জীবনে কখনও যে এ রকম সময় আসবে, স্বপ্নেও বোধহয় ভাবতে পারেননি বিরাট কোহলি।বছর তিনেক আগেও তিনি ব্যাট হাতে নামার অর্থ ছিল আসমুদ্রহিমাচলের আশাবাদের মায়াকাজল চোখে পরে বসে পড়া। তাঁর সেঞ্চুরি দর্শনের অভিলাষে। কিন্তু মাঝের তিনটে বছর কোহলির থেকে কেড়েকুড়ে নিয়ে গিয়েছে সব। যে ক্রিকেটার সেঞ্চুরির বর্ষণ ঘটাতেন মাঠে, দিনের পর দিন, তাঁর ব্যাট থেকে সেঞ্চুরি নেই। সবচেয়ে বড় কথা, স্মরণীয় তেমন রানই নেই।
দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ৭৯ রানের ইনিংসটা ছাড়া কোহলির এমন কোনও সাম্প্রতিক ইনিংস মনে পড়ে না, যা পূর্বের মুগ্ধতা ছড়িয়েছে। আর হালফিলে তো দেশজুড়ে গণ-আওয়াজ উঠছে তাঁর টি-টোয়েন্টি খেলা নিয়ে। প্রাক্তন ক্রিকেটাররা বলছেন। বোর্ড বেসরকারি ভাবে বলছে। প্রচ্ছন্ন সতর্কবার্তা জারি করছে যে, ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে শেষ দু’টো টি-টোয়েন্টিতে কোহলি পারফর্ম না করতে পারলে আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ভাবনায় তিনি থাকবেন কি না, ভেবে দেখতে হবে। নাহ্, ক্রিকেট অদৃষ্টের এমন নির্মম বিচার পাবেন, কোহলি নিশ্চিত কখনও ভাবেননি।
গত কাল সুনীল গাভাসকর, মাইকেল ভনরা বলেছিলেন কোহলিকে নিয়ে। ভন তো এটাও বলেছেন যে, প্রাক্তন ভারত অধিনায়কের উচিত ক্রিকেট থেকে তিন মাস ছুটি নিয়ে বিশ্রামে চলে যাওয়া। তার পর ফিরে আসা। গাভাসকর আবার বলেছিলেন, বিরাটের কোথায় গণ্ডগোলটা হচ্ছে। এ দিন আবার ওয়াসিম জাফর, কারসন ঘাউরিরা তাঁর টি-টোয়েন্টি ফর্ম নিয়ে বলতে শুরু করলেন। জাফর এক সাক্ষাৎকারে বলে দিয়েছেন যে, কোহলি এখনও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পরিকল্পনায় থাকবেন নির্ঘাৎ। কিন্তু বিশ্বকাপ টিমে তাঁর জায়গা যে সুরক্ষিত বলা যাবে না মোটেই। “আসলে তরুণ ক্রিকেটাররা দারুণ করছে। চার নম্বরে দীপক হুডা খেললে একটা বোলিং বিকল্পও থাকবে। কোহলিকে অবশ্যই আরও কয়েকটা ম্যাচ দেবে বোর্ড। কিন্তু মনে হয়, বিশ্বকাপের দল নির্বাচনের সময় ওর ফর্মও বিচার্য হবে,” বলে দিয়েছেন জাফর। আর ঘাউরি বলেছেন, “আমার মতে, চলতি সিরিজে নিজেকে প্রমাণ করতে হবে কোহলিকে। দেখুন এতে কোনও সন্দেহ নেই যে, কোহলি বিরাট ক্রিকেটার। কিন্তু টিমে থাকতে গেলে তোমাকে তো রান করতে হবে।”
আর শুক্রবার তো স্বয়ং কপিল দেব নিখাঞ্জই সরব হলেন কোহলি নিয়ে। পরিষ্কার বলে দিলেন, টেস্টে বিশ্বের দু’নম্বর বোলার হওয়া সত্বেও যদি রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে বাদ দেওয়া হয়, তা হলে কোহলিকে কেন টি-টোয়েন্টি টিম থেকে বাদ দেওয়া হবে না? ” এখন পরিস্থিতি যা, তাতে টি-টোয়েন্টি টিম থেকে বাধ্যল হয়ে কোহলিকে বাদ দেওয়া হতে পারে। বিশ্বের দু’নম্বর টেস্ট বোলার অশ্বিন যদি বাদ যেতে পারে, তা হলে এক নম্বর ব্যা টার কেন যাবে না?’’ এক চ্যা নেলে এ দিন বলে দিয়েছেন ভারতের প্রথম বিশ্বজয়ী অধিনায়ক। সঙ্গে যোগ করেছেন, ‘‘বিরাটকে যে ভাবে আমরা ব্যাযট করতে দেখতে অভ্যনস্ত, সেটা দেখতে পাচ্ছি না। বিরাট আজ বিরাট হয়েছে পারফর্ম করে। কিন্তু ও পারফর্ম করতে পারছে না যখন, তখন যে সব তরুণ ক্রিকেটাররা পারফর্ম করছে, তাদের কেন বসিয়ে রাখা হবে?’’
সে দিক থেকে দেখলে, ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে দু’টো টি-টোয়েন্টি অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ বিরাটের কাছে। যার প্রথম ম্যাচটা আজ, শনিবার। একে তো টিমের জুনিয়ররা ভাল খেলতে শুরু করে দিয়েছেন। তার উপর মাঠের বাইরের অনন্ত চাপ। কী করবেন কোহলি? পারবেন আজ রানে ফিরতে? সমস্ত সমালোচকদের মুখ বন্ধ করে দিতে? ক্রিকেট ক্ষত্রিয়রা কিন্তু মোক্ষম সময়েই অসি নামক ব্যাট তুলে নেয়।