কলকাতা পুরসভার বাজেট পেশ মেয়রের, ১৪৬ কোটি টাকার ঘাটতি বাজেট জানালেন ফিরহাদ স্বয়ং

কলকাতা পুরনিগমের নতুন অর্থবর্ষের বাজেট পেশ করলেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। শুক্রবার এই বাজেট পেশ করতে গিয়ে মেয়র ফিরহাদ হাকিম যা পরিসংখ্যান দেন তাতে ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে কলকাতা পুরনিগমের ১৪৬ কোটি টাকার ঘাটতি বাজেট পেশ হয়েছে। গত ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে ১৭৭ কোটি টাকার ঘাটতি বাজেট পেশ হয়েছিল। সেখান থেকে ৩১ কোটি টাকা কমল বাজেট ঘাটতি। পুরনিগমের বাজেট প্রস্তাব অনুযায়ী মেয়র জানালেন, ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে পুরনিগমের আনুমানিক আয় ধরা হয়েছে ৪,৫৪০.৭৯ কোটি টাকা এবং আনুমানিক ব্যয় ৪,৬৮৬.৭৯ কোটি টাকা। বাজেটে প্রস্তাবিত ঘাটতি ২০২৫.৯৬ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে ঘাটতি ২১৭১.৯৬ কোটি টাকা। কর রাজস্ব বাবদ ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে প্রস্তাবিত আয় ছিল ১,৩২২.৪৪ কোটি টাকা এবং সংশোধিত আয় হয়েছে ১,১৮১.৭২ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে প্রস্তাবিত আয় ধরা হয়েছে ১,৪৩২.১১ কোটি টাকা।
তবে এদিন পাশাপাশি এও জানান, সম্পত্তিকর থেকে শুরু করে ট্রেড লাইসেন্স, বিজ্ঞাপন, পার্কিং, মার্কেট–সব ক্ষেত্রেই শেষ আর্থিক বছরে গত দু’বছরের তুলনায় আয় বেড়েছে কলকাতা পুরসভার। যা থেকে স্পষ্ট, কোভিডের ধাক্কা সামাল দিয়ে ধীরে ধীরে ছন্দে ফিরছে শহর। এদিকে আয়ের পরিমাণ বাড়ায় কিছুটা হলেও স্বস্তিতে পুরকর্তারা। পুরসভা সূত্রে খবর, ২০১৯-২০ সালে সম্পত্তিকর থেকে আয় হয়েছিল ৮৫৬ কোটি টাকা। কোভিড সংক্রমণ যখন সবচেয়ে বেশি, সেই ২০২০-২১ সালে সম্পত্তিকর থেকে আয় কমেছিল অনেকটাই। মোটে ৬৬২ কোটি টাকা। সেখানে ২০২২ সালে হাতে এসেছে ৮৮৫ কোটি টাকা। আবার, লাইসেন্স বিভাগেও শেষ আর্থিক বছরে ৫৮ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে পুরসভা। গত দু’বছর যা ছিল ৫৫ কোটি এবং ৫৫ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা। এরই পাশাপশি পার্কিং থেকেও আয় হয়েছে ১৫ কোটি টাকা। যা ২০২০-২১ আর্থিক বছরে ছিল ১০ কোটি ৭ লক্ষ টাকা। মার্কেট বিভাগ থেকে গত আর্থিক বছরের তুলনায় আয় বেড়েছে অনেকটাই। এদিকে ২০২০-২১ আর্থিক বছরে ছিল ২১ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা। এদিন মেয়র ফিরহাদ হাকিম এও জানান, এবার তা ৩৯ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা। আগামী দিনেও যাতে এই প্রবণতা সব বিভাগ ধরে রাখতে পারে, পুর-কমিশনার বিনোদ কুমার সেই নির্দেশই তিনি দিয়েছেন।
এদিন বাজেট পেশের পর সাংবাদিক বৈঠকে মেয়র ঘাটতির কারণও ব্যাখ্যা করলেন। বললেন, পে কমিশন অনুযায়ী একটি বড় অংশ, প্রায় হাজার কোটি টাকা বেতন হিসেবে দিতে হচ্ছে। সেই কারণে এই ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। এর পাশাপাশি পেট্রোল ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি এবং কোভিড পরিস্থিতির কারণে বেশি কর বসানোও যাচ্ছে না। সেটিও একটি বড় সমস্যা বলে জানালেন তিনি। এদিন মেয়র এটা মনে করিয়ে দেন, পুরসভার যে বিভাগগুলি থেকে রোজগার হয়, তার মধ্যে শীর্ষে সম্পত্তিকর। আর এই সম্পত্তিকর বাড়ার কারণ প্রসঙ্গে পুরকর্তারা জানান, দীর্ঘদিন যাঁদের টাকা বকেয়া ছিল তাঁদের যেমন নোটিস পাঠানো হচ্ছে, তেমনই সময় পেরিয়েও কর না দেওয়ায় অনেক হোটেল আর রেস্তোরাঁয় তালাও ঝোলানো হয়েছে। তার ফলেই সম্পত্তিকর দেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। ট্রেড লাইসেন্স খাতে আয় বাড়ার নেপথ্যে করোনার কারণে চাকরি হারানোর পরে শহরের বাসিন্দাদের একাংশের ব্যবসায় নামার ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করছেন পুরকর্তারা। এছাড়া বিভিন্ন জায়গায় বুস্টিং পাম্পিং স্টেশন তৈরি করাতেও একটি বড় খরচ হচ্ছে। এবারের বাজেটে প্রচুর বুস্টিং পাম্পিং স্টেশন তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে কলকাতার বিভিন্ন এলাকায়।
এদিন মেয়র এ আশ্বাসও দেন, কলকাতা শহরের দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্যও বিভিন্ন পদক্ষেপ করা হচ্ছে। যাতে আগামী দিনে কলকাতার সবুজায়ন আরও বাড়ানো যায়। নজর দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্যক্ষেত্রেও। ডেঙ্গি পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য, এবার থেকে আর শুধু বর্ষার মরশুমেই নয়, সারা বছর ধরেই কাজ চলবে। ফেব্রুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত যতক্ষণ না তাপমাত্রা ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে যাচ্ছে, ততক্ষণ ডেঙ্গি মোকাবিলার কাজ চালাবে পুরনিগম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

9 − one =