কলকাতার বুকে একটুকরো জাপান!

সুস্মিতা মণ্ডল

শান্ত সমাহিত বুদ্ধ, সবুজের মাঝে বাঁধানো পথ, রঙিন ফুলের সম্ভার, ঝরনার অবিরাম শব্দ আর গুরুগম্ভীর ধ্বনি।তারই মাঝে বৌদ্ধ মন্দির। শান্ত, সুন্দর এক জায়গা যেখানে দু দণ্ড বসলে, মনের সমস্ত খারাপ লাগা দূর হয়ে যায়। বৌদ্ধ মূর্তির সামনে চোখ বুঁজে ধ্যানে গুরুগম্ভীর ঘণ্টাধ্বনিতে ধীরে ধরে শান্ত হয় মন।

জাপান মানেই সুন্দর প্রকৃতি। সেই প্রকৃতির সঙ্গে মিশে থাকা ঈশ্বর।জাপান মানেই, মনে ভেসে ওঠে শান্ত, সুন্দর দেশ আর সুন্দর বাগান। এই ধারণাগুলো একত্রিত করেই ইকো পার্কে তৈরি হয়েছে জাপানিজ ফরেস্ট। ইকো পার্ক কলকাতার জনপ্রিয় গন্তব্যের মধ্যে হলেও, অনেকেই জানেন না তার মাঝে রয়েছে একটুকরো জাপানের ছোঁয়া।

ইকোপার্কের ১ নম্বর গেট দিয়ে ঢুকলেই রয়েছে জাপানিজ ফরেস্ট। বিশাল প্রবেশদ্বারের বাইরে দ্বাররক্ষক হিসাবে রয়েছে চাইনিজ লায়ন-ডগের মূর্তি। বিশ্বাস, এই মূর্তি খারাপ থেকে সমস্তকিছুকে রক্ষা করে।প্রবেশদ্বারের মুখেই শান্ত সমাহিত বৌদ্ধ মূর্তি। চারদিকে অদ্ভূত স্তব্ধতা। তারই সঙ্গে বৌদ্ধ শিল্প ও সংস্কৃতির মিশেল। চলার পথে চোখে পড়বে ছোট ছোট বুদ্ধ মূর্তি।সন্ধে হলে আশপাশের জ্বলে ওঠা আলোয় তা হয়ে ওঠে আরও মায়াময়।এই বাগানজুড়েই রয়েছে প্রকৃতি। জলাশয়। কাঠের সেতু। জলাশয়ে রয়েছে ঝরনা। তারই মধ্যে রয়েছে বৌদ্ধ মনাস্ট্রি। ঘন্টাধ্বনি, জলাশয়ে ঝরনা, ফুলের সুবাস, প্রকৃতির সান্নিধ্য সমস্ত কিছু মিলিয়ে সেখানে তৈরি হয় এক অদ্ভূত মায়াময় পরিবেশ। খালি পায়ে সেখানে শান্তভাবে কিছুক্ষণ হেঁটে পজিটিভ এনার্জি সঞ্চয় করে নিতে পারেন আপনিও।

বৌদ্ধ মনাস্ট্রির ভেতরে রয়েছে সার দিয়ে প্রার্থনা চক্র। মূল মন্দিরে সাদা রঙের বৌদ্ধ। আর দুপাশে দুটি বিশাল ধাতব চক্র। বিদ্যুত সংযোগের মাধ্যমে ওই চক্র অনবরত ঘণ্টার মতো বেজে চলেছে। তা থেকেই উত্পন্ন হচ্ছে এক শব্দ। যা মনের ভেতর প্রভাব ফেলতে বাধ্য। সিজন অনুযায়ী বাগান সেজে ওঠে নানারকম ফুলে। প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যায় সৌরভ।

‘জাপানিজ ফরেস্ট’ আসলে বাগানের মধ্যে এক মনাস্ট্রি।সেখানে রয়েছে বসার জায়গাও। কেউ চাইলে শান্ত পরিবেশে ধ্যানও করতে পারেন। আরও আছে, বিভিন্ন ধরনের বাঁশ দিয়ে তৈরি বাগান। আছে লাল-সহ উজ্জ্বল একাধিক রঙের মিশেলে নানা ধরনের স্থাপত্য।এমন পরিবেশে জাপানি খাবার খেতে চাইলে তারও বন্দোবস্ত করে রাখা হয়েছে। জাপানিদ ফরেস্টেই রয়েছে জাপানি খাবারের রেস্তোরাঁ।

জানা যায়, হিডকো এই জাপানিস ফরেস্ট তৈরি করেছে। জানা যায়, ইকো পার্ক তৈরির সময় সেখান থেকে একটি বুদ্ধ মূর্তি উদ্ধার হয়েছিল। তারপরেই বৌদ্ধ মনাস্ট্রি ও জাপানিজ ফরেস্ট তৈরির ভাবনা মাথায় আসে।

কীভাবে যাবেন-নিউটাউনের ইকোপার্ক এমনিতেই খুব সুন্দর জায়গা। ইকোপার্কের ১ নম্বর গেট দিয়ে টিকিট কেটে ঢুকে যান। সামনেই পড়বে বিশাল জলাশয়। সেই জলাশয়ের পাশেই রয়েছে জাপানিজ ফরেস্ট। এখানে ঢুকতে আলাদা টিকিট লাগে না। ইকোপার্কে ঢোকার টিকিট কাটলেই, ঘুরে নেওয়া যায় বাকিটা।

ইকোপার্ক খোলার সময়-মঙ্গলবার থেকে শনিবার দুপুর ১২টা থেকে সন্ধে সাড়ে ৭টা পর্যন্ত খোলা থাকে। রবিবার ও অন্যান্য ছুটির দিনে পার্ক খুলে যায় সকাল ১১টাতেই। সোমবার বন্ধ থাকে পার্ক।

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × three =