আলিপুরদুয়ার মহিলা ঋণদান সমিতিতে যে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে মামলা হয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টে, সেই মামলায় ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এই মামলায় আগেই সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। তবে সেই নির্দেশ কার্যকর করা হয়নি। রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা দফতর সিআইডি-র তরফে মামলার নথি হস্তান্তর করা হয়নি সিবিআই-কে। উলটে সিআইডি সিবিআই তদন্তের নির্দেশ পুনর্বিবেচনার আর্জি জানানোয় শুক্রবার ক্ষোভে ফেটে পড়তে দেখা গেল বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে।
শুক্রবার এই মামলার রাজ্যকে ৫০ লাখ টাকার জরিমানা করেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। দু’সপ্তাহের মধ্যে কলকাতা হাইকোর্টের রেজিস্টার জেনারেলের কাছে এই টাকা জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এদিন রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি শুনে আদালত কক্ষে কার্যত ক্ষোভে ফেটে পড়েন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। এরপরই সিআইডির আইনজীবীর উদ্দেশে বিচারপতি বলেন, ‘গরিবেরে খোয়া যাওয়া টাকা নিয়ে আপনারা ছেলেখেলা করছেন? কারা এই টাকা নিয়েছে এতদিনেও সিআইডি তা জানে না? কিন্তু আমি জানি।’
এরপরই আদালত সিআইডিকে নির্দেশ দেয়, তিনদিনের মধ্যে তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে হস্তান্তর করার। এরপরই তদন্ত শুরু করবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। পাশাপাশি অপর কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি-কেও তদন্ত শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়। হাইকোর্ট জানিয়েছে, এই নির্দেশ যদি কার্যকর না করা হয়, তবে স্বরাষ্টসচিবকে তলব করা হবে। প্রসঙ্গত, আলিপুরদুয়ারে এক সমবায় গোষ্ঠীতে প্রায় ৫০ কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। এই নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা হয়। এই মামলায় জলপাইগুড়ির সার্কিট বেঞ্চে শুনানি হয়েছিল। ২৪ অগাস্ট আর্থিক দুর্নীতিতে একযোগে সিবিআই এবং ইডিকে তদন্তে নামার নির্দেশ দেন বিচারপতি। কিন্তু এতদিনেও সেই নথি কার্যকর হয়নি। এমনকী সিআইডির বিরুদ্ধে নথি হস্তান্তর না করার অভিযোগও উঠেছে। সেই মামলায় আদালতের এই রায় তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন আইনজীবী মহলের একাংশ।
অন্যদিকে অপর একটি মামলায় এদিন রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের ডেপুটি সেক্রেটারিকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানার নির্দেশ দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্য়ায়। এই প্রসঙ্গে আদালত এও জানিয়েছে, তিনমাসের মধ্যেই হাইকোর্টের দেওয়া নির্দেশ কার্যকর করেননি পর্ষদের ডেপুটি সেক্রেটারি। তাঁর ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘যিনি তিনমাসের মধ্যেও আদালতের নির্দেশ কার্যকর করতে পারলেন না তাঁকে সরিয়ে দেওয়া উচিত অথবা তাঁর বিরুদ্ধে অন্য কোনও পদক্ষেপ করা উচিত।’ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ডেপুটি সেক্রেটারিকে নিজের পকেট থেকে জরিমানার টাকা দিতে হবে।