলে অনুমান করছিল পরিবারের সদস্যরাও। ঝুনুর পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। তবে প্রথম দিকে, ট্যাংরা থানার পুলিশ তদন্তে গতি আনছিল না বলে অভিযোগ করেন রানার পরিবারের সদস্যরা। এরপর লালবাজারের দ্বারস্থ হয় রানার পরিবারের লোকজন। পুলিশের হাতে বেশ কিছু সিসিটিভি ফুটেজও তুলে দেওয়া হয়। এরপরেই দিল্লি থেকে ঘটনার সঙ্গে প্রধান অভিযুক্ত রব্বানিকে গ্রেপ্তার করা হয়। ময়না তদন্তের পর ঘটনা আরও স্পষ্ট হবে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারী আধিকারিকরা।