আইপিএলে কত দ্রুত সব কিছু বদলে যায়! মাত্র দু’টো ম্যাচ আগেই টুর্নামেন্টের অন্যতম শক্তি মনে হচ্ছিল শ্রেয়স আইয়ারের কেকেআরকে। সুনীল গাভাসকরের মতো বিদগ্ধ ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের অনেকেই বলছিলেন যে, আইপিএলের সোনালি-বেগুনি জার্সিকে তাঁরা প্লে-অফে দেখছেন। কিন্তু দু’টো ম্যাচ যেতে না যেতেই পুরোপুরি পালটে গেল নাইটদের পৃথিবী। সব বদলে দিল দু’টো বিশ্রী হার। এক ঝটকায় দু’নম্বর থেকে লিগ টেবলের ছ’য়ে নেমে এলেন শ্রেয়সরা।
তার চেয়েও বড় চিন্তার, যা এত দিন কেকেআরের সবচেয়ে বড় শক্তি ধরা হচ্ছিল, পরপর দুই ম্যাচে সেই নাইট বোলিংকে রীতিমতো নখদন্তহীন দেখিয়েছে। দিল্লি ক্যাপিটালস দু’শো প্লাস রান তুলে দিয়েছে। শুক্রবার নাইটদের দেওয়া ১৭৬ রানের টার্গেট তুলতে সানরাইজার্স হায়দরাবাদকে বিন্দুমাত্র অসুবিধায় পড়তে হয়নি। আর কেকেআর বোলারদের হিসেবপত্র শিউরে ওঠার মতো। প্যাট কামিন্স এখনও পর্যন্ত বল করেছেন তিনি বারো ওভার মতো। রান দিয়েছেন একশো চল্লিশ! উইকেট মাত্র তিনটে। বরুণ চক্রবর্তী, শেষ দু’ম্যাচে সাত ওভার বল করে নব্বই রান দিয়েছেন প্রায়। উইকেট একটা। বরুণকে আইপিএল নিলামের আগে আট কোটি টাকা দিয়ে ‘রিটেইন’ করেছিল কেকেআর। কিন্তু গত দু’টো ম্যাচে নাইটদের রহস্য স্পিনারের যাবতীয় ইন্দ্রজাল ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছেন পৃথ্বী শ আর রাহুল ত্রিপাঠী মিলে। কেকেআর তবু সাফাই খুঁজছে। গত রাতে টিমের মেন্টর ডেভিড হাসি অজুহাত দিচ্ছিলেন, “ব্রেবোর্নে একই ম্যাচে দু’টো পিচ দেখলাম। আমরা বল করছিলাম যখন, বল স্কিড করছিল। স্পিনারদের পক্ষে সহজ ছিল না বল করা। তবে বরুণ আগেও ভাল করেছে কেকেআরের হয়ে। আবারও করবে। ও বিশ্বমানের স্পিনার।”
কামিন্স নিয়েও দেখা গেল, অজুহাত তৈরি হাসির। বললেন, “পাকিস্তানে খেলে এখানে এসেছে কামিন্স। প্রচুর ক্রিকেট খেলতে হচ্ছে ওকে। প্লাস, পাকিস্তানে যে ফরম্যাটে খেলেছে, আর এখানে যে ফরম্যাট খেলতে হচ্ছে, দু’টোর অনেক তফাত। তবে আমি নিশ্চিত, গ্রুপ পর্ব শেষে দেখবেন, কামিন্স শুধু বোলিং দিয়ে আমাদের দু’টো-তিনটে ম্যাচ জিতিয়ে দিয়েছে।” নাইট মেন্টর শুধু স্বীকার করলেন, পাওয়ার প্লে-তে ভাল করছে না। টিম কিন্তু দৃশ্যত ন্যুব্জ।
শুক্রবার হায়দরাবাদের কাছে হারের পর ড্রেসিংরুমে বিমর্ষ হয়ে বসেছিলেন শ্রেয়স আইয়ার, আন্দ্রে রাসেলরা। টিমকে তাতাতে অস্ট্রেলিয়ার সাদা বলের অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ নাতিদীর্ঘ একটা বক্তৃতা রাখেন। বলেন, “আমার নিজের টি-টোয়েন্টি অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, দু’টো ম্যাচে হারার পর একে অন্যকে দোষারোপ করাটা সবচেয়ে সহজ। বলা সহজ, অমুকে এটা করেনি, তমুকে সেটা করেনি। কিন্তু তাতে লাভ হয় না। কারণ, আমরা কেউই নিজেদের কাজটা ঠিক মতো করিনি বলে হেরেছি।” যা শুনে পাশ থেকে নাইট অধিনায়ক শ্রেয়স আইয়ারও বলে দেন, “আমিও একই কথা বলব ভাবছিলাম। দোষারোপ না করে সামনে তাকানো ভাল। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এ জিনিস হতেই পারে। ওয়ান ব্যাড ইন অফিস।” ঠিকই। কিন্তু আরও গোটা কয়েক ‘ব্যাড ডে’ এলে প্লে-অফ বার্থই যে ফস্কে যাবে না, কে বলতে পারে?