এবার নতুন সাজে আসছে কলকাতা মেট্রোর এসি রেক। যা একেবারে নতুনভাবে ডিজাইন করা। এই এসি রেকগুলি চেন্নাইয়ের ইন্টিগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরিতে তৈরি হবে। বাংলার ব্রাইডাল এবং টেরাকোটা শিল্পকর্ম থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে এই রেকগুলি ডিজাইন করা হচ্ছে বলেই জানা গেছে। সূত্রে এ খবরও মিলছে যে, মেট্রো পরিবেষাকে আমূল পরিবর্তন করার জন্য ইতিমধ্যেই কলকাতাকে ৬০০০ কোটি টাকা অনুমোদন করেছে রেল মন্ত্রক। নতুন ৮৫ টি রেক কলকাতায় আসছে। যেগুলি বর্তমান রেকের থেকে আরও অনেক বেশি আধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি হবে বলে খবর। বর্তমানে তিনটি করিডর মিলিয়ে ৪৫ টি মেট্রো রেক চলে। সেটা বেড়ে ১৩১ টি রেক হতে চলেছে।
উত্তর-দক্ষিণ লাইন অর্থাৎ কবি সুভাষ থেকে দক্ষিণেশ্বর করিডর, ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো লাইন অর্থাৎ সেক্টর ফাইভ থেকে হাওড়া ময়দান মেট্রো করিডর, জোকা থেকে এসপ্ল্যানেড মেট্রো করিডর, কবি সুভাষ থেকে কলকাতা বিমানবন্দর করিডর, এই চারটি লাইনের মেট্রো রেককে মূলত বদল করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।
যাত্রীদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে এই রেকের প্রতিটি কোচে স্থানীয় শিল্প ও কারুশিল্প তুলে ধরা হবে। এছাড়া প্রতিটি কোচের দুই পাশে থাকবে ইউএসবি চার্জিং পোর্ট।
যেহেতু কলকাতা বিমানবন্দর গামী যাত্রীদের জন্য নয়া মেট্রো পরিষেবা শুরু করা হচ্ছে, তাই এই রেক গুলিতে লাগেজ রাখার জন্য বড় বড় জায়গা রাখা হচ্ছে। বিমানবন্দরগামী যাত্রীদের কথা ভেবেই এই বিশেষ পরিকল্পনা। শুধু তাই নয়, এক একটি বগিতে যাত্রী ধারণ ক্ষমতা এবং বসার ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি করা হয়েছে এই রেকগুলিতে। পাশাপাশি যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ও মেট্রো যাত্রা আরও আরামদায়ক করা জন্য থাকছে বিশেষ হ্যান্ডেল, অ্যান্টি-স্কিড ফ্লোরিং এবং অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা। এছাড়া জরুরি কোনও পরিস্থিতিতে, যাত্রীরা ‘টক টু ড্রাইভার ইউনিট’-এর মাধ্যমে মোটরম্যানের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে সক্ষম হবেন। রিয়েল-টাইম ভিত্তিতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিটি কোচের ভিতরে কৌশলগতভাবে থাকছে সিসিটিভি ক্যামেরাও। দিনের ব্যস্ত সময়ে প্রচণ্ড ভিড়ের কথা মাথায় রেখে, যাত্রীদের ভেস্টিবুলে দাঁড়াতে না দেওয়ার জন্য কোচে থাকবে উন্নতমানের ‘রুফ গ্র্যাব হ্যান্ডেল’। তথ্যপ্রযুক্তি সামগ্রী প্রদর্শনের জন্য রেকের ভিতরে বিশেষ ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ডও স্থাপন করা হবে। কোচের ভিতরে উষ্ণ পরিবেশ তৈরি করার জন্য, বিশেষ কোভ আলোর ব্যবস্থা থাকবে। এরই পাশাপাশি দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি হওয়ায় নিরাপত্তা এবং আধুনিকতায় জোর দেওয়া হয়েছে। রেকের বগি গুলি অনেক বেশি অত্যাধুনিক এবং মজবুত। পাশাপাশি বগিগুলির ফ্লোর করা হচ্ছে অ্যান্টি স্কিড প্রযুক্তির। প্ল্যাটফর্ম থেকে যদি রেকের সামনে কেউ ঝাঁপ দেন, আত্মহত্যার জন্য তাহলে যাতে দ্রুত সংশ্লিষ্ট মেট্রো চালক নিজের গাড়িটি থামাতে পারেন তার জন্য থাকছে অটোমেটিক ব্রেক প্রযুক্তি। যাত্রীদের সুবিধার জন্য কোচের প্রবেশপথে এবং রেকের ভিতরে বসার বেঞ্চের উপরে মজবুত গার্ড রেল এবং গ্র্যাব পোল দেওয়া হবে।
নতুন ধরণের এই রেকগুলি ২০২৬ সাল নাগাদ চালু করা যাবে বলে আশা করছে কলকাতা মেট্রো কর্তৃপক্ষ। পর্যায়ক্রমে ৮৫টি নতুন রেক অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে৷ নতুন এই রেকের জন্য ব্যয় হবে ৬ হাজার কোটি টাকা, যা রেলমন্ত্রক ইতিমধ্যেই মঞ্জুর করেছে বলে জানা যাচ্ছে। নতুন এই রেক চালু হলে মেট্রো যাত্রা আরও নিরাপদ ও আরও আরামদায়ক হয়ে উঠবে বলেই মনে করছে কলকাতা মেট্রো কর্তৃপক্ষ।