কলকাতার বুকে ফুটপাথ থেকে বেআইনি দখলদার হটাতে পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে অভিযানে নামছে পুরসভা। তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পুর আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়েছেন পুর কমিশনার। সেইমতো পুরসভায় জোরদার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। রণকৌশল তৈরি করতে পুলিশের সঙ্গে বৈঠক করেছেন পুরকর্তারা। কারণ,হকার সরাতে গেলে প্রশাসনকে প্রতিরোধের মুখে পড়তে হতে পারে এই আশঙ্কায় এতদিন হাত গুটিয়ে বসেছিলেন পুরকর্তারা। সম্প্রতি বেআইনি হকার উচ্ছেদের ব্যাপারে পুরসভার সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারক কমিটি তথা মেয়র পারিষদ বৈঠকে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এরপরই শহরে ফের শুরু হচ্ছে নতুন করে হকার উচ্ছেদ অভিযান।
এদিকে গত কয়েক বছরে কলকাতা শহরে হঠাৎ-ই হকারের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে অনেকটাই। বহু জায়গায় ফুটপাথ কার্যত চলে গিয়েছে তাঁদের দখলে। ফুটপাথের ওপরে তৈরি হয়েছে অস্থায়ী দোকানঘর। জনবহুল ফুটপাথে রমরমিয়ে চলছে খাবার হোটেল। আগুন জ্বালিয়ে হচ্ছে রান্নাবান্নাও। কোথাও আবার ক্লাবঘর, পার্টি অফিস এবং মন্দির গজিয়ে উঠেছে। এদিকে পুরসভার নিয়ম বলছে, ফুটপাথের এক তৃতীয়াংশ জায়গা ছেড়ে হকারদের বসার কথা। তবে বাস্তবে সে নিয়মের থোড়াই তোয়াক্কা করেন হকাররা। বহু জায়গায় সেই নিয়ম মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। এর জন্য কলকাতা পুরসভা থেকে বেশি দূরেও যেতে হবে না। কলকাতা পুরসভার সদর দপ্তরের সামনেই রাস্তার প্রায় অর্ধেকটাই দখল করেছেন হকারেরা। আর একটু দূরেই গ্র্যান্ড হোটেলের ফুটপাথের বেশিরভাগই তো হকারদের দখলে। গড়িয়াহাট, হাতিবাগান, ধর্মতলা, বড়বাজার, বউবাজার, শিয়ালদা সব জায়গায় ছবিটা একদমই এক। আর তার ফলে ভোগান্তি বেড়েছে পথচলতি মানুষের। ফুটপাথ সঙ্কীর্ণ হয়ে পড়ায় লোকজন রাস্তায় নেমে আসছেন। যানবাহনের গতি হয়ে পড়েছে শ্লথ। এ নিয়ে কলকাতা পুলিশের তরফ থেকে কলকাতা পুরসভাকে যে এখাধিকাবার সতর্কবার্তা দেওয়া হয়নি তাও নয়। এবার শহরের ফুটপাথকে দখলমুক্ত করতে এ বার কোমর বেঁধে নামছেন পুর কর্তৃপক্ষ।
এই প্রসঙ্গে পুরসভার জঞ্জাল সাফাই বিভাগের মেয়র পারিষদ দেবব্রত মজুমদার জানান, ‘কলকাতা শহরে এমনিতেই অনেক হকার বেড়ে গিয়েছে। ফুটপাথে আমরা নতুন করে আর কাউকে বসতে দেবো না। এটাই আমাদের নীতিগত সিদ্ধান্ত। তাঁদের চিহ্নিত করে পুলিশের সাহায্য নিয়ে সরিয়ে দেওয়া হবে।’ এরই পাশাপাশি কলকাতা শহরের ফুটপাথ থেকে বেআইনি দখলদার হটাতে পুরসভার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগকে ঠিক ভাবে জায়গা চিহ্নিত করে এফআইআর দায়ের করতেও বলেছেন পুর কমিশনার। উচ্ছেদ অভিযানের সময়েও তাঁরা সশরীরে হাজির থাকবেন, এমনটাই সূত্রে খবর। উচ্ছেদের জন্য কন্ট্রাক্টরদের তালিকা তৈরি করে রাখতে বলা হয়েছে বিল্ডিং বিভাগের ডিজিকে। শুধুমাত্র এ কাজের জন্য পুরসভার সদর দপ্তরে একটি টিম গঠন করা হচ্ছে। সেখানে গ্যাস কাটার থেকে শুরু করে নানা ধরনের যন্ত্রপাতি নিয়ে প্রস্তুত থাকবেন কর্মীরা। যেখানেই দরকার পড়বে, সেখানে তাঁদের তুলে নিয়ে যাওয়া হবে। বেআইনি দখলদার চিহ্নিত করা এবং উচ্ছেদ অভিযানের কাজে কলকাতা পুলিশেরও সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।