কম্বল কাণ্ডের প্রায় ৫ মাস পর আসানসোলে ফিরেই শাসকদলকে আক্রমণ জিতেন্দ্র তেওয়ারির

নিজস্ব প্রতিবেদন, আসানসোল: বৃহস্পতিবার সকালে আসানসোলে পা দিয়েই তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসকে আক্রমণ করেন জিতেন্দ্র তেওয়ারি। ঘটনাচক্রে এদিনই সকাল থেকে আসানসোল পুরনিগমের তরফে জিটি রোডের বাজারের ফুটপাথ দখলমুক্ত করতে অভিযান শুরু করা হয়েছে। যা নিয়ে কটাক্ষ করেছেন আসানসোল পুরনিগমের প্রাক্তন মেয়র জিতেন্দ্র তেওয়ারি। তাঁর দাবি, এর আগেও এমন অভিযান চালানো হয়েছিল। কী হয়েছে তার ফল, সবার জানা। এবারেও তা হবে। আসল কথা হল, যাঁরা তৃণমূল কংগ্রেসের মিটিংয়ে যান না, মিছিলে হাঁটেন না, তাঁদের ওপরেই এই অভিযান হয়। তিনি আরও দাবি করেন, তৃণমূল কংগ্রেসই তো রাজ্যের শাসকদল হিসাবে জিটি রোডের রাহালেন মোড়ে সরকারি জমিতে জেলা পার্টি অফিস তৈরি করেছে। সবাই জানে ওই জমি পিডব্লিউডির। ক্ষমতা থাকল শাসকদলের জেলা নেতারা জমির কাগজ দেখান।
জিতেন্দ্র তেওয়ারির এই মন্তব্য নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর দাবি, দলের তরফে এই নিয়ে যা বলার তা বলবেন রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসন ওরফে দাসু। পরে রাজ্য সম্পাদক জানান, জিতেন্দ্র তেওয়ারির আসানসোলে না আসার বিষয়টি পুলিশ প্রশাসন ও আদালতের। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। আর ফুটপাথ দখলমুক্ত করার বিষয়টি আসানসোল পুরনিগমের নীতির ব্যাপার। সময় ও পরিস্থিতি বুঝে তা করতে হয়। জিতেন্দ্র তেওয়ারি যখন মেয়র ও পুর প্রশাসক ছিলেন, তখন তিনি কী করেছিলেন, তা তিনি কি ভুলে গিয়েছেন। এই ব্যাপারে যা বলার তো মেয়র বিধান উপাধ্যায় আগেই বলেছেন। আর জেলা পার্টি অফিস নিয়ে তাঁর কথার জবাব ঠিক সময়ে দল দিয়ে দেবে। ভি শিবদাসন ওরফে দাসু জানান, জিতেন্দ্র তেওয়ারি যা বলেছেন, তা সবই রাজনৈতিক। তাঁর মোকাবিলা ওই পথেই করা হবে।
৫ মাসেরও বেশি সময় পরে নিজের শহরে পা রাখার পরে এই বিজেপি নেতা বেশ আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, ‘নিজের জন্মস্থান, কর্মস্থল ও বেড়ে ওঠার জায়গায় আসতে কার না ভালো লাগে। একটা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক কারণে আসানসোলে ঢুকতে বাধা তৈরি করা হয়েছিল। কলকাতা হাইকোর্ট কিছু শর্ত দিয়ে সেই বাধা তুলে নিয়েছে। শর্ত মতো যেখানে আমি থাকব অর্থাৎ আসানসোল দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসারের সঙ্গে ১৫ দিন অন্তর দেখা করতে হবে। আমি তা অবশ্যই করব।’ এদিন আসানসোল স্টেশন থেকে জিতেন্দ্র তেওয়ারি চলে যান আসানসোলের ১৯ নং জাতীয় সড়ক লাগোয়া ঘাঘরবুড়ি মন্দিরে পুজো দিতে। পুজো শেষে তিনি আসানসোল শহরের জিটি রোডের গোধূলি মোড় সংলগ্ন নিজের আবাসনে আসেন।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ১৪ ডিসেম্বর আসানসোলের রেলপারের রামকৃষ্ণ ডাঙালে শিবচর্চার সঙ্গে কম্বল বিতরণের আয়োজন করা হয়েছিল। এই অনুষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন জিতেন্দ্র তেওয়ারি। এই অনুষ্ঠানে এসেছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি চলে যাওয়ার পরেই কম্বল নেওয়া নিয়ে হুড়োহুড়ি শুরু হয়। তাতে পদপিষ্ট হয়ে তিনজনের মৃত্যু হয়। মৃত এক মহিলার ছেলের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে আসানসোল পুরনিগমের বিজেপি কাউন্সিলরদের দলনেত্রী চৈতালি তেওয়ারি, জিতেন্দ্র তেওয়ারি সহ একাধিক ব্যক্তির নামে মামলা হয়।
গত ১৮ মার্চ দিল্লির অদূরে যমুনা এক্সপ্রেসওয়ের নয়ডা থেকে আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ জিতেন্দ্র তেওয়ারিকে গ্রেপ্তার করে। বেশ কিছু দিন জেলে থাকার পরে গত ১০ এপ্রিল কলকাতা হাইকোর্ট থেকে তিনি শর্ত সাপেক্ষে জামিন পেয়েছিলেন। জিতেন্দ্র তেওয়ারি পুনরায় আসানসোলে আসায় স্বভাবতই খুশি বিজেপি নেতা ও সমর্থকরা।
গত ১২ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্ট আগের শর্ত শিথিল করে তাঁকে আসানসোলে ঢোকার অনুমতি দিয়েছিল। তবে তাঁকে হাইকোর্টের তরফে এই ছাড় দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু শর্ত আরোপ করা হয়েছে। যা তাঁকে মেনে চলতে হবে। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে দশটার পরে ট্রেনে কলকাতা থেকে আসানসোল স্টেশনে আসেন জিতেন্দ্র তেওয়ারি। তাঁকে সেখানে স্বাগত জানাতে উপস্থিত ছিলেন আসানসোল পুরনিগমের কাউন্সিলর গৌরব গুপ্ত সহ প্রচুর বিজেপির নেতা ও কর্মীরা। সস্ত্রীক জিতেন্দ্র তেওয়ারি ট্রেন থেকে নামতেই তাঁকে অভ্যর্থনা জানানো হয়। তাঁকে ঘিরে বিজেপি নেতা ও কর্মীদের উচ্ছ্বাস ছিলো চোখে পড়ার মতো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

19 + sixteen =