দাড়িভিট স্কুলে গুলিকাণ্ডের ঘটনায় সিআইডি তদন্ত নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ বিচারপতি মান্থার

ইসলামপুরের দাড়িভিট স্কুলে গুলিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে ফের একবার সিআইডি তদন্ত নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা গেল বিচারপতি রাজাশেখর মান্থাকে। শুধু তাই নয়, সেদিন পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্নও তোলেন বিচারপতি। বুধবার এজলাসে বিচারপতি মান্থা বলেন, ‘ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ও সিআইডি তদন্তেরও রিপোর্ট পরস্পর বিরোধী। আর এই তথ্য দেখে হতভম্ব হাইকোর্ট।‘
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বর দাড়িভিট স্কুলে শিক্ষক নিয়োগকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। অভিযোগ, সেই সময় পুলিশের গুলিতে স্কুলের দুই প্রাক্তন ছাত্রের মৃত্যু হয়। যদিও রাজ্য পুলিশের তরফ থেকে এই ঘটনা অস্বীকার করা হয়। এরপরই এই ঘটনায় সিবিআই তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে মামলা হয়। বুধবার সেই মামলার শুনানি ছিল বিচারপতি মান্থার এজলাসে। সেখানেই তিনি রাজ্য গোয়েন্দা বিভাগ সিআইডিকে একের পর এক প্রশ্ন করেন।
আদালত সূত্রে খবর, এদিন বিচারপতি মান্থা সিআইডি-র কাছে জানতে চান,, যেখানে ময়নাতদন্তর রিপোর্টে স্পষ্ট, কোনও শক্তিশালী আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলি ছোড়া হয়েছে, সেখানে এতদিনেও সিআইডি কোন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলি ছোড়া হয়েছে সেটা শনাক্ত করতে পারল না তা নিয়েও। একইসঙ্গেএদিন আদালত এই মামলার শুনানিতে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে। বিচারপতির বক্তব্য, যেখানে ৫০০ জনের বেশি মানুষ জড়ো হয়ে পুলিশকে হামলা করছে, সেখানে পুলিশ প্রথমে কেন পুলিশ আকাশের দিকে গুলি ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করল না তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
এরপরই এই ঘটনায় সিআইডি তদন্ত নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি। বিচারপতির মান্থার প্রশ্ন, ঘটনার ৫ দিন পর কেন সিআইডি তদন্ত শুরু করল তা নিয়েও। এছাড়াও ঘটনার দিন ঘটনাস্থলে পুলিশ সুপার ও স্থানীয় বিধায়কের উপস্থিত ছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। সেই অভিযোগ নিয়ে কোনও তদন্ত কেন করল না সিআইডি তাও জানতে চান বিচারপতি মান্থা।
এরই রেশ ধরে বিচারপতি মান্থা এদিন এও বলেন, এত বড় একটা ভিড় সশস্ত্র অবস্থায় জমায়েত হল সেদিন। তার মানে সেখানে আগের থেকে একটা ষড়যন্ত্র ছিল। সেই ষড়যন্ত্র বা রহস্য উদঘাটনে সিআইডি কোনও পদক্ষেপ করেছে কিনা সেটাই সিআইডির থেকে জানতে চান তিনি।
এদিকে বুধবার আদালতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন তাদের তদন্তের রিপোর্ট জমা দেয়। সেই রিপোর্টে অভিযোগ করা হয়েছে, রাজ্য প্রশাসনের কোনও সহযোগিতা পায়নি তারা। এছাড়াও একাধিক বিস্ফোরক অভিযোগ করা হয়েছে রিপোর্টে। রিপোর্টে বলা হয়, তাপস বর্মণ ও রাজেশ সরকার খুন হয়েছিলেন। রিপোর্টে আরও বিস্তৃত ভাবে জানানো হয় যে, ওপরের দিক থেকে চালানো গুলিতে খুন হন তাপস। আর রাজেশ খুন হন খুব কাছ থেকে চালানো গুলিতে। আরও বলা হয়েছে, রাইফেল থেকে চালানো গুলিতে এমন হতে পারে না। পরিমল অধিকারী নামে পুলিশ কর্মী গুলিতে জখম বলে দাবি করা হলেও তিনি গুলিবিদ্ধ হননি বলেই রিপোর্টে দাবি করে মানবাধিকার কমিশন। এদিকে এই ঘটনায় রাজ্যের অভিযোগ, কমিশন এক্তিয়ারের বাইরে গিয়ে তদন্ত করেছে। রাজ্যকে কোনো কপিও দেওয়া হয়নি। এছাড়াও ঘটনাস্থলে এসপি ও বিধায়কের থাকার কোনও প্রমাণ মেলেনি।
শুনানি শেষে বিচারপতি মান্থা জানান, ‘অনেক হয়েছে। আর না। বুধবার কমিশন তাদের রিপোর্ট দেবে রাজ্যকে।’ এদিকে আদালত সূত্রে খবর, আগামী বৃহস্পতিবার এই মামলার পরবর্তী শুনানি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 × 2 =