আয় বাড়াতে এবার বিশেষ অভিযানে নামছে কলকাতা পুরসভা। কারণ, কলকাতা পুরসভার কাছে খবর এসেছে, শহরে এমন অনেক জমি, বাড়ি, ফ্ল্যাট ও পুকুর রয়েছে–যেগুলি এখনও পুরকরের আওতায় আসেনি। সেগুলিকে খুঁজে বের করতেই এই অভিযান। যার নাম দেওয়াহয়েছে ‘কম্বিং অপারেশন’। আর এই অভিযান শুরুর নির্দেশও এসেছে পুর-কমিশনার বিনোদ কুমারের তরফ থেকে। এ রকম কোনও সম্পত্তির হদিশ মিললেই মালিকের কাছ থেকে সম্পত্তিকর আদায়ে আইনি পদক্ষেপ করবে পুরসভা। সে জন্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত পুর-আধিকারিকদের সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপাতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে পুরসভা সূত্রে খবর, সম্পত্তিকর আদায়ে গতি বাড়াতে কয়েক দিন আগেই একটি নির্দেশিকা জারি করেন পুর-কমিশনার। তাতে বলা হয়েছে, যে সব সম্পত্তি এখনও পুরসভার তালিকাভুক্ত হয়নি, সেগুলিকে সম্পত্তিকরের আওতায় আনতে রাস্তা ধরে ধরে অভিযানে নামতে হবে অ্যাসেসমেন্ট বিভাগের আধিকারিকদের। কারণ, কলকাতা পুরসভার পাখির চোখ এখন সম্পত্তিকর আদায় বাড়ানো। আর সেই কারণেই অ্যাসেসমেন্ট বিভাগকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, এখন থেকে অ্যাসেসমেন্ট বিভাগের ইনস্পেক্টররা সপ্তাহে দু’দিন করে অ্যাসেসমেন্ট দপ্তরে বসবেন এবং সাধারণ করদাতাদের অভাব-অভিযোগ শুনবেন। কলকাতা পুরসভার তরফ থেকে বুধ ও শনিবার-ই ধার্য করা হয়েছে এই অভিযোগ শোনার জন্য। সপ্তাহের বাকি চার দিন তাঁদের ফিল্ডে বেরোতে হবে। সম্পত্তিকর আদায় করতে তাঁরা মানুষের দুয়ারে পৌঁছবেন। সবাই যাতে তাঁদের জমি-বাড়ি সম্পত্তির অ্যাসেসমেন্ট করান, সে জন্যে অফিসাররা মানুষকে অনুরোধ করবেন। কলকাতা শহরে যে সব জলাশয় রয়েছে, সেগুলিকেও সম্পত্তিকরের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
সম্পত্তির খোঁজে বেরিয়ে পুর-আধিকারিকরাও কাজে ফাঁকি দিচ্ছেন কিনা, তার উপরেও রাখা হবে কড়া নজর। পুরসভার আধিকারিকদের সেই কারণে নিয়মিত কাজের খতিয়ান জমা দিতে হবে। আর তার জন্য অ্যাসেসমেন্ট বিভাগের ইনসপেক্টরদের ডায়েরি ব্যবহার করার নির্দেশও দিয়েছেন পুর -কমিশনার। তাঁরা কখন কোথায় ইনসপেকশনে যাচ্ছেন, সেটা ডায়েরিতে লিখে ডেপুটি অ্যাসেসর কালেক্টর অথবা অ্যাসেসর কালেক্টরের কাছে রোজ জমা দিতে হবে।
এদিকে কলকাতা পুরসভা সূত্রে খবর, এই মুহূর্তে কলকাতা পুরসভায় নথিভুক্ত করদাতার সংখ্যা প্রায় ৮ লক্ষ ৫২ হাজার। পুরকর্তাদের অনুমান, তার বাইরেও পুর-এলাকায় আরও অন্তত ৩ লক্ষের উপরে বাড়িঘর, দোকান ও কারখানা রয়েছে–যেগুলি সম্পত্তিকরের আওতায় আসেনি। পুরসভার ভাষায় ‘আনঅ্যাসেসড প্রপার্টি’। পুর-আধিকারিকদের অনেকের বক্তব্য, অনেকেই কর ফাঁকি দিতে ইচ্ছা করে জমি-বাড়ি মিউটেশন করাননি। অনেক জায়গায় পুরনো বাড়ি ভেঙে বিল্ডিং প্ল্যান ছাড়াই ফ্ল্যাট তৈরি হয়েছে। সেখানে বছরের পর বছর লোকজন বসবাস করছেন। সিংহভাগ বেআইনি ফ্ল্যাটের মালিকই পুরকর দেন না। বেহালা, যাদবপুর, ঠাকুরপুকুর, টালিগঞ্জ, বেলেঘাটা, পার্ক সার্কাস, গার্ডেনরিচ-সহ শহরের বিভিন্ন এলাকায় এই ধরনের বহু বেআইনি ফ্ল্যাট রয়েছে। ইউনিট এরিয়া অ্যাসেসমেন্ট চালু হওয়ার পর এই সমস্যা আরও বেড়েছে। সব মিলিয়ে সম্পত্তিকর আদায়ের পরিমাণ বাড়ছে না। পুরসভার হিসাব, চলতি অর্থবর্ষে ৭২০ কোটি টাকার মতো সম্পত্তিকর আদায় হয়েছে। যদিও তার থেকে অনেক বেশি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। ঘাটতি মেটাতে এ বার রাস্তায় নামানো হচ্ছে অফিসারদের।