লুক আউট নোটিস জারির পরও গরু পাচারের কিং-পিন হিসেবে পরিচিত ফেরার জেএইচএম ব্রাদার্সের তিন ভাই

ইডি-র চার্জশিটে গরু পাচার এনামুল, লতিফ,সায়গলের পাশাপাশি জেএইচএম ব্রাদার্সের তিন ভাইয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা উল্লেখ থাকার পরও কেন তাঁদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হল না বা কীভাবে লুকআউট নোটিস জারি থাকা সত্ত্বেও ‘পালাতে’সক্ষম হলেন তিন ভাই তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার সিবিআই-এর দিকেই।
ইডি-র চার্জশিটে গরু পাচারে কিংপিন হিসাবে জেএইচএম ব্রাদার্সকে উল্লেখ করা হলেও আশ্চর্যজনকভাবে সিবিআই এতদিন পর্যন্ত যে চার্জশিট দিয়েছে, তাতে এই তিন জনের নাম উল্লেখ নেই। এদিকে ইডির দাবি, গরুর নিলামের দায়িত্বে ছিলেন এনামুল হক এবং তাঁর সহযোগী জাহাঙ্গির আলম, হুমায়ুন কবির এবং মেহেদি হাসান। অথচ গরু পাচারের আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত মামলার তদন্ত করছে ইডি। এদিকে এই জেএইচএম ব্রাদার্সের কোম্পানি নজরে পড়ে ‘ডিরেক্টর অফ রেভিনিউ ইন্টেলিজেন্স’ ওরফে ডিআরআই-এর। তদন্তে নেমে ডিআরআই-এর কাছ থেকে পাওয়া তথ্য পৌঁছয় ইডি-র কাছে। সূত্রের খবর, তখনই মূলত এনামুলের সঙ্গে এই জেএইচএম তিন ভাইয়ের ভূমিকা প্রকাশ্যে আসে। এরপরই এই তিনজন যাতে দেশ ছাড়তে না পারে তার জন্য লুক আউট নোটিশ জারি করা হয় ইডি-র তরফ থেকে। এদিকে লুক আউট নোটিস থাকা অবস্থাতেই দেশ ছেড়ে দুবাইতে পালায় তিন ভাই।
ইডি সূত্রে খবর, গরু পাচারের টাকার বড় অংশ এনামূলের এই ভাগ্নেদের কাছে রয়েছে। কারণ, এনামুলের থেকে বেশি টাকা তাঁরা সরিয়েছে। আর এই টাকার ভাগাভাগি নিয়ে বর্তমানে এনামুল এবং ভাগ্নেদের সম্পর্ক সাপে-নেউলের থেকে কম কিছু নয়।
এদিকে ইডি চার্জশিটে যা যা দাবি করা হয়েছে, তারই পাশাপাশি সিবিআই তদন্ত নিয়েও একাধিক প্রশ্ন এবার সামনে আসছে। কারণ, তদন্তে এই জেএইচএম ভাই সম্পর্কে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গিয়েছে। হাট থেকে হোটেল ‘সোনার বাংলা’ ঘুরে গরু রাখাল বালকের হাতে পৌঁছত এই তিন ভাই মারফতই। ইডি-র দাবি, সোনার বাংলা থেকেই পুরো কাজ নিয়ন্ত্রিত হত। এর মালিকানা ছিল এনামুলের সহযোগী ওই তিন ভাইয়ের। এত কিছু তথ্য উঠে আসার পরও সিবিআই কেন নীরব এই তিন ভাই নিয়ে, তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।
এনামুলের পিছনে ছিল অনুব্রত মণ্ডলের মত রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের ভূমিকা এটা স্পষ্ট। আর এখানেই ইডি-র প্রশ্ন, তাহলে তাঁর ভাগ্নেদের পিছনে কে ছিলেন তা নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা অব্যাহত। একইসঙ্গে প্রশ্ন, কী ভাবে সিবিআই জাল থেকে রেহাই পাচ্ছেন এই এনামুলের ভাগ্নেরা তা নিয়েও। সবথেকে বড় প্রশ্ন যেটা সামনে আসছে তা হল, কোন প্রভাবশালীর মদতে লুকআউট নোটিস থাকা সত্ত্বেও দেশ ছাড়তে পারল এই তিন ভাই।
এদিকে ইডি-র তরফ থেকে জানা যাচ্ছে, জেএইচএম ভাইদের বার বার নোটিস পাঠানো হয়। তবে একবারও সেই সমনে সাড়া দেননি তাঁরা। তা নিয়ে পাতিয়ালা হাউস কোর্টে মামলাও করে ইডি। অন্যদিকে এ রাজ্য গোয়েন্দা দপ্তর বা সিআইডিও এই জেএইচএম ভাইদের ক্ষেত্রে সমান্তরাল এক তদন্ত চালাচ্ছে। এদিকে সিআইডি সূত্রেও খবর, তদন্তে নেমে জেএইচএম ভাইদের বার বার তলব করার পরও তাঁরা হাজির হননি। এরপরই জেএইচএম গ্রুপের রাইস মিল থেকে শুরু করে জমি এবং একটি ট্রাস্টের কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়। ফ্রিজ করা হয়, একের পর এক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট। ইডি’র কাছেও তদন্ত শুরুর পর একই ভাবে জেএইচএম ভাইদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার সুযোগ থাকলেও বাস্তবে তা করা হয়নি। বরং জেএইচএম ব্রাদার্স নিয়ে সিআইডি তদন্তের আদালতে বিরোধিতা করতে দেখা যায় সিবিআইকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

15 − 5 =