কলকাতা: তিনি হয়ে উঠেছেন শিক্ষক পদে চাকরিপ্রার্থীদের ‘মসিহা’।শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতি মামলায় তাঁর একাধিক নির্দেশ, মন্তব্যে যেমন নাগরকিরদের একটা বড় অংশ তাঁকে সত, নির্ভীক বলে মনে করছেন, তেমনই রাজ্য শাসকদলের কারও কারও আবার তা পছন্দ হচ্ছে না।
তিনি হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। যিনি ইদানীং থাকেন নাগরিক মহলে চর্চায়, সেই বিচারপতির গলায় শোনা গেল মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসা।বললেন, ভালো কাজ করছেন মুখ্যমন্ত্রী। সরকারি আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে একথা বলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। বৃহস্পতিহবার মামলার শুনানির শেষে হালকা মেজাজে ছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। মজার ছলে হেসে হেসে ব্যাখ্যা দেন তাঁর করা ‘ধেঁড়ে ইঁদুর’ মন্তব্যের। বলেন, ‘সেদিন ধেঁড়ে ইঁদুর বলেছি সুব্রতদার সঙ্গে কথা প্রসঙ্গে। উনি বুঝেছিলেন কেন বলেছি। এই পরিবেশে সেটায় অন্য মাত্রা যোগ হয়েছে।’
প্রসঙ্গত কিছু দিন আগেই ভুয়ো সুপারিশ প্রাপ্ত ১৮৩ জনের তালিকা কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি। ওইসব ভুয়ো শিক্ষকের কতজন, কেন স্কুলে কর্মরত রয়েছে, তাঁদের নামও জেলা স্কুল পরির্দশকদের জানানোর জন্য কমিশনকে নির্দেশ দেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। গাজিয়াবাদ ও কমিশনের দপ্তর থেকে বাজেয়াপ্ত হওয়া হার্ড ডিস্কে যে ওএমআর শিট পাওয়া গিয়েছে, তা খতিয়ে দেখার কথা বলেন সিবিআইকে। তারপরই স্কুল সার্ভিস কমিশনের উদ্দেশে বিচারপতি বলেন, ‘ভয় পাবেন না। অনেক ধেড়ে ইঁদুর বেরবে।’
যার জবাবে তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেন বলেন, ‘বিচারব্যবস্থা নিয়ে কিছু বলব না। কিন্তু কেউ কেউ কোনও কোনও কোনও জায়গায় বসে নিজেকে ব্যতিক্রমী করে তোলার চেষ্টা করেন। এটা দেখে আমরা অবাক হই।’
গত মঙ্গলবার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় নতুন অভিযোগ দায়ের হওয়ায় চরম ক্ষুব্ধ হন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। ২০১৬ সালের প্যানেলকে চ্যালেঞ্জ করে ১৪০ জন অপ্রশিক্ষিত চাকরিপ্রার্থী আবেদনে জানান, তাদের থেকে কম নম্বর পেয়েও নিয়োগপত্র পেলেও প্যানেলে তাদের ঠাঁই হয়নি। এর পরই বিচারপতি বলেন, ‘ আমি যত দুর্নীতি সরানোর চেষ্টা করছি তত নতুন নতুন অভিযোগ আসছে। এভাবে চলতে থাকতে ২০১৬ সালের গোটা প্যানেলটাই বাতিল করে দেব। ঢাকি সমেত বিসর্জন দিয়ে দেব।’ তৃণমূলের তরফে বিচারপতির এই মন্তব্যের প্রতিবাদ করা হয়। নিজের মন্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমাও চান বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘আমি কোনও পেশা বা ব্যক্তিকে উদ্দেশ করে এই কথা বলিনি।
পাশাপাশি কুণাল ঘোষের কথার প্রসঙ্গ টেনে পর্ষদের আইনজীবীকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘কুণাল ঘোষের কথা আমি খুব এনজয় করি। রোজ কিছু না কিছু বলেন। তবে আমি কোনও অতিরিক্ত মন্তব্য করব না। কারণ কথার মানে অন্যরকম হয়ে যাচ্ছে। আমি তো বলেছি, ঢাকি বিসর্জন দিয়ে দেব। ওরা আমাকে বলতে বাধ্য করে।’ আর শেষে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসা করে তাঁর মন্তব্য, ‘চন্দ্রিমাদিকে বলে দেবেন, আর কোনও মন্তব্য করব না। আমি কেন খারাপ কথা বলব? মুখ্যমন্ত্রী ভালো কাজ করছেন।’
কুণাল ঘোষ বলেন, ‘বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে আঘাত করার কোনও উদ্দেশ্য আমার ছিল না। ওনার কিছু মন্তব্য কানে আসে। তার প্রতিবাদ করছি। যিনি মাথা জানেন, ঢাকি জানেন, তাঁকে সাক্ষী করা হোক। মুখ্যমন্ত্রী ও সরকার ভালো কাজ করছেন, এটা সবাই জানে।’