বিপ্লব দাশ, মহেশতলা
‘হাইকোর্ট রাজ্য পুলিশ প্রশাসনের হাত বেঁধে দিয়েছে। তাহলে শাজাহানকে কীভাবে গ্রেপ্তার করবে পুলিশ? যাঁরা সন্দেশখালি নিয়ে কথা বলছেন, যে কমিটিগুলো এখানে আসছে, আমি তাদের বলতে চাই, আদালতের কাছে জিজ্ঞাসা করুন যে রাজ্য পুলিশের হাত-পা কেন বেঁধে দেওয়া হয়েছে?’ রবিবার মহেশতলায় বজবজ ট্রাঙ্ক রোড সংস্কার ও জল প্রকল্পের সূচনা অনুষ্ঠানে সন্দেশখালি নিয়ে মুখ খুললেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সন্দেশখালি ও শেখ শাহজাহান নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘শেখ শাহজাহানকে তৃণমূল গার্ড করছে না। যদি কেউ গার্ড করে থাকে তা হল বিচার ব্যবস্থা, যাতে রোজ সন্দেশখালি শিরোনামে থাকে। হাত-পা বেঁধে দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। যত বড় নেতাই হোক, কেউ যদি মানুষের সঙ্গে অন্যায় করে থাকে, তাকে রেয়াত করা হবে না।’
তৃণমূল কংগ্রেস শেখ শাহজাহানকে আড়াল করছে বলে লাগাতার অভিযোগ করে চলেছে বিজেপি-সহ অন্যান্য বিরোধীরা। সেই প্রসঙ্গে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘যাঁরা এই মানবাধিকারের কর্তা এবং বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি হয়ে রোজ বলছেন একে গ্রেপ্তার করুন, তাঁকে গ্রেপ্তার করুন, দরবারটা আর অনুরোধটা হাইকোর্টে করুন। হাইকোর্ট যদি রাজ্য প্রশাসনের হাত বেঁধে দেয়, তাহলে গ্রেপ্তার করবে কোথা থেকে?’
অভিষেক বলেন, ‘যাঁদের মনে সন্দেশখালির ঘটনা বা শেখ শাহজাহান নিয়ে কোনও প্রশ্ন রয়েছে, ৫ জানুয়ারি যে ঘটনা ঘটেছিল, যেখানে ইডি আধিকারিকদের ওপরে হামলা চালানো হয়েছিল বলে তারা অভিযোগ করেছিল এবং তারা এফআইআর করেছিল, সেখানে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জয় সেনগুপ্তের বেঞ্চ একটি নির্দেশ দেয় যে একটি এসআইটি তৈরি হবে। দশ-বারো দিন পরেই ইডি প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে স্থগিতাদেশ চায়। আর ইডির আবেদন অনুযায়ী, কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ সেই স্থগিতাদেশ মঞ্জুর করে।’ অভিষেকের যুক্তি, ‘একটা এফআইআর-এর ভিত্তিতে প্রশাসনকে সময় দিতে হবে। সারদার মামলায় এখনও ট্রায়াল শুরু হয়নি, তখন তো বলছেন না যে স্থগিতাদেশ হবে। পুলিশকে ১৫ দিন সময় দেবেন না, আর ইডিকে ১০ বছর, ১২ বছর, ১৫ বছর সময় দিতে প্রস্তুত।’ একইসঙ্গে পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের উদাহরণ টেনে তিনি সাফ জানিয়ে দেন, ‘যত বড়ই নেতা হোক, মানুষের সঙ্গে অন্যায় করলে, রেয়াত করা হবে না।’
আগামী ৩ মার্চ সন্দেশখালিতে সভার ডাক দিয়েছিল স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। ওই সভায় উত্তর ২৪ পরগনার জেলা নেতৃত্ব হাজির থাকার কথা ছিল। সেই সভা আদৌ করা দরকার নেই বলেই জানালেন অভিষেক। তিনি বলেন, ‘আমার ধারণা সেখানে এই পরিস্থিতিতে এখনই সভা করার প্রয়োজন নেই। স্বাভাবিকতা ফিরে এলে, মানুষ ঠিক থাকলে সব হবে। মানুষের প্রাণ বাঁচলে, ধর্মে ধর্মে সংঘাত শেষ হলে, এলাকা পরিস্থিতি শান্ত থাকলে সেখানে আগামী দিন সভা, সমিতি সব হবে। ১০ মার্চ ব্রিগেড সমাবেশ রয়েছে। তার প্রস্তুতি থাকবে। ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য কোনও সভা করা যাচ্ছে না। ওখানে সভা হলে সেটা জানিয়ে দেওয়া হবে। ব্রিগেড মিটলে আমি সেখানে যাব।’
মার্চ মাসে বাংলায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তিনটি সভা করার কথা। সেই প্রসঙ্গে অভিষেক বলেন, ‘বিজেপি এই ইস্যুটিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলা সফর পর্যন্ত জিইয়ে রাখার চেষ্টা করছে। এক একদিন বেছে নিয়ে ওখানে বিজেপি নেতৃত্ব থেকে শুরু করে অন্যান্য সংস্থা যাচ্ছেন। কেন তাঁরা একদিনেই হাইকোর্টের অনুমতি নিয়ে ওখানে যাচ্ছেন না। তাঁর কথায় সন্দেশখালির বিষয়টি ‘লাইম লাইট’ রাখার জন্যেই এই অভিসন্ধি করা হচ্ছে।’
রবিবার বিকেলে মহেশতলার বাটানগর মোড়ে বজবজ ট্রাঙ্ক রোড সংস্কার ও ৪০ মিলিয়ন গ্যালন জলপ্রকল্পের উদ্বোধন করলেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ তথা তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মঞ্চ থেকে তিনি মহেশতলাবাসীকে যে কোনও সমস্যায় সরাসরি তাঁকে চিঠি পাঠাতে বলেন। সেই সঙ্গে কাজে সেরা ডায়মন্ডহারবারকে ভোটের পরিসংখ্যানেও এক নম্বর করার দায়িত্ব আপনাদের হাতেই- বার্তা দেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।
১০ মার্চ ‘ব্রিগেড চলো’ তৃণমূলের
নিজস্ব প্রতিবেদন: লোকসভা ভোটের আগে ব্রিগেড সমাবেশের ডাক দিল তৃণমূল কংগ্রেস। আগামী ১০ মার্চ হবে বাংলার শাসকদলের ব্রিগেড সমাবেশ। তৃণমূলের তরফে পোস্টার প্রকাশ করে এই সমাবেশের কথা জানানো হয়েছে। এ বারের ব্রিগেড সমাবেশের নাম দেওয়া হয়েছে জনগর্জন সভা। সেই সভার মূল বক্তা মমতা এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ১০০ দিনের কাজ, আবাস যোজনার টাকা-সহ একাধিক কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা অন্যায়ভাবে বন্ধ করে দেওয়ার প্রতিবাদে আওয়াজ তোলা হবে এ বারের ব্রিগেজ সমাবেশ থেকে। তৃণমূল সূত্রে খবর, মূলত কেন্দ্রীয় প্রকল্পের বঞ্চনার সুরই তোলা হবে ব্রিগেডের সমাবেশ থেকে।