কলকাতা: প্রথম বর্ষের ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে প্রশ্নের মুখে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। এ নিয়ে ডামাডোলের মধ্যেই অন্তর্বর্তী উপাচার্য পেল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। গণিত বিভাগের অধ্যাপক বুদ্ধদেব সাউ এই দায়িত্ব পেয়েছেন। দায়িত্ব নিয়েই তিনি মানলেন ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় গাফিলতি ছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। তিনি বলেন, ‘অ্যান্টি র্যাগিং সেলকে আরও সক্রিয় হতে হবে। সিসিটিভি-র প্রয়োজনিয়তা আছে কিনা খতিয়ে দেখা হবে।’
গত ৯ আগস্ট রাতে হস্টেলের বারান্দা থেকে পড়ে গুরুতর জখম হয় যাদবপুরের পড়ুয়া। ১০ অগাস্ট ভোরে মৃত্যু হয় নদিয়ার বাসিন্দা ওই ছাত্রের। ঘটনার ৯ দিন পর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তী উপাচার্য নিয়োগ করেছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস তথা আচার্য। দায়িত্ব পাওয়ার পরের দিন, রবিবার ছুটি থাকা সত্ত্বেও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন নতুন অন্তর্বর্তী উপাচার্য বুদ্ধদেব সাউ। বলেন, “এরকম সঙ্কট না হলেই ভাল হত। এটা হৃদয় বিদারক ঘটনা। অত্যন্ত দুঃখের। মেনে নিতে হবে গাফিলতি কোথাও ছিল। একজনের দিকে আঙুল তুললে হবে না। এর দায় গোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের।”
যাদবপুরের পড়ুয়ার মৃত্যু ঘিরে এই মুহূর্তে উত্তাল গোটা রাজ্য। পড়ুয়ামৃত্যুর ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শনিবার দফায় দফায় জেরার পর গ্রেপ্তার করা হয়েছে আরও এক প্রাক্তনীকে। ধৃতের নাম জয়দীপ ঘোষ। শনিবার রাতে রাজভবনের তরফে বুদ্ধদেববাবুকে নিয়োগের কথা জানানো হয়।
বিষয়টি জানাজানি হতেই রাজভবনের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। অধ্যাপক, শিক্ষাকর্মী এবং পড়ুয়াদের একাংশের অভিযোগ, ওয়েবকুপার ট্রেজারার ছিলেন বুদ্ধদেববাবু। বিজেপি-র অধ্যাপক সংগঠনের নেতা তিনি। রাজভবনের তরফে তাঁকে নিয়োগ করা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই।
নতুন উপাচার্যের ‘শিক্ষাগত যোগ্যতা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়েরই অধ্যাপক এবং পড়ুয়াদের একাংশ। বুদ্ধদেবের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়েও কাটাছেঁড়া শুরু হয়েছে বিভিন্ন মহলে।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৫ সালে স্নাতকোত্তর পাশ করেন বুদ্ধদেব। ২০০০ সালে তিনি এমটেক পাশ করেন ‘ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউট’ থেকে। ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকেই পিএইচডি করেছেন বুদ্ধদেব। তা শেষ হয় ২০১২ সালে।২০০২ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘লেকচারার’ ছিলেন তিনি। ২০০৯ সাল পর্যন্ত তিনি সিনিয়র লেকচারার ছিলেন। পরের তিন বছর রিডার হিসাবে ছিলেন যাদবপুরে। এর পর ২০১২ সালে অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর হন বুদ্ধদেব।যাদবপুরের অধ্যাপক এবং পড়ুয়াদের একাংশের দাবি, গত ১১ বছরেও অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর থেকে প্রফেসর পদে উন্নীত হতে পারেননি বুদ্ধদেব। ‘অ্যাকাডেমিক কেরিয়ার’ দুর্বল হওয়ার কারণেই প্রফেসর সিলেকশন কমিটি তাঁর নামে অনুমোদন দেয়নি বলেই দাবি করেছেন অনেকে।
যদিও এ নিয়ে একটি বাংলা জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যমে মুখ খোলেন বুদ্ধদেব সাউ। তাঁর কথায়, ‘প্রত্যেকেই তো কোনও না দল করেন, কেউ তৃণমূল, কেউ সিপিএম, কেউ এসইউসিআই। হঠাৎ এগুলো কেন মাথায় ঘুরছে জানি না।’