রাজীব মুখোপাধ্যায়
হাওড়া: চার ধাম যাত্রা অত্যন্ত পুণ্যের বলেই বিশ্বাস হিন্দুদের কাছে। যে যাত্রা শুরু হয় কেদারনাথ ধাম দিয়ে।
পুণ্যভূমি কেদারের উদ্দেশেই এবার যাত্রা শুরু করলেন হাওড়ার সাঁকরাইলের যুবক। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, এ আর এমন কী! কত বয়স্করা যাচ্ছেন সেখানে। তবে তফাত্ হল সাঁকরাইলের যুবক শুধু নিজের পুণ্য প্রকৃতির রূপ উপভোগের বাসনায় নয়, বরং জন কল্যাণের ও গঙ্গা দূষণ ঠেকানোর বার্তা দিতেই কেদারনাথ যাত্রা করলেন, তাও পুরোপুরি হেঁটে।
সাঁকরাইলের যুবক প্রভাস বর ছোটবেলা থেকে মহাদেব শিবের ভক্ত। স্থানীয় সবজি মন্ডিতে শ্রমিকের কাজ করেন প্রভাস। তিনি বাড়ির বড় ছেলে প্রভাস। ছেলের সব ইছাতেই বাড়ির তরফ থেকে কখনও কোনো বাধা আসে নি। তাই পায়ে হেঁটে কেদারনাথ ধাম যাত্রার এই বিষয়ে তাঁকে কোনো বাধা পেতে হয়নি। দেশের একপ্রান্ত থেকে অপরপ্রান্তে যাওয়ার আগে নিজের যাত্রার প্রয়োজনে হাওড়ার জেলাশাসক থেকে শুরু করে স্থানীয় বিধায়ক ও পঞ্চায়েতের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করেছেন প্রভাস। এই যাত্রার আগে দীর্ঘ ২ মাস ধরে নানা ধরণের প্রস্তুতি নিয়েছেন। ২ মাস এর বেশি সময় থেকে সারাদিনের সব কাজ কর্ম খালি পায়ে হেঁটেই করেছেন। নিজেকে কঠিন যাত্রার জন্য কঠোর পরিশ্রম দিয়ে তৈরি করেছেন বছর তিরিশের প্রভাস। মনের জোর বাড়ানোর জন্য ক্যারাটের অভ্যাস পুনরায় চালু করেছেন ব্ল্যাক বেল্ট প্রাপ্ত প্রশিক্ষক বিভাস। মাত্র কয়েক মাসের অনুশীলনে পুনরায় নিজেকে লোহার মত শক্ত পোক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। হাওড়া থেকে কেদারনাথের দূরত্ব প্রায় ২০০০ কিলোমিটার। শুরুর ডিকে প্রত্যেক দিন ১২ থেকে ১৫ কিলো মিটার হাঁটার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছেন প্রভাস। সবকিছু পরিকল্পনা মতো চললে আগামী ১৫ আগস্টে তিনি কেদারনাথ ধামে পৌঁছাবেন বলেই জানান বিভাস। পথে তারাপীঠ,দেওঘর, গয়া, বেনারস, অযোধ্যা হয়ে কেদারনাথ যাবেন এমনই পরিকল্পনা নিয়েছেন। রাত কাটাতে কোনো মন্দির বা প্রশাসনিক কোনো জায়গাতে আশ্রয় নেবেন বলেই মনস্থির করেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার সাঁকরাইল থানা এলাকার গঙ্গার ঘাটে স্নান সেরে ঘটে করে গঙ্গা জল নিয়ে নিজের ব্যাগ নিয়ে হাতে জাতীয় পতাকা সহ রওনা দেন কেদারনাথ ধামের উদ্দেশ্যে। তবে যাত্রা শুরুর আগে মায়ের পা ছুঁয়ে নিজের যাত্রার সাফল্যের জন্য আশীর্বাদ নিয়ে রওনা হন। প্রভাসের মা জানান আর্থিক কারণে ছেলের ছোটবেলা থেকে সেই ভাবে ইচ্ছা পূরণ করতে পারেনি। তাই ছেলের এই ইচ্ছা পূরণ করার জন্য তিনি অনুমতি দিয়েছেন। ছাপোষা ঘরের ছেলে সেই ভাবে অর্থ জোগাড় করতে পারেনি। এই যাত্রার জন্য প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা প্রয়োজন হলেও মাত্র ১০ হাজার টাকা হাতে নিয়ে ঈশ্বরের নাম নিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন তিনি। ছেলের বন্ধুদের সাহায্য ও সমর্থন দেখে তিনি খুশি। ছেলে যেনো এই যাত্রা সম্পূর্ন করতে পারে রাজ্য প্রশাসন ও কেন্দ্র প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েছেন তিনি।
গঙ্গাকে দূষণ মুক্ত রাখতে যেভাবে কেন্দ্রের সরকার নমামী গঙ্গার প্রকল্পের কাজ করছেন সাধারণ মানুষকে সচেতন করছেন। আর ঠিক তারই পাশাপাশি এই বাংলার ছেলে প্রভাস গঙ্গাকে দূষণ মুক্ত রাখা ও জন কল্যাণের বার্তা নিয়ে কঠিন পথে পায়ে হেঁটে যাত্রা শুরু করলেন হাওড়ার সাঁকরাইলের প্রভাস।