রামপুরহাট: জমল না তারাপীঠের (Tarapith) কৌশিকী অমাবস্যা। মাথায় হাত লজ মালিক থেকে সমস্ত স্তরের ব্যবসায়ীদের। হোটেল ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে এর জন্য সংবাদমাধ্যমকে দায়ী করা হলেও পূণ্যার্থীরা দুষছেন পুলিশ এবং সেবাইতদের একাংশকে। প্রতিবছর পুলিশ মন্দিরের ছয় কিলোমিটার আগেই গাড়ির গতি রুখে দেওয়ায় মুখ ফিরিয়েছেন পূণ্যার্থীরা। কথিত আছে, মহিষাসুর বধের পর শুম্ভ-নিশুম্ভের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিলেন স্বর্গের দেবতারা। শেষে দেবতারা মহামায়ার তপস্যা শুরু করেন। সেই তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে দেবী নিজ কোষ থেকে উজ্জ্বল জ্যোতি বিচ্ছুরিত করে এক পরমাসুন্দরী দেবী মূর্তিতে আবির্ভূত হন। নিজ কোষ শরীর থেকে বের হওয়ার জন্য তিনি হলেন কৌশিকী। কৌশিকীদেবী আবার তারা ও কালীতে রূপান্তরিত হন। আবার শোনা যায় কৌশিকী অমাবস্যার দিন তারাপীঠ মহাশ্মশানের শ্বেতশিমূল বৃক্ষের তলায় সাধক বামাক্ষ্যাপা সাধনা করে সিদ্ধিলাভ করেছিলেন। ফলে ওই দিন মা তারার পুজো দিলে এবং দ্বারকা নদীতে স্নান করলে পূণ্যলাভ হয় এবং কুম্ভস্নান করা হয়। করোনা অতিমারির কারণে গত দু’বছর বন্ধ ছিল তারাপীঠ মন্দিরের দরজা। ফলে পূণ্যার্থীরা চাইলেও তারাপীঠে আসতে পারেননি। করোনা প্রকোপ কমতেই দু’বছর পর এবার কৌশিকী অমাবস্যায় মন্দিরের দরজা সারা রাত খুলে দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশা করা হয়েছিল এবার পাঁচ লক্ষাধিক পূণ্যার্থীর জমায়েত হবে। সেই হিসাব ধরে প্রশাসন প্রস্তুতি নিয়েছিল। তার প্রথম ধাপ হিসাবে অমাবস্যার সকাল থেকেই মন্দিরের ছয় কিলোমিটার আগে মনসুবা মোড়ে চার চাকা গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেয়। ফলে মন্দিরে পৌঁছতে পূণ্যার্থীদের গাড়ি ছেড়ে অটো, টোটো কিংবা বিপজ্জনক যন্ত্রচালিত ভ্যানের উপর ভরসা করে পৌঁছতে হয়েছে। এই তিক্ত অভিজ্ঞতার ফলে তারাপীঠ বিমুখ হয়েছেন পূণ্যার্থীরা। বেশ কিছু ভক্তরা বলেন, আমরা দামি গাড়ি নিয়ে তারাপীঠে এসেছিলাম। কিন্তু পুলিশ গা জোয়ারি করে মন্দিরের ছয় কিলোমিটার আগে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর আমাদের গাড়ি রুখে দেয়। ফলে বাধ্য হয়ে গাড়ি অসুরক্ষিত অবস্থায় ফেলে রেখে মন্দিরে যেতে হয়েছে। এমনকী, লাইসেন্স নেই এমন বিপজ্জনক যন্ত্রচালিত ভ্যান যাতায়াতের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আগামী বছর থেকে আমরা এই সময় তারাপীঠে আসব না। একই অভিজ্ঞতা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন কলকাতার বাসিন্দা বিশ্বজিৎ দাস, তারক চট্টোপাধ্যায়রা। তারা বলেন, এমনিতেই মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে লজ বুকিং করা হয়েছিল। কিন্তু লজের দরজা পর্যন্ত গাড়ি নিয়ে যেতে পারছি না। ফলে মন্দিরে গিয়ে গাড়ি নিয়ে চিন্তা থেকে যাচ্ছে। এই দিনে আর তারাপীঠে আসব না।
বিহারের বাসিন্দা অজিত সিং, নিতু সিংরা বলেন, দিন পনেরো আগে অনলাইনে ১৫ হাজার টাকা দিয়ে তিনদিনের প্যাকেজের এসি রুম বুকিং করে ছিলাম। একদিকে মাত্রাতিরিক্ত লজ ভাড়া, তারপর পুলিশের অতিসক্রিয়তায় আমরা বিরক্ত। তারপর মন্দিরে গিয়ে পুজো দেওয়ার জন্য একশ্রেণির সেবাইত যেভাবে মোটা অঙ্কের টাকা হাঁকছে তাতে পূণ্যার্থীরা বিরক্ত।
যদিও লজ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সুনীল গিরি পূণ্যার্থীদের তারাপীঠ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় সংবাদমাধ্যমকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, লজ ভাড়া নিয়ে সংবাদমাধ্যম ধারাবাহিক অপপ্রচার করার জন্যই মানুষ আসেননি। এই সময় লজের ভাড়া অতিরিক্ত নেওয়া হয় না। মানুষের কাছে ভুল বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। তাই এবার কৌশিকী অমাবস্যায় মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।