শান্তিপুরে তৈরি হচ্ছে কচুরিপানার শাড়ি যা বিশ্ববাজারে সমাদৃত

নিলয় ভট্টাচার্য:­ নদিয়ার শান্তিপুরে তৈরি হচ্ছে কচুরিপানা থেকে শাড়ি। এমনিতেই নদিয়ার শান্তিপুরের তাঁতের শাড়ি জগৎ বিখ্যাত। এবার সেই তাঁতের শাড়ির পাশাপাশি স্থান পেতে চলেছে কচুরিপানার শাড়ি। যা এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে শান্তিপুরের তাঁতি।
পরিত্যক্ত কিংবা অব্যবহৃত বিষয়কে কাজে লাগিয়ে পুনরায় ব্যবহারের যোগ্য করে তোলা আন্তর্জাতিক চিন্তা ভাবনা থেকে এখন সরকারি বিভিন্ন পরিকল্পনায় রূপান্তরিত হয়েছে। সম্প্রতি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কখনও কাশফুলের ফাইবার কখনো কচুরিপানার ফাইবার থেকে বস্ত্র বয়ন ঘটানোর সম্ভাবনার কথা বলেছিলেন। কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে নানান ক্ষুদ্র ও কুটির কিংবা হস্তশিল্প প্রকল্প রয়েছে। মহিলা হোক বা পুরুষ স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে কিংবা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তৈরি করে তাদের মধ্য দিয়ে উৎপাদন এবং বিপণন পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হয়েছে বিভিন্ন জায়গায়।
আজ থেকে পাঁচ বছর আগে বনগাঁর এইরকম এক উদ্যোগী কৌশিক মণ্ডল নদিয়ার শান্তিপুর এলাকার বেশ কিছু তাঁতি সহ সারা বাংলার বিভিন্ন জেলার পরিবেশ রক্ষা এবং নতুন ধরনের চিন্তা ভাবনা সম্পন্ন মানুষজনকে নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন স্বচ্ছতা পুকারে নামে এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। যদিও সে সময় তারা নদী পরিষ্কার করা ছিল তাদের প্রধান এবং অন্যতম কাজ। আর সেই কাজ করতে গিয়েই তারা প্রথম লক্ষ্য করেন কোনও কাজে না লাগা কচুরিপানা যা মাছ চাষের ক্ষেত্রেই হোক বা নদীপথে যোগাযোগে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। সেগুলি পরিষ্কার করার জন্য কৃষকদের অযাচিত ব্যয় হত।
অন্যদিকে সেগুলো পুকুরের কিংবা জলাশয়ের পাড়ে ফেলে পরে নষ্ট হত। প্রাথমিকভাবে পরীক্ষামূলকভাবে কাজ শুরু হয় শান্তিপুরের বিভিন্ন ডোবা পুকুরের কুচিরপানা দিয়ে। পুকুর থেকে কচুরিপানা তুলে পরিষ্কারের পর গোড়া এবং পাতা ফেলে দিয়ে, প্রধান কাণ্ড কিংবা পাতার মোটা ডাটা  থেকে আঁশ ছাড়ানো এবং শুকানোর কাজ শুরু হয়। কচুরিপানার কাণ্ড শুকিয়ে সেখান থেকেই তন্তু বার করে তা সরাসরি সুতো হিসেবে ব্যবহার হয়। পশ্চিমবঙ্গে স্পিনিং মিলের সংখ্যা কম থাকার কারণে তারা বিভিন্ন রাজ্যের এ ধরনের মিলে সুতো তৈরি করে নিয়ে আসেন। যেগুলো কখনো তানায় কখনো পোড়েন হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই জল বা ডোবার কচুরিপানাকে কাজে লাগিয়ে প্রায় ৪০০ শাড়ি ইতিমধ্যেই তৈরি হয়েছে। যা সাড়া ফেলে দিয়েছে ইউরোপ, আমেরিকার মতো দেশগুলিতে। তাদের সংগঠন ইতিমধ্যেই পুরস্কৃত হয়েছে বিভিন্ন জায়গা থেকে। আগামী দিনে অত্যন্ত কম মূলধনের এই ব্যবসায় অনেকেই আগ্রহী হবে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন শান্তিপুরের বেশ কিছু তাঁতি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two × three =