নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঁকুড়া: মারাঠা সম্রাট ভাস্কর পণ্ডিতের দেওয়া খড়গ আজও কালীর পাশে পূজিত হয় সোনামুখীতে, তিনিই কালীর নামকরণ করেছেন ‘মা-ই- তো কালী’।
জেলার কালীক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত বাঁকুড়ার প্রাচীন পুরশহর সোনামুখী। এখানে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় আড়াইশো কালীপুজো হয়। এখানকার প্রাচীন কালীপুজোগুলিকে নিয়ে নানান লোককথা প্রচলিত আছে। সেগুলির মধ্যে অন্যতম ‘মা-ই-তো কালী’। এখানে দূর দূরান্ত থেকে অসংখ্য ভক্ত ছুটে আসেন। মনস্কামনা পূরণের আশায় তাঁরা পুজো দেন। কিন্তু এই কালীর এই রকম নামকরণ কেন? এ নিয়ে এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে।
ইংরেজি ১৭৪২ খ্রিষ্টাধ বাংলা ১১৪৯ সালে এই বাংলায় তখন বর্গী আক্রমণ চলছে। বর্গীদের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে এমন শহর এখানে নেই বললেই চলে। সেই সময়কালে সোনামুখীতে পা রাখেন মারাঠা সেনাপতি ভাস্কর পণ্ডিত। মারাঠা সেনাপতি সদলবলে বিষ্ণুপুর থেকে সরাসরি সোনামুখীতে পৌঁছেছেন, এই খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তৎকালীন সোনামুখীর মানুষ ভয়ে তটস্থ হয়ে পড়ে। দরজা-জানালা বন্ধ করে একপ্রকার গৃহবন্দি ভয়ার্ত সোনামুখীবাসী।
সেই সময় কোনও এক নিঝুম সন্ধ্যায় মারাঠা সেনাপতি এক পর্ণকুঠির সম্মুখে হাঁড়িকাঠের সামনে এক বৃদ্ধকে পুজো করতে দেখেন। সেই বৃদ্ধকে মারতে খড়গ তুলে ধরতেই দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন মারমুখী ভাস্কর পণ্ডিত। আর তাঁর মনে হয় উদ্যত খড়গ যেন পিছন থেকে কেউ টেনে রেখেছে। বর্গীদল উত্তর দিল , না পিছন থেকে খড়গ তো কেউ টেনে নেই। কিন্তু ওই পুজারী বৃদ্ধ প্রতিহিংসাপরায়ণ না হয়ে মন্দিরের ঘটের জল ছিটিয়ে ভাস্কর পণ্ডিতের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে আনেন। দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেয়ে ও খড়গ হাত থেকে নামাতে পারলেন। ভাস্কর পণ্ডিত ওই বৃদ্ধকে জিজ্ঞাসা করেন এখানে কি কোনও দেবতা আছেন? বৃদ্ধ উত্তর দিলেন, হ্যাঁ। মা কালী। তখন ভাস্কর পণ্ডিত চিৎকার করে ওঠেন ‘মা-ই-তো কালী’। সেই থেকেই এই কালী প্রতিমার নাম হয়ে যায় ‘মা-ই-তো কালী ’।
এছাড়াও একই সঙ্গে এমন জনশ্রুতিও রয়েছে , ভাস্কর পণ্ডিত ওই জায়গা ছেড়ে যাওয়ার আগে খড়গ ও তাঁর সঙ্গে আর একটি খড়গ বৃদ্ধের হাতে দিয়ে যান। ভাস্কর পণ্ডিতের দেওয়া সেই খড়গ আজও কালী মায়ের সঙ্গে পূজিত হয় এখানে। তার ™র থেকে আজও সোনামুখীর মানুষের অত্যন্ত ভরসা, বিশ্বাস আর ভক্তির অন্যতম নাম ‘মা-ই-তো কালী’।
সময়ের সঙ্গে সেদিনের সেই পর্ণকুঠির বিশালাকার মন্দিরে পরিণত হয়েছে। নিত্যদিন অসংখ্য ভক্ত এখানে পুজো দিতে আসেন। কার্তিকেয় অমাবস্যায় কালীপুজোর দিন সেই সংখ্যাটা কয়েক গুন বেড়ে যায় উৎসবের চেহারা নেয় সোনামুখী শহর।