হুগলি জেলা তথা আরামবাগ মহকুমার প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী পুজোগুলোর মধ্যে অন্যতম হল আরামবাগে তিরোল অঞ্চলের সিদ্ধেশ্বরী কালী। এই প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী কালী ক্ষ্যাপা কালী রূপে পূজিত হন। কেননা মায়ের আশীর্বাদে বহু মানসিক ভারসাম্যহীন রোগী স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন। এমনটাই দাবি এলাকার মানুষ থেকে শুরু করে তিরোলের চক্রবর্তী পরিবারে। প্রসঙ্গত, উল্লেখ্য আরামবাগ শহর থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরেই অবস্থিত তিরোল গ্রাম। প্রাচীনকালে জঙ্গল দিয়ে ঘেরা ছিল। তবে বর্তমানে আধুনিককতার ছোঁয়ায় রাস্তা থেকে সবকিছুতেই আধুনিক সভ্যতার রং লাগায় সহজেই মায়ের মন্দির পৌঁছনো যায়। সকাল হলেই ভক্তদের ভিড় লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে মানসিক ভারসাম্যহীন রোগীর সংখ্যা বেশি দেখা যায়। এই মন্দিরেরে দেবীকে অত্যন্ত জাগ্রত বলে বিশ্বাস করেন সবাই। জনশ্রুতি আছে, এই মায়ের আশীর্বাদে নাকি মানসিক ভারসাম্যহীন রোগীরা সুস্থ হয়ে ওঠেন অলৌকিকভাবে। তাই মায়ের মন্দিরে এসে মায়ের আশীর্বাদ নিয়ে লোহার বালা পরান পুরোহিত ঠাকুর। আর সেই বালা পরিয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিকে বাড়ি নিয়ে যান। তারপর অলৌকিক ভাবে স্বাভাবিক জীবন যাপন শুরু করে। তিরোলের চক্রবর্তী পরিবারের দাবি, আজ থেকে প্রায় ৭০০ থেকে ৮০০ বছর আগে স্বপ্নাদেশ পেয়ে মায়ের মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন চক্রবর্তী জমিদার ধর্মপ্রাণ দীননাথ চক্রবর্তী। প্রসঙ্গত, সাহিত্যিক বিভূতি ভূষণ বন্দোপাধ্যায় তিরোলের বালা নামে একটি ছোট গল্প লিখেছিলেন। কথিত আছে, মা ক্ষ্যাপা কালীর বালা পরানোকে সামনে রেখেই এই গল্প নাকি লেখা হয়। পাশাপাশি তিরোল গ্রামে কান পাতলেই শোনা যায়, মা সারদা স্বয়ং তার বউদির মানসিক রোগ সারাতে নাকি তাকে ক্ষ্যাপা কালীর মন্দিরে পাঠিয়ে ছিলেন। পরবর্তীকালে সারদা মায়ের নিজের ভাইঝি রানুও নাকি ক্ষ্যাপা কালীর কৃপায় উপকৃত হয়েছিলেন বলে শোনা যায়। বর্তমান বংশধরদের দাবি, মায়ের পুজোর সময় প্রতিবছর মুকুট আসে ধনিয়া খালির বিশ্বাস বাড়ি থেকে। আবার সানাই বাদকরা আসেন একটি নির্দিষ্ট গ্রাম থেকে। এমনকী, মায়ের দৈব বালাও বংশ পরম্পরায় তৈরি করে চলেছেন এই গ্রামেরই একটি নির্দিষ্ট কর্মকার পরিবার। এই বিষয়ে সেবাইত কাজল কুমার চক্রবর্তী জানান, মায়ের নিত্য দিনের পুজো হলেও কার্তিক মাসে বিশেষ পুজোপাঠ হয়। মায়ের বালা পরলে মা কালীর আশীর্বাদে বহু মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষ সুস্থ হন। অপরদিকে মন্দিরে আসা এক ভক্ত প্রতীক নায়েক জানান, বালা পরানোর পর কাকা আগে থেকে অনেক সুস্থ আছেন। লোকমুখে জানার পর মায়ের মন্দিরে আসি। সবমিলিয়ে তিরোলের ক্ষ্যাপা কালীর মাহাত্ম্যর কথা জেনে বহু ভক্তের আগমন হয় কার্তিক মাসের বিশেষ পুজোপাঠে।